শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : পরীক্ষামূলক সী-ট্রাক চালুর মধ্য দিয়ে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে যাতায়াত ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলো শুক্রবার। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্যোগে এ রুটে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো ২৫০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার একটি সী-ট্রাক। এই সী-ট্রাকটি স্থায়ীভাবে চালুর মধ্য দিয়ে দ্বীপের ৪ লাখ বাসিন্দার যাতায়াত সহজ হওয়ার পাশাপাশি পর্যটকদের নৌপথের ভোগান্তি অনেকটাই লাঘবের পাশাপাশি দ্বীপের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিআইডব্লিউটিএ এর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সী-ট্রাকটি এই নৌরুটে আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত পরীক্ষামূলক চলাচল করবে। এতে চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা দেখা না দিলে পরদিন (২৫ এপ্রিল) থেকে বাণিজ্যিকভাবে চালু করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএ এর পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, সি-ট্রাকে যাতায়াতে জনপ্রতি ভাড়া কত হবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। পরীক্ষামূলক যাত্রায় সফল হওয়ায় খুব শিগগিরই এ নৌপথে সি-ট্রাকটি স্থায়ী করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ফেরি যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
গবেষক ও লেখক অধ্যাপক মকবুল আহমেদ জানিয়েছেন, দেশের একমাত্র পাহাড় সমৃদ্ধ আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দ্বীপ মহেশখালী। লবন উৎপাদন, মিস্টি পানের সুখ্যাতি আর মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত ঐতিহাসিক আদিনাথ মন্দিরসহ নানা কারনে বিখ্যাত, অপার সুন্দর দ্বীপটিতে প্রতিবছর যাতায়াত করেন হাজারো পর্যটক। যাত্রাপথে উপভোগ করেন বাঁকখালী নদী, বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও প্যারাবন সমৃদ্ধ দুই তীরের সৌন্দর্য। কক্সবাজার শহর থেকে এ দ্বীপে যেতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌপথ। যাত্রাপথে পদে পদে বিপদ সংকূলতা আর ভোগান্তির শিকার হতে হতো পর্যটকসহ দ্বীপের ৪ লক্ষাধিক বাসিন্দার। প্রসূতি কিংবা গুরুতর অসুস্থ রোগিদের যাতায়াতে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। এছাড়াও স্পীডবোটের জন্য দীর্ঘ লাইন, চালক ও ইজারাদারের কর্মিদের দুর্ব্যবহার, বিনা রশিদে জেটিঘাটে ইচ্ছে মাফিক অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর বর্ষা মৌসুমে বাঁকখালী নদীর মোহনায় আশংকা থাকে দুর্ঘটনার।
তিনি বলেন, নৌপথের এসব ভোগান্তি নিরসনে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ। দ্বীপবাসী ও পর্যটকদের সেবায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলো আধুনিক সি-ট্রাকটি। এটি দ্বীপবাসির জন্য কল্যাণকর।
এদিকে, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ এর জেটি ঘাট থেকে বেলা ১২ টা ২০ মিনিটে ছাড়া সী-ট্রাকটি দুপুর ১ টায় যখন মহেশখালী দ্বীপের জেটিঘাটের সদ্য বসানো পন্টুনে ভিড়ে তখন বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস দেখা গেছে ভিড় করা দ্বীপের মানুষের। দ্বীপের ভূখন্ডে প্রথমবারের মতো সি-ট্রাক দেখার আনন্দের পাশাপাশি এ যেন দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের এবং দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভেরও বহিপ্রকাশ। তারা দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সী-ট্রাক চালুকে স্বাগত জানিয়ে শ্লোগানে মুখরিত তুলে।
দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সী-ট্রাক চালু হওয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দ্বীপের সচেতন মহল। তারা বলছেন, স্বাধীনতার পর থেকে এই জেটি ঘাট দিয়ে চলাচলকারি দ্বীপবাসী একটি পারিবারিক দূর্বৃত্ত চক্রের কাছে জিন্মি ছিল। এখন সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ও দূর্বৃত্তপনা থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর নিরাপদ যাতায়তের পাশাপাশি দ্বীপের পর্যটনের বিকাশ ও অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply