শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন
উখিয়া প্রতিবেদক : উখিয়া উপজেলার ১৩ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার প্রথমদিনেই অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তারা সকলে হলদিয়া পালং আদর্শ বিদ্যাপীটের শিক্ষার্থী।
পরীক্ষার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে প্রবেশপত্র না পেয়ে এসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নিতে ব্যর্থ হন।
এ ঘটনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে বিক্ষোভ ও ভাংচুর করেছে শিক্ষার্থীদের স্বজন ও বিক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ইউনুসকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, উখিয়ার হলদিয়া পালং আদর্শ বিদ্যাপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ১৩ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার ফরম পূরণের কথা বলে তিন দফায় জনপ্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকা নেন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুছ। সর্বশেষ পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্রের কথা বলে প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ৭০০ টাকা করে।
শিক্ষার্থীদের স্বজনরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে প্রবেশপত্র দেওয়ার কথা ছিল ওই শিক্ষার্থীদের। তারা বিদ্যালয়ে এসে দেখে গেটে তালা, তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে তারা। ফলে এসএসসি পরীক্ষা দিতে না পেরে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে তারা। ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। আটক করা হয় প্রধান শিক্ষককে।
কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, হলদিয়াপালং আদর্শ বিদ্যাপীঠ এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে একাডেমিক স্বীকৃতি পায়নি। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্য একটা বিদ্যালয় রুমখা পালং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষায় তাদের অকৃতকার্য ঘোষণা করা হয়। তারা এসএসসি পরীক্ষার ফরমও পূরণ করেনি। পরে তারা প্রধান শিক্ষক ও অন্য এক দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারনার শিকার হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়টি আগেভাগে জানানো হলে সমাধান করা যেত বলেও জানান শিক্ষা কর্মকর্তা।
উম্মে হাফসা নামের এক পরীক্ষার্থী জানায়, রেজিষ্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রতিজন থেকে ১০ হাজার টাকা করে। আমরা কত স্বপ্ন নিয়ে পড়ালেখা করে আসছি। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল পরীক্ষার্থীদের সবাইকে বিদায় সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। কতো আশা নিয়ে আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অপেক্ষায় ছিলাম, কিন্তু পরীক্ষার দিন সকালেও কেনো মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে? আমরা যেকোনো ভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চায়। আমাদের মা বাবার সব স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে এ বিদ্যালয়টি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
পরীক্ষার্থীরা আরও জানায়, এসএসসি টেস্ট পরীক্ষা রুমখাঁপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রশ্ন অনুযায়ী নেওয়া হয়েছে। যখন যেটার জন্য টাকা খুঁজছে সেটি অন্য স্কুলের চেয়ে বেশি হলেও আমরা দিয়েছি। তারপরও আমাদের রেজিষ্ট্রেশন ফরম ফিলাপ করা হয়নি এবং পরীক্ষার দিন সকাল পর্যন্তও আমাদেরকে প্রবেশপত্র দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসের মধ্যে রাখছে।”
সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানানোর পরে ঘন্টাখানেক মরিচ্যা-পাতাবাড়ী সড়কে যানচলাচল বন্ধ ছিলো। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উখিয়া থানা পুলিশের টিম গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুছকে জিজ্ঞাবাদের জন্য পুলিশী হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা যায়। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের পরিচালক জহির উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক সহ জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান অভিভাবক সহ স্থানীয়রা।
বিষয়টি উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরীকে অবগত করা হলে তিনি জানান,” বিষয়টি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমাকে জানানো হয়েছে। মুহুর্তে ডিসি স্যার সহ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ করি। যেহেতু রেজিষ্ট্রেশন করা হয়নি তাই পরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে বোর্ড এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এটি নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে দ্বিতীয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ আছে কিনা সেটি নিয়ে। এটি ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দেন তিনি।”
এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান ইউএনও।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply