শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মেরিন ড্রাইভে মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে বিদেশী নাগরিক নিহত (আপডেট) পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র-গোলা সহ মহেশখালীর বাহিনীর প্রধান জিয়া ও সহযোগী গ্রেপ্তার নাফনদী থেকে ট্রলার সহ ৬ মাঝি অপহরণ নিয়ে ধুম্রজাল ওপারে আবারও মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ; এবার আরাকান আর্মির বিপক্ষে স্বশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠি বিদেশ যেতে ভাইঝিকে অপহরণ, চাচা সহ গ্রেপ্তার ২ রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ আটক ৩ এবার রড সিমেন্ট বোঝাই ২ ট্রলার সহ ৬ মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে আরকান আর্মি  টেকনাফে ইয়াবা ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক ১ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হ্যান্ডগ্রেনেড, দেশিয় বন্দুক ও গুলিসহ আরসা’র সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার টেকনাফে আইস ও ইয়াবা সহ আটক ১

বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় বহিঃনোঙরে এলজিপিবাহী লাইটারেজ জাহাজে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : পাঁচ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে তেলবাহী দুটি জাহাজে আগুন লাগার পর এবার কক্সবাজারে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ায় বহির্নোঙরে এলপিজিবাহী একটি লাইটারেজ জাহাজে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।

‘সোফিয়া’ নামের জাহাজটিতে আগুন লাগার পরপরই বঙ্গোপসাগরে এটির পাশে থাকা মাদার ট্যাংকার ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাসে’ও আগুন ধরে যায়।

তবে মাদার ট্যাংকারটির আগুন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হলেও সোফিয়ার আগুন নেভাতে ১২ ঘণ্টা লেগে যায়।

শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে কুতুবদিয়া উপকূলের পশ্চিমে বহির্নোঙরে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি।

তিনি বলেন, সোফিয়ায় থাকা ৩১ ক্রুর সবাইকেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন অয়েল জেটিতে নোঙর করে রাখা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ ‘বাংলার জ্যোতি’তে বিস্ফোরণ থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সেদিন ঘটনাস্থলেই নিহত হয় তিনজন।

এর পাঁচদিন পর ৪ অক্টোবর মধ্যরাতে বিএসসিরই আরেক জাহাজ ‘বাংলার সৌরভে’ আগুন লাগে। ওই ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়।

বাংলার সৌরভে অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতা হিসেবে সন্দেহ করেন বিএসসির পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক।

তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, “দুর্ঘটনার আগে একটি নৌযান বাংলার সৌরভের পাশ দিয়ে ছুটে যায়। এরপরই জাহাজটির চার জায়গায় স্ফুলিঙ্গ হয়।

“অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত যেভাবে হয়েছে, তাতে নাশকতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

কুতুবদিয়া উপকূলের বহির্নোঙরে লাইটারেজ জাহাজ সোফিয়ায় অগ্নিকাণ্ড সম্পর্কে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, “কুতুবদিয়া উপকূলের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে নোঙর করেছিল এলপিজিবাহী সোফিয়া। শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে জাহাজটিতে হঠাৎ আগুন ধরে যায়।

“আগুন দ্রুত ভয়াবহ রূপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কুতুবদিয়ার উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের কয়েকটি জাহাজ। দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজটির আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে কোস্টগার্ডের ২টি এবং নৌবাহিনীর ৫টি অত্যাধুনিক জাহাজ।”

‘সোফিয়া’র ৩১ ক্রুকে উদ্ধারের পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদে রাখা হয়েছে বলে জানান খন্দকার মুনিফ তকি।

কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, ওমান থেকে এই এলপিজি আমদানি করেছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। ‘ক্যাপ্টেন নিকোলাস’ গত ৬ অক্টোবর মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে এলপিজি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন কুতুবদিয়া এলাকায় নোঙর করে।

এসময় জাহাজটিতে ৪২ হাজার ৯৭৫ মেট্রিক টন এলপিজি ছিল। আমদানি করা এলপিজি ক্যাপ্টেন নিকোলাস থেকে সোফিয়াতে স্থানান্তর করা হচ্ছিল। ছোট ট্যাংকারে স্থানান্তর করে সেগুলো নৌপথে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বসুন্ধরার এলপিজি কারখানায় নেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু স্থানান্তরের সময়ই আগুন ধরে যায়। আগুন লাগার পর জাহাজে থাকা সব নাবিক সাগরে লাফ দেয়। পরে বসুন্ধরা গ্রুপের টাগবোট ৩১ নাবিককে উদ্ধার করে।

ঠিক কী কারণে আগুন লেগেছে, তা জানাতে পারেনি বন্দর, নৌ বাহিনী বা কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা। তবে জ্বালানি তেল পরিবহনে যে পরিমাণ সতকর্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল, সেটি বসুন্ধরা গ্রুপ নেয়নি বলে মনে করছেন বন্দরের মেরিন বিভাগের এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা জানান, সোফিয়ায় গ্যাসের যে চিমনি ছিল, তা থেকে বিষাক্ত গ্যাস বের হচ্ছিল। সেই গ্যাসের কারণেই মূলত আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা কার্যকর থাকলে আগুন শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হতো। তাদের অবহেলার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত কমিটি হলে তাদের প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানা যাবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগুন লাগার পর সোফিয়া থেকে ১৮ জন ক্রু, ২ জন মুরিং ম্যান, ৩ জন প্রহরী ও ৮ জন বন্দর নিরাপত্তারক্ষীকে উদ্ধার করা হয়। ক্রুদের মধ্যে ৯ জন বাংলাদেশি, ৮ জন ইন্দোনেশিয়ান এবং একজন ভারতীয় রয়েছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ইস্ট জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন জহিরুল হক বলেন, “সোফিয়া জাহাজটি এলপিজি গ্যাসে ভর্তি থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে।

“মাদার ভেসেল ক্যাপ্টেন নিকোলাসের আগুন ভোররাত ৩টার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। আর সোফিয়ার আগুন রবিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুরোপুরি নেভানো হয়।”

ক্যাপ্টেন জহিরুল হক জানান, কোস্টগার্ড রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অগ্নিনির্বাপক টাগবোট, একটি টহল বোট ও আটটি স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে। নৌবাহিনীও অগ্নিনির্বাপক টাগবোট পাঠায়। ট্যাংকারের সঙ্গে বাঁধা দড়িটি ছিঁড়ে যাওয়ায় ক্যাপ্টেন নিকোলাস নিরাপদ দূরত্বে আছে।

মাদার ভেসেল থেকে সোফিয়ায় এলপিজি নেওয়ার সময় বসুন্ধরা গ্রুপেরই আরেকটি টাগবোট কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। দুর্ঘটনার খবরে এই টাগবোটই প্রথম এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

টাগবোটের মাস্টার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা হাফ নটিক্যাল মাইলের মধ্যেই ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছে দেখতে পাই, দুটি জাহাজেই আগুন ধরেছে। আমার ধারণা, মাদার ভেসেল ক্যাপ্টেন নিকোলাসের ক্রুরাই সেখানে লাগা আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888