শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারে শুক্রবারের তুলনায় শনিবার বৃষ্টি কিছুটা কমেছে। এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি নেমে গেলেও বেড়েছে প্লাবিত এলাকার সংখ্যা। এখনও জেলা সদর সহ ৬ উপজেলার অন্তত ২ শতাধিক গ্রাম পানিবন্দি থাকার তথ্য মিলেছে।
এদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৮ টি ফিশিং ট্রলার সহ অন্তত ৭০ জেলে নিখোঁজের তথ্য জানিয়েছেন মালিকরা। এর মধ্যে ৩ জনের মরদেহ সাগর উপক‚লে ভেসে এসেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, শুক্রবার বেলা ১২ টা থেকে শনিবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমান ২১০ মিলিমিটার। বৃষ্টি কিছুটা কমলেও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টা থেকে শুক্রবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা কক্সবাজারের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টি। এর আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছিল।
বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কক্সবাজার শহরের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। পর্যটন জোন কলাতলীর হোটেল মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা, মাকের্ট এলাকা থেকে নেমে গেছে পানি। শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী এলাকা থেকেও জলবদ্ধতা নেমে গেছে।
তবে শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া সহ ৮ টি নি¤œাঞ্চল এখনও পানিবন্দি রয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া এলাকাটি নি¤œাঞ্চল। সমুদ্র কুলের এসব এলাকার এখনও পানিবন্দি আশে ১০ হাজার ঘরবাড়ি।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় হোটেল মোটেল জোন এখন পানি নেমে গেছে। তবে বৃষ্টি হলেই এখন আতংক তৈরি হচ্ছে। মুহুর্তের মধ্যেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে। নালা উন্নত করা না হলে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।
উখিয়া উপজেলা ৪০ টির বেশি গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। উখিয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিয়াপালং ও জালিয়া পালং ইউনিয়নে।
এই দুই ইউনিয়নের ৩০ টি গ্রামের ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ গত দুই দিন ধরে পানির নিচে বসবাস করছে। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না হচ্ছেনা অধিকাংশ ঘরে।
জালিয়া পালং ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া, ঘাটঘর পাড়া পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি, সোনারপাড়া ডেইপাড়া মনখালি, হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া, মনির মার্কেট, রুমখা পালং, বড়বিল, পাতাবাড়ি, নলবুনিয়া, খেওয়া ছড়ি, বৌ বাজার, কুলাল পাড়া, পাগলির বিল, রাজা পালং ইউনিয়নের কুতুপালং, মাছকারিয়া, লম্বাশিয়া তুতুরবিল, পিনজির কুল, রতœা পালং ইউনিয়নের সাদৃ কাটা, পশ্চিম রতœা, খোন্দকার পাড়া, গয়াল মারা ও পালংখালী ইউনিয়নে থাইংখালী, রহমতের বিল, বালুখালী তৈল খোলা, আঞ্জুমান পাড়া ফারিবিল সহ অন্তত ৪০ টি গ্রামে পানি তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
উখিয়া উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যায় উপজের ৫ ইউনিয়নে অনেক এলাকার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। জালিয়া পালং ও হলদিয়াপালং ইউনিয়ন এর মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানিয়েছেন, দুই মাসের ব্যবধানে ৪ দফা বন্যায় তার ইউনিয়নের ২০টির বেশি গ্রামের মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভির হোসেন জানিয়েছেন, বন্যায় কবলিত এলাকার মানুষের জন্য জেলা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও মাধ্যমেও সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বৃষ্টিতে চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্খা রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, বিএমচর, কোনাখালী ও বদরখালী ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ২০ হাজার লোক পানি বন্দি রয়েছে। এছাড়া আমন ধানের ক্ষেত ও শীতকালিন বিভিন্ন সবজির চারা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়।
মানকিপুর-সুরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, মানিকপুর এলাকায় বৃষ্টিতে নিচু এলাকার অন্তত ২শতাধিক ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ী এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ছালেকুজ্জামন বলেন, আমার ইউনিয়নের পহরচাঁদা, গোবিন্দপুর ও ডেইঙ্গাকাটা এলাকায় অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাদের নিরাপত্তা ও শুস্ক খাবার বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া ও মগনামা ইউনিয়নের ১০ টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এলাকার খোঁজখবর রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ও নদীর তীরবর্তী অবস্থানরত লোকজন নিরাপদে সরিয়ে যেতে উপজেলার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন সহায়তা করতে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি জানান।
পেকুয়ার শিলখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)
চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারনে ভয়াবহ অবস্থার
সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কিছু বসতঘর ও দোকান-পাটে
পানি ঢুকেছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply