শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না

নুপা আলম : মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তের নানা পয়েন্টে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বিজিবিসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নানা সর্তকর্তার পরও অনুপ্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরবর্তিত পরিস্থিতিতে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ নিচ্ছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের সদস্যরা।

সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সরকার পতনের পর পর কয়েকদিন সীমান্ত এলাকাসহ আশে-পাশের এলাকাগুলোতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমনটা তৎপরতা ছিল না। মূলত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালালরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা শুরু করে। সম্প্রতি তৎপরতা বাড়ানো হলেও সংঘবদ্ধ দালালরা রাতের আঁধারে বিজিবিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা করছেন।

গত ৫ আগস্টের পরবর্তী নানাভাবে ১০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত রবিবার পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ হাজার রোহিঙ্গা নানাভাবে অনুপ্রবেশ করেছে।

সরকারি একটি দায়িত্বশীল সংস্থার তথ্য বলছে, রবিবার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়ার ৩০ টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অন্তত ৪৭৫ জন রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশের তথ্য পেয়েছেন। সেই সব রোহিঙ্গারা নানাভাবে ক্যাম্পে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীর পাশাপাশি অনেকে ভাড়া বাসায় অবস্থান নিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন।

বিষয়টি এক প্রকার স্বীকার করেছেন উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেছেন, রাতে টেকনাফের নাফনদী সীমান্ত দিয়ে নতুন করে অনুপ্রবেশকারি রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে প্রবেশ করতে দেখেছেন। এসব রোহিঙ্গারা যাতে স্থানীয়দের বাসা বাড়িতে অবস্থান নিতে না পারেন তার জন্য এলাকাবাসিকে সর্তক করা হয়েছে।

সীমান্ত সুরক্ষায় আরও কঠোর নজরধারীর দাবি জানিয়ে আশংকা করে তিনি বলেন, অন্যথায় আবারও ২০১৭ সালের মতো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামতে পারে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিজিবির কক্সবাজার ও টেকনাফের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সাথে আলাপের জন্য সোমবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও কোন ধরণের সাড়া দেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও মিলেনি কোন সাড়া।

তবে বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন, সীমান্তে বিজিবির পক্ষে সর্বোচ্চ সর্তকর্তার সাথে কাজ করা হচ্ছে। গত এক মাসে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারি ৪ হাজার ৫০৬ জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকপাচার ও অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪৩ জন চোরাচালানী এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে ১২৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক ও ২২ জন ভারতীয় নাগরিককে আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এব্যাপারে কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের ইনচার্জের ফোন নম্বরের যোগাযোগ করা হলেও সাড়া দেননি।

টেকনাফে রয়েছে নৌ পুলিশের একটি ফাঁড়ি। সেখানে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়েছে, নৌ পুলিশের ফাঁড়িতে বর্তমান কোন কর্মকর্তা নেই। ৫ সদস্যের জনবলের ফাঁড়িতে কর্মকর্তা নেই। অপর ৪ জন স্টেশনে রয়েছেন। তাদের কোন প্রকার জনযানও নেই। কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে দেখা গেলেও বাঁশি বাজানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

সরকারের প্রশাসনিক শীর্ষ এক কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিক বক্তব্য প্রদান করতে রাজী হননি।

তবে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কিছু রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের তথ্য রয়েছে। দালালরা কৌশলে এসব রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা করছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের যে পরিস্থিতি তাতে বিজিবি সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর যে জনবল তা দিয়ে নিছ্দ্র নিজরধারী সম্ভব হচ্ছে না। এ সুযোগে দালাল চক্রের মা্যেমে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য নানা মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। এসব রোহিঙ্গাদের অনেকেই ক্যাম্পে অবস্থানকারি স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ স্থানীয়দের ভাড়া বাসায় অবস্থান নেয়ার তথ্য মিলেছে।

তবে সংখ্যক রোহিঙ্গা সাম্প্রতিক সময়ে অনুপ্রবেশ করেছে তার কোন সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

সীমান্তের সীমান্তের বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য বলছে, আগস্ট মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত কম হলে ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ হয়েছে। টেকনাফের বেশির ভাগ জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল, উখিয়ার বালুখালী, ঘুমধুম সীমান্তসহ অন্তত ৩০ টি পয়েন্টে দিয়ে এসব রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। মংডুর উত্তরের প্যারাংপুরু ও দক্ষিণের ফাদংচা এলাকায় জড়ো থাকা রোহিঙ্গারা দালালদের সহায়তায় এই অনু্প্রেবেশ অব্যাহত রেখেছে। শতাধিক দালাল এই কাজে জড়িত রয়েছে।

এদিকে নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তাদের তালিকা করারও উদ্যোগ দেখা যায়নি এখনো। যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত আসলেও তাদেরকে খোঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সীমান্তের জনগণ।

এব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্তের জন্য তারা তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো নতুন রোহিঙ্গাদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি তাদের কাছে। ফলে নতুন রোহিঙ্গাদের নিয়ে তাদের কোন উদ্যোগ নেই।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে নতুন করে যারা অনুপ্রবেশ করেছে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আত্মীয় স্বজনের কাছে রয়েছে। যারা যুদ্ধে আহত হয়েছে তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। উপর থেকে নির্দেশনা আসলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি বাংলাদেশের কিছু দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। বিষয়টি নিয়ে বিজিবিসহ সবাইকে জানানো হয়েছে আরো কঠোর হওয়ার জন্য।”

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888