শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ আবারও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সীমান্তের ওপারে একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে সীমান্তের এপারে। যার জের ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে ভূমিকম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। দেখা দিয়েছে আতংকও।
সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত টানা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এরপর আবার মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত শোনা গেছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। এর আগে রবিবার রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়।
মঙ্গলবার দুপুর ১ টায়ও টেকনাফ সীমান্তের ওপারে চক্কর দিতে দেখা গেছে যুদ্ধবিমান।
টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে চলছে এই যুদ্ধ। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কোওয়ারবিল, নাকপুরা, বলিবাজার সহ আশে-পাশের এলাকা ঘীরে চলছে এই যুদ্ধ।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চকবাজার এলাকার বাসিন্দার মো. কালা বলেন, যেভাবে হঠাৎ মিয়ানমার ওপারে থেমে থেমে বোমার বিকট শব্দে কাঁপছি আমার বাড়ি। এরকম শব্দ কোনদিন শুনি নাই। মনে হয়েছি আমার বাড়ি ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে ঘুমাইতে পাচ্ছি না।
টেকনাফ পৌরসভা কায়ুকখালী এলাকার বাসিন্দার আবুল বলেন, সকাল ৭ টা ২০ মিনিটের সময় কিসের শব্দ বুঝতে পারি নাই। পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন ওয়াব্রাাং এলাকার বাসিন্দার মোহাম্মদ কামাল জানান, ফজরের নামাজের পর থেকে মিয়ানমার ওপারে যেভাবে মর্টারশেলের শব্দ হয়েছিল। মনে করে ছিলাম ভূমিকম্পে বাড়ি ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। বজ্রপাতের মত বিকাশ শব্দ হচ্ছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, কোনদিন এভাবে বিকট শব্দ শুনি নাই। সকালে এমনভাবে বিকট শব্দ হয়েছে মনে হয় বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ছে।
শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দ শাহীন আলম বলেন, মিয়ানমার ওপারে এমন বিকট শব্দ হয়েছে পুরো এলাকা কাঁপছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হক জানান, এমন বিকট শব্দ আগে কখনো শুনিনি। গভীর রাতে মিয়ানমারের গোলাগুলির শব্দে বাড়ির ভিতরে পর্যন্ত থাকা যাচ্ছে না। রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত শতাধিক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে মর্টার শেল নিজের বাড়ির ত্রিসীমানায় বিস্ফোরণ হচ্ছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ জানান, যেহেতু মিয়ানমারের সাথে আমাদের দূরত্ব কম তাই আমরা তাদের গোলাগুলির শব্দে ঘুমাতে পারছি না। সদরের মৌলভী পাড়া, নাজির পাড়া, খানকার ডেইল, বরইতলী ও কেরুনতলীসহ এ এলাকাগুলো নাফনদীর সাথে সম্পৃক্ত এলাকা।
চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি, ওপার থেকে রোহিঙ্গারা এপারে আসার জন্য জড়ো হয়ে আছে। প্রতিটি নৌঘাট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা জানিয়েছি। জনপ্রতিনিধিরাও সজাগ রয়েছি।
সীমান্তের একাধিক সূত্রের দেওয়া খবর অনুযায়ী, গত রোববার থেকে সরকারি বাহিনীর অবস্থানে হামলা বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি। সোমবার সন্ধ্যায় মংডু টাউনশিপের কাছাকাছি অবস্থিত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একটি ক্যাম্প আরাকান আর্মি দখল করে নেয় বলে জানা গেছে।
ইতিমধ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশের রাচিডং টাউনশিপসহ ১০টির বেশি থানা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি।
মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply