সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
গাজায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে কক্সবাজারে বিক্ষোভ : ইজরায়েলি পণ্যের সাইন বোর্ড থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর রামুতে দুইটি অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১ নারীর জমি দখলে নিতে কৃষকদল নেতা পরিচয়ে ভোর রাতে হামলা, ভাংচুর ও গুলি বর্ষণ; আটক ১ হজ্ব যাত্রীদের হয়রানী করলে এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে : ধর্ম উপদেষ্টা চকরিয়া কলেজের অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, শিক্ষকদের কর্মবিরতি মিয়ানমার অভ্যন্তরে ‘তোঁতার দিয়া’ সীমান্তেমাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি জেলের পা বিচ্ছিন্ন উখিয়ায় ‘জমি বিরোধের জেরে’ সংঘর্ষে জামায়াত নেতা সহ নিহত ৩, আটক ৪ টেকনাফে আবারও দুইজনকে অপহরণ; ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি ঈদগাঁওতে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত ১ উখিয়ায় ‘জমি বিরোধের জেরে’ সংঘর্ষে জামায়াত নেতা সহ নিহত ৩

অপমৃত্যুর পথে ‘মাইক্রোওয়েভ স্টেশন’

নুপা আলম : কক্সবাজার জেলায় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) একটি ‘মাইক্রোওয়েভ স্টেশন। কক্সবাজার শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের পাশে আদর্শ গ্রামে অবস্থিত এই স্টেশনটির স্থাপনা নিমার্ণ করা হয়েছিল ১৯৭৬ সালে।

সরকারি নথিপত্র বলছে, ৫ দশমিক ৬ একর জমিতে নিমার্ণ করা হয় মাইক্রোওয়েভ স্টেশনটির এই স্থাপনা। যেখানে নির্মিত ৮৩ ফুট দীর্ঘ সম্প্রচার টাওয়ারে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন টেলিকম অপারেটর এবং গোয়েন্দা সংস্থার রেডিও অ্যান্টেনা বসানো আছে। রয়েছে ‘মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ড’ প্রকল্পের অ্যান্টেনা এবং বিটিভির সম্প্রচার যন্ত্রপাতিও। এলাকাটি স্থানীয়দের কাছে টিএন্ডটি টাওয়ার বলে পরিচিত।

কিন্তু কেপিআই ভূক্ত এই ‘মাইক্রোওয়েভ স্টেশন’টির যে কোন মূহুর্তে অপমৃত্যু হতে যাচ্ছে। গত ১৫ বছরের ধারাবাহিক দখল এবং পাহাড় কর্তনের কারণে যে কোন মূহুর্তে টাওয়ারটি সহ স্থাপনাটি ধ্বসে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। আর এটি ধ্বসে পড়লে কক্সবাজারে সরকারি বেসরকারি যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্টি হবে মহা বিপর্যয়।

গত ১৫ বছর আগে থেকে দখল এবং পাহাড় কাটা শুরু হওয়া প্রতিষ্ঠানটির পাহাড় ঘীরে সম্প্রতি চলছে ভয়াবহ পাহাড় নিধন।

কলাতলী আদর্শ গ্রামের লোকজন, স্টেশনটিতে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তা-কর্মচারিরা জানিয়েছেন, গত ২০ দিন ধরে প্রতিরাতেই পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। শতাধিক শ্রমিক ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড়টি কেটে মাটি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ডাম্পার যোগাযোগে। সশস্ত্র পাহারায় চলছে এমন পাহাড় কাটা। আর পুরো পাহাড় কাটায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন কক্সবাজারের বহুল আলোচিত ‘ইলিয়াস’।

সরেজমিন দেখা যায়, মাইক্রোওয়েভ স্টেশনের চার-পাশে পাহাড়ের পাদদেশে বিশাল আয়তনের জায়গা দখল করে একের পর এক স্থাপনা। ইট ও টিনের বাউন্ডারি দেয়া। আর পাহাড় কেটে সকল স্থাপনার মালিক একজনই। তাঁর নাম ইলিয়াস।

সম্প্রতি নতুন করে ধারাবাহিক পাহাড় কাটার সত্যতা স্বীকার করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) আরিফ উল্লাহ নিজামী।

তিনি জানিয়েছেন, মাইক্রোওয়েভ স্টেশন ঘীরে সম্প্রতি পাহাড় কাটার খবর পেয়ে শনিবার (১৬ মার্চ) রাতে ঘটনাস্থলে অভিযানে গিয়েছিলেন। বনবিভাগ, পুলিশ ও আনসারকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। এসময় ঘটনাস্থলে পাহাড় কাটায় জড়িতরা পালিয়ে গেছে। এব্যাপারে বনবিভাগকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

এব্যাপারে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সরওয়ার আলম জানান, এই পাহাড়টি বনবিভাগের হিসেবে জানি। কিন্তু এখন এক ব্যক্তি তার মালিকাধিন দাবি করে কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছে এটি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আর নিজের মালিকানায় পাহাড় থাকার কথা না। শ্রেণী পরিবর্তন করে এটি করলেও পাহাড় কাটা অপরাধ। যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বনবিভাগের কক্সবাজার সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন শাহ জানান, ইলিয়াস নামের এই ব্যক্তি এই পাহাড়ের মালিকানার কাগজ জমা দিয়েছে। এটা আসল নাকি ভ‚ঁয়া যাচাই হচ্ছে।

যদিও সংরক্ষিত বনভূমি দখলের অভিযোগে এই ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ১২-১৪ টি বন মামলা রয়েছে বলে জানান তিনি।

বনবিভাগ, কলাতলী এলাকার লোকজনের দেয়া তথ্য মতে, ২০০৮ সালে কলাতলির আদর্শ গ্রামে মাইক্রোওয়েভ স্টেশনের পাশের এক জায়গা দখল করে ঘর করে অবস্থান নেন এই ইলিয়াস। সেই থেকেই ইলিয়াসের উত্থান। ২০০৯ সালে জানুয়ারি মাসে কলাতালি টিএন্ডটি এলাকায় ৮০০১ দাগের ২ একর সরকারী সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে নেয়। বনবিভাগ বেশ কয়েকবার সেই জায়গাটি উচ্ছেদ করলেও পূনরায় বীরর্দপে তা দখল করে ইলিয়াস। সরকারী এ সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে সেই জায়গায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। আর রোহিঙ্গাদের দিয়ে সরকারি বনভূমি দখল করে যাচ্ছে এই ইলিয়াস।

আর এর জন্য কক্সবাজার শহরের কলাতলী আদর্শ গ্রামের অপরাধের আস্তানা বানিয়েছে আলোচিত ইলিয়াস। যেখানে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছাড়াও তৃতীয় লিঙ্গের একটি গোষ্ঠি রাখা হয়েছে পাহারায়।

যদিও ইলিয়াস নামের এই ব্যক্তি বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘এটি আমার খতিয়ানভ‚ক্ত জায়গা। আগে থেকেই স্থাপনা ছিল। এখন নতুন করে কোন পাহাড় কাটা হচ্ছে না। এখানে টিএন্ডটি কোন জায়গা নেই। আমার জায়গায় আমি আছি। ’

কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) ঘটনাস্থলে পরিদর্শন এবং অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ম্যাজিষ্ট্রেট মানুষ, তিনি যেকোন স্থানে যেতে পারেন। ওখানে আমি কোন অপরাধ করিনি।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888