রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১০ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ সৈকতে গোসলে নেমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিখোঁজ ২ বুদ্ধাঙ্ক (IQ) এর পরিমাপ অনুযায়ী প্রতিভাবান শিশুদের বুদ্ধাঙ্ক মাত্রা চকরিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ জীবন সংগ্রামি লাইলার কম মূল্যের সবজির দোকান শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার ভিডিও ভাইরাল মিয়ানমারে বিস্ফোরণে মুহুর্মুহু শব্দ, টেকনাফের বসত ঘরের আঙ্গিনায় এসে পড়েছে গুলি মাকে কুপিয়ে হত্যার পর থানা এসে হাজির যুবক টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ

গৃহযুদ্ধে সরকারীভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অসম্ভব, তবে স্বদেশে ফিরা সহজ

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট

আরাকান আর্মির ব্যাপক আক্রমণে প্রাণ বাচাঁতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বিজিপিসহ ৩৩০ জন মিয়ানমারের নাগরিক গত ১৫ ফেব্রæয়ারী নৌপথে স্বদেশে ফিরে গেলো। আশ্রিতদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বিজিপি’র কর্নেল মাইত্তো প্রæ নেঙ এর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল বাংলাদেশে এসেছিল। এদের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং চ্য মুয়ে মোয়েসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। আশ্রিতদের ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরানের নেতৃত্বে গঠিত ৭ সদস্যের হস্তান্তর কমিটি। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহনকারী ৩৩০জনের মধ্যে ৩০২জন বিজিপি সদস্য, ২জন সেনা কর্মকর্তা, ১৮জন ইমিগ্রেশন সদস্য, ৪জন বিজিপি সদস্যের পরিবার ও বাকী ৪জন তাদের সঙ্গীয় পাবলিক বলে জানা যায়। এই বিজিপি সদস্যদের মধ্যে যারা আহত ছিল তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা সহ তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা, খাওয়াদাওয়ার যথাযথ ব্যবস্থা ও স্বসম্মানে সম্পূর্ণ নিরাপদে স্বদেশ মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য দ্রæত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে আশ্রিতদের হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। যদিও কয়েক বছর আগে আমাদের বাংলাদেশের দুইজন বিজিবির সদস্যের সাথে মিয়ানমারের বিজিপি কি অমানবিক,নিষ্ঠুর আচরণ করেছিল তা ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে তারা কত বড় নির্দয়,অমানুষ তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। বিদ্রোহী আরাকান আর্মির কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করলে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিলে মিয়ানমার জান্তা সরকার তাদের দ্রæত সময়ের মধ্যে স্বদেশে নিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লিখিত চুক্তি করেও গত সাত বছরের মধ্যে জান্তা সেনাদের দ্বারা গণহত্যা,গণধর্ষনের মাধ্যমে বিতাড়িত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৪ লাখ রোহিঙ্গার একজনকে ফিরিয়ে নেয় নাই।

মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ সম্প্রতি আরাকান রাজ্যেও বিস্তার লাভ করার কারণে সীমান্তের ১৯টি পয়েন্টে বাংলাদেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে এবং বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী ও অন্যান্য বাহিনী রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সকল চেষ্টা সফলভাবে ব্যর্থ করে দিচ্ছে। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ,যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপিয় দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুরোধের প্রতি বাংলাদেশ সম্মান দেখিয়ে মানবতার কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে তারা কেউ কথা রাখেনি। বরং বাংলাদেশের সাথে এক ধরনের প্রতারণা ও ঠকবাজী করে যাচ্ছে। তাই এই বার রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় আরো রোহিঙ্গাদের আবার আশ্রয় দেওয়ার জাতিসংঘের নিঃলজ্জ অনুরোধ সঠিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এইবার সুযোগ পেলে মিয়ানমারে এখনও থেকে যাওয়া প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার ও আগের ১৪ লাখ রোহিঙ্গাদের সাথে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা। জাতিসংঘ,যুক্তরাষ্ট্র,ইউরোপিয় ইউনিয়ন,চীন,ভারত,রাশিয়াসহ রোহিঙ্গা সংক্রান্ত ব্যাপারে কোন সংস্থা বা দেশের উপর আমাদের বিশ্বাস নাই,আমাদের কক্সবাজাসীর কাছে সবাই প্রতারক ও স্বার্থপর। তারা সবকিছু করছে নিজেদের স্বার্থে।

তাহলে বাংলাদেশের এখন কি করা উচিত? রাখাইন রাজ্যে ভারতের কালাদান প্রকল্পসহ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ থাকলেও ভারত ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার সীমান্ত কাটাতারের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমাদেরও প্রকাশ্যে ঘোষণা দেওয়া উচিত যে আমরাও কাটাতারের বেড়া দিয়ে সীমান্ত বন্ধ করে দেব যাতে কোন রোহিঙ্গা,আরাকান আর্মি,জান্তার বাহিনীর সদস্যরা প্রাণ রক্ষার অজুহাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। মিয়ানমারে চরম অজনপ্রিয় জান্তা সরকার মাত্র ১৭ভাগ ভুমির দখল নিয়ে এখনও ক্ষমতায় বহাল আছে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত অং চান সুচীর দলসহ অন্যান্য দলের জাতীয় ঐক্য সরকার পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। তাদের অধীনের পিপলস ডিফেন্স ফোর্স নামের সেনাবাহিনী আছে। তারাও আরাকান আর্মির ও থ্রি ব্রাদারহুডের মত অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। বিদ্রোহীরা জান্তা সেনাদের পরাজিত করে বিভিন্ন শহর,সেনাচৌকি,সেনাস্থাপনা ইত্যাদি দখল করে নিচ্ছে। রাখাইন বা আরাকান রাজ্যও আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। তারপরও বিমান বাহিনী,নৌবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ বিমান,বোমাসহ মারাত্মক মরণাস্ত্র জান্তা বাহিনীর হাতে আছে। সশস্ত্র আরাকান আর্মি,সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলো বাংলাদেশের মধ্যে কোনভাবে আশ্রয় প্রশ্রয় পেলে বেপরোয়া জান্তা বাহিনীর বিমান,বোমা,গোলা হামলার শিকার বাংলাদেশ হবে না তার নিশ্চয়তা কি? ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের গোলার আঘাতে বাংলাদেশের মধ্যে দুইজন নিহত ও ২০জনের অধিক আহত হয়েছেন। চীনের আনুষ্ঠানিক সমর্থন জান্তা সরকারের প্রতি আছে । কিন্তু গোপনে সকল বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্রসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে চীন। আমাদের আনুষ্ঠানিক সকল সম্পর্ক,চুক্তি ইত্যাদি জান্তা সরকারের সাথেই আছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের স্বার্থে আমাদের অবশ্যই অঘোষিতভাবে আরাকান আর্মি ও জাতীয় ঐক্য সরকারের সাথেও কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে চীনের মত। প্রতিবেশী কোন দেশের অস্ত্রধারী কোন বাহিনী আমরা বাংলাদেশের মাটিতে চাই না,আমারা বাংলাদেশের মাটিতে কোন যুদ্ধও চাই না। ২৩জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে নিয়মিত মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ সরকার উচিত কাজ করেছে।
মিয়ানমারের সংকট যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নাই। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে সমাধান না হলে গৃহযুদ্ধ আরো দীর্ঘায়িত হবে। কোন দিন আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হলেও রোহিঙ্গাদের বৈধ অধিকার আদায়ের জন্য তাদের মাতৃভুমিতে উপস্থিত থাকতে হবে। যেভাবে রোহিঙ্গারা প্রাণ রক্ষার জন্য জাতিসংঘ বা অন্য কারো সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে ঠিক সেভাবে আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্মভুমিতে ফিরে যাওয়া উচিত। গৃহযুদ্ধের মধ্যে ৩৩০জনকে যেভাবে জান্তা সরকার স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়েছে সেভাবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সরকারীভাবে প্রত্যাবাসনের কোন আশা নাই। তবে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যেতে কোন বাঁধাও নাই। এখন জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে পরস্পরকে টার্গেট করে গোলাগুলি নিক্ষেপ করছে, রোহিঙ্গারা তাদের লক্ষ্যবস্তু নয়। মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে তাদের স্বগ্রামে অবস্থান করা ছাড়া রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার সহ কোন অধিকার ফেরত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।

জাতিসংঘ বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টায় থাকা রোহিঙ্গাদের রাখাইন রাজ্যে গিয়ে মানবিক সাহায্য সহায়তা করতে পারেন। আরাকানে জাতিসংঘ আর্ন্তজাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করে অসহায় রোহিঙ্গা ও অন্য সম্প্রদায়ের সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারেন।

লেখক : একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা, সাবেক পিপি ও সভাপতি, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888