শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মাকে কুপিয়ে হত্যার পর থানা এসে হাজির যুবক টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪

নির্বাচন ঘীরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা; এক মাসে ৯ খুন

নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের আশংকায় সতর্ক প্রশাসন

বিশেষ প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘীরে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাসে ক্যাম্পে ৯ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত নভেম্বর মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খুনের ঘটনা ঘটেছে ৫ টি। এই ২ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‌্যাব-এপিবিএন সদস্যের সাথে সন্ত্রাসীদের ৩ বার গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। যেখানে অস্ত্র সহ ১৯ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরসা’র সদস্যরা নির্বাচন ঘীরে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এর জন্য গোপন মিটিং করার খবরে ইতিমধ্যে অভিযানও চালানো হয়েছে। ইতিমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। মুলত নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যস্ত থাকতে এবং এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসী চক্রটি ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ফের নিয়ন্ত্রণ নিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এর জের ধরে ডিসেম্বর মাসে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৯ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৯ ডিসেম্বর ১৫ নম্বর ক্যাম্পে ১জন, ২৪ ডিসেম্বর টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে ১ জন, ২১ ডিসেম্বর ১৫ নম্বর ক্যাম্পে ১ জন, একই দিন ১৭ নম্বর ক্যাম্পে ১ জন, ৪ নম্বর ক্যাম্পে ১ জন, ২৫ ডিসেম্বর ১৫, ১৭ ও ৪ নম্বর ক্যাম্পে ৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি খুনের ঘটনা গুলি করে সংঘটিত করা হয়। এর আগের মাস নভেম্বরে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৫ টি।

নির্বাচন ঘীরে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য মিটিং করার খবরে গত ১৯ ডিসেম্বর র‌্যাব জামতলী ১৫ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক অভিযান চালায়। অভিযানে উপস্থিতি টের পেয়ে দূর্বৃত্তরা অতর্কিত র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে র‌্যাব সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছুড়ে। এক পর্যায়ে আরসা সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে সন্দেহজনক ঘরটি থেকে আরসা’র ৪ সদস্যকে আটক করা হয়।

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‌্যাবের সাথে আরসা সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ‘নাশকতা সৃষ্টির জন্য গোপন মিটিং’ করার খবরে অভিযানে গেলে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এসময় ঘটনাস্থল থেকে আরসার চিহ্নিত ৪ সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে দেশি-বিদেশি অস্ত্র ও গুলিসহ কিছু বিস্ফোরক। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে ১টি বিদেশী পিস্তল ম্যাগাজিন সহ, ২টি ওয়ান শুটার গান, ২টি দেশীয় তৈরী এলজি, ৪ রাউন্ড বিদেশী পিস্তলের কার্তুজ, ৫টি এলজি’র কার্তুজ, বড় ককটেল ৫টি, ছোট ককটেল ৮টি, ৪টি স্মার্টফোন এবং ২টি পকেট নোটবুক, ২টি হিসাবের খাতা, ৪৪ পৃষ্ঠাযুক্ত হিসাবের লিস্ট খাতা।

১৮ ডিসেম্বর এপিবিএনের সাথে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এসময় অস্ত্র সহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২ নভেম্বর এপিবিএনের সাথে অপর এক গোলাগুলির ঘটনার পর অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার হয়েছে ৬ জন।

র‌্যাব ১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। একের পর এক চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এতে ক্রমগত দূর্বল হওয়া সন্ত্রাসীরা মুলত নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যস্ত থাকতে এমন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ফের নিয়ন্ত্রণ নিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের আশংকায় সতর্ক প্রশাসন :

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে নাশকতা ঘটানোর আশংকা করা হচ্ছে। নির্বাচনে মিছিল-মিটিং ও জনসভায় রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এ আশংকা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা কোন গোষ্টি বা প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা বা কেন্দ্রে গিয়ে অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সেনা নির্যাতনের ফলে পালিয়ে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বন ও পাহাড় কেটে ছোট-বড় ৩২টি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৭৮-৭৯ সালে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের ভোটার তালিকাভুক্ত হয়েছে। ভোটার হওয়া এসব রোহিঙ্গাদের সাথে অন্যান্য রোহিঙ্গারা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা, মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহন বা ভোটকেন্দ্রে নাশকতা ঘটাতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে স্থানীয় ভোটাররা।

উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের (কুতুপালং ক্যাম্প সংলগ্ন) ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানান, ইতিপূর্বে নির্বাচন ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার বিষয় রয়েছে। কিছু রোহিঙ্গা নানা অপকর্মেও জড়িয়ে পড়েছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের আশংকা রয়েছে। নির্বাচনি কাজে রোহিঙ্গাদের না জড়ানোর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রচেষ্টা রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প থেকে বাহির হতে না পারে এ বিষয়ে ক্যাম্পে দ্বায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহ প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নেয়া প্রয়োজন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গাদের বিষয় মাথায় রেখে নির্বাচনকে ঘিরে কক্সবাজার জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পের বাইরে তল¬াসি চৌকি বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ, এপিবিএন সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করছেন। রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাইরে যেতে না পারে সে লক্ষে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রচার প্রচারণায় বিশৃঙ্খলা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার মত তেমন কোন কিছুই নজরে আসেনি। উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের যাতে নির্বাচনের ব্যবহার করতে না পারে সে জন্য প্রশানের কঠোর নজরদারী রয়েছে। নির্বাচনি কর্মকান্ডে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করার আশংকার কথা মাথায় রেখে মাস খানেক পুর্ব থেকেই প্রতিটি ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রোহিঙ্গারা নির্বাচনি কাজে না জড়ানোর জন্য ক্যাম্পে সতর্কতা করা হয়েছে। নির্বাচন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে নানা ধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচনের দিনও প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়োজিত ৮ এপিবিএনের পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বী বলেন, সংসদ নর্িাচনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গারা যাতে নর্িাচনী কাযক্রমে যুক্ত হতে না পারে তার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কাটাতারের বেড়া দিয়ে রোহিঙ্গারা বের হতে না পারে তার জন্যও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চেকপোস্ট ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এপিবিএন সব্বোচ সচেষ্টা রয়েছে। আশা করি, কোন সমস্যা হবে না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনে ২৬ জন প্রার্থী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলার মোট ভোটার ১৬ লাখ ৫০ হাজার ৯৬০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭৮ জন ও পুরুষ ভোটার ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৪৮০ জন। জেলায় মোট ভোট কেন্দ্রে রয়েছে ৫৫৬টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৩৫০৭টি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888