শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
চকরিয়া প্রতিবেদক : কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে মেরুকরণ উলটপালট হয়ে যাচ্ছে। প্রার্থী নিয়ে রুপ-রঙ বদলাচ্ছে কয়েকদিন পরপরই। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে।
আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী কক্সবাজার জেলা আওয়ামিলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ (সিআইপি) সহ ১৩ জন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের পর জমা করেছিলেন নির্বাচন করার লক্ষ্যে। ৩ ডিসেম্বর বাছাইকালে রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে ৫ জন প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল হয়। তাদের মধ্যে আওয়ামিলীগের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে আপিল শুনানির পর সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রার্থীতা বাতিল আদেশ বহাল রাখেন। একইদিন জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দীন মাহমুদ নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখে ঘোষণা দেন তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন। তিনিও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক চেয়েছিলেন। এতে একজন বাতিল আরেকজন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ায় মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন। বলাবলি হচ্ছে, মহাজোটের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে লড়বেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি (বহিষ্কৃত) মেজর জেনারেল (অব) বীরপ্রতীক সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম। এ আলোচনা শুক্রবার শুরু হওয়ার পর থেকেই নানা শ্রেণী পেশার মানুষের অভিমত, এই প্রার্থীকে তো আমরা চিনিনা। দেখিওনি কোনদিন। হঠাৎ এসে প্রার্থী হলে কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন শক্তিশালী প্রার্থী একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা নিয়ে বিজয়ী হওয়া চকরিয়া উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম। তিনি বর্তমান এমপি ও দলীয় প্রধান পদ বহন করার পাশাপাশি চকরিয়া-পেকুয়ার একটি পৌরসভা ও ২৫ টি ইউনিয়নের দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের জানা চেনা থাকায় প্রার্থী হিসেবে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। এমনকি জাফর আলম এমপির বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের দুর্নাম থাকলেও নৌকার প্রার্থী বা এলাকার কোন শক্তিশালী বিকল্প প্রার্থী না থাকায় ভোটের মাঠে বাড়তি সুবিধা ভোগ করবেন। এছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হয়েছেন হোসনে আরা। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াসের সহধর্মিণী। বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্যের ছেলে তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন ও কল্যাণ পার্টির বহিষ্কৃত মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন। তবে আব্দুল আউয়াল মামুন কক্সবাজার-৩ আসনেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সেখানে তিনি নির্বাচন করতে প্রস্তুত বলে নিজেই জানান।
মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমাকে ঋণখেলাপীর তালিকা থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের একজন প্রতিনিধি ও ইসি কার্যালয়ে অনাপত্তি জানাতে উপস্থিত ছিলেন। এরপরও আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করবো। নেত্রীর নির্দেশনা পেলে উচ্চতর আদালতে আপিলসহ প্রার্থীতা ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় সব করবো।’
কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ একজন শ্রদ্ধাভাজন নেতা। আমি তার ও তার অনুসারীসহ চকরিয়া-পেকুয়ার সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করবো। আল্লাহপাক যদি বিজয়ী করেন আমি উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রেখে এই এলাকার সকল মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর চেষ্টা করবো।’
এদিকে নৌকার প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার সংবাদ জানাজানি হলে জাফর আলম এমপির অনুসারীরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। তারা পৌর শহরে আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। তাদের অভিমত, গতবার নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪৩ বছর পর আওয়ামিলীগের প্রার্থী হিসেবে জাফর আলম বিজয়ী হয়েছিলেন। নানা ষড়যন্ত্রের কারণে এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ অবস্থায়ও জাফর আলম বিপুল ভোটে ফের বিজয়ী হবেন বলে তাদের অভিমত।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply