বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম লেখা প্রথম নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’। যেখানে কবি নারীকে কেবল সৌন্দর্যের আলোক না, একজন পরিপূর্ণ মানুষ এবং পুরুষের সমান অংশরূপে উপস্থাপন হয়েছে। নাটকের সূত্রে জানানো হয়, মণিপুররাজের ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে শিব বর দিয়েছিলেন যে তাঁর বংশে কেবল পুত্রই জন্মাবে। তৎসত্ত্বেও যখন রাজকুলে চিত্রাঙ্গদার জন্ম হল তখন রাজা তাঁকে পুত্ররূপেই পালন করলেন। রাজকন্যা অভ্যাস করলেন ধনুর্বিদ্যা, শিক্ষা করলেন যুদ্ধবিদ্যা, রাজদণ্ডনীতি। অর্জুন দ্বাদশবর্ষব্যাপী ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করে ভ্রমণ করতে করতে এসেছেন মণিপুরে। আর সেইখানে নাটকের মূল যাত্রা শুরু।
পুরুষবেশী চিত্রাঙ্গদা সখিদের নিয়ে শিকারের সন্ধানে বেরিয়ে পাহাড়ে দেখে মিলে অর্জুনের। অর্জুনের সামনে বীরত্ব প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে চিত্রাঙ্গদা তাঁকে আহ্বান করলেন যুদ্ধে। কিন্তু অর্জুন সকৌতুকে অবজ্ঞা করলেন তাঁকে। এদিকে চিত্রাঙ্গদার মনও উদ্বেলিত হল কাঙ্ক্ষিত বীর অর্জুনের প্রতি। পরদিন চিত্রাঙ্গদা তাঁকে “হৃদয় মন প্রাণ” নিবেদন করতে গেলেন। কিন্তু অর্জুন তাঁর ব্রহ্মচর্য ব্রতের দোহাই দিয়ে প্রত্যাখ্যান করলেন। নিদারুণ দুঃখে চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের হৃদয় হরণ করার জন্য মদনের আরাধনা করলেন। অবশেষে মদন এক বছরের জন্য চিত্রাঙ্গদাকে অপরূপা লাবণ্যময়ী রূপ দান করলেন।
আর এই নৃত্যনাট্যটি কক্সবাজারে মঞ্চস্থ করেছে ‘আগন্তুক সাংস্কৃতিক সংসদ’। শুক্র ও শনিবার এই দুইদিন ব্যাপী কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ সুভাষ হলে এই নাটকের মঞ্চায়ন হয়। আগন্তুক সাংস্কৃতিক সংসদের দ্বিতীয় নাট্য প্রযোজনা এটি। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শহিদুল শ্যানন। প্রণোদনায় ’ভিএসও’ ও ’এইট ডেজ আ উইক’ এবং সার্বিক সহযোগিতা করেছে কক্সবাজার আর্ট ক্লাব।
নাটকটির নির্দেশক শহিদুল শ্যানন বলেন, “আমরা আমাদের এই নাট্য প্রযোজনায় যে বার্তাটি দর্শকদের পৌঁছে দিতে চেয়েছি, তা হলো নারীর একমাত্র পরিচয় তার সৌন্দর্যে নয়, সর্বোপরি সে মানুষ ও পুরুষের সমান অংশী। নারী-পুরুষ একত্রে মিলে গড়ে তুলতে পারে সুন্দর এক পৃথিবী। দর্শক এই বার্তাটি গ্রহণ করলে এবং শিল্পযাত্রায় অংশগ্রহণ করলেই আমরা আমাদের এই শ্রম স্বার্থক বলে ধরে নিতে পারি।“
‘আগন্তুক’ মানেই হঠাৎ উপস্থিতি। আর ‘আগন্তুক সাংস্কৃতিক সংসদ’ গঠিত হয়েছে কক্সবাজার জেলায় চাকুরি সুবাদে অবস্থানরত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে। যারা আগে থেকেই সাংস্কৃতিক চর্চায় নিবেদিত ছিলেন।
আগন্তুক সাংস্কৃতিক সংসদ’র আহবায়ক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “নাটক দিয়ে শুরু হলেও ‘আগন্তুক’ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব শাখায়ই কাজ করার ইচ্ছা রাখে। কতটুকু পারা যাবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে সবার সহযোগিতা পেলে চেষ্টাটা অব্যাহত রাখবো- এটুকু অন্তত বলতে পারি।“
ইতিপূর্বে সংগঠনটি পূর্নেন্দু পত্রীর কাব্যমালা কথোপকথন অবলম্বনে নন্তকাল ঝিঁ ঝিঁ পোকার মতো শিরোনামে একটি নাটক প্রযোজনা করে এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সেটি প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়াও গত আগস্ট মাসে ”শোক থেকে শক্তি” শিরোনামে কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ও কবিতা এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গান-কবিতায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply