শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা চালিয়েছে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারি। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কর্মচারি হারুন অর রশিদ ওরফে নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষেই ঘটে এ ঘটনা। যা ধরা পড়ে বিদ্যালয়ের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায়।
ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ভিডিওটিতে দেখা গেছে, কর্মচারি হারুন অর রশিদ প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। ওই সময় প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন নিজের চেয়ারে বসা ছিলেন। হারুন তাঁর কাছাকাছি গিয়ে কোমর থেকে একটি ছুরি বের করেন। এসময় জহির উদ্দিন চেয়ার থেকে উঠে তাকে চেপে ধরেন। একপর্যায়ে দুজনে মেঝেতে গড়াগড়ি দেন। আট মিনিট পর জহির উদ্দিন কর্মচারি হারুনের কাছ থেকে ছুরিটি ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন এবং দরজা খুলে হারুন অর রশিদ দৌঁড়ে পালিয়ে যান। এতে হারুন অর রশিদ উল্টো আহতও হন।
পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন বলেন, হারুন অর রশিদ কি কারণে আমার ওপর হত্যার চেষ্টায় হামলা চালিয়ে তা বোধগম্য নয়। তবে সে কিছুদিন আগে চুরি করে ধরা পড়ার পর টাকা ফেরত দেয়ার ঘটনার সূত্র ধরে হামলা চালিয়েছে এটা হতে পারে। এব্যাপারে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাকে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, হারুন অর রশিদ কয়েকদিন আগে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিল আমার বিরেুদ্ধে। বিষয়টি আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত জবাব দিয়েছি। অভিযোগের বিষয়টি কি তা প্রধান শিক্ষক বলতে চাননি।
কর্মচারি হারুন অর রশিদ বলেন, জহির উদ্দিন প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকে আমার বেতন-ভাতা দিতে গড়িমসি করেন। একপর্যায়ে বেতন-ভাতা নির্বিঘ্ন করতে তাকে নয় হাজার টাকা ঘুষ দিই। এতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। আবারও ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেই ঘুষ না দেওয়ায় গত ৯ অক্টোবর আমার মাসিক বেতন ও যাবতীয় ভাতা বন্ধ করতে বিদ্যালয়ের ক্যাশিয়ারকে নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষক। এবিষয়ে আমি গত ১২ অক্টোবর পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিই। এরপর থেকে হাঁটতে-বসতে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন প্রধান শিক্ষক। এতে তাঁর রাগ উঠলে তিনি ছুরি নিয়ে প্রধান শিক্ষককে ভয় দেখাতে যান।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওমর হায়দার বলেন, পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশনে বৃহস্পতিবার ঘটনার পরপরই প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক থানায় আসেন এবং চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারি হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। যার প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ হারুন অর রশিদকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশনের চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারি হারুন অর রশিদ প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা চুরি করেছিল। যা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ার পর ফেরত দিতে বলা হয়। এই ঘটনার সূত্র ধরে প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষুদ্ধ হয় হারুন অর রশিদ। যার প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন উপর এ হামলা চালায় কর্মচারি হারুন অর রশিদ। কি কারণে এ ঘটনা তা আরও বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে বলেও জানায় ওসি মো. ওমর হায়দার।”
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী বলেন, পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশনের কর্মচারি হারুন অর রশিদ বৃহস্পতিবার ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে আসেন। তারপর শরীরে কিছু জখমের চিহ্ন ছিল, তাকে এক্স-রে দেয়া হয়। এরপর জরুরী বিভাগের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়।
এব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, আমি ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের ট্রেনিং রয়েছি। তবে পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনকে ছুরি নিয়ে মারতে গেলেন বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি ভিডিওটি দেখেছি। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক ফোন করে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ইউএনও পূর্বিতা চাকমা আরও বলেন, চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারি হারুন অর রশিদ আমাকে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। যা আমি প্রধান শিক্ষককে নোটিশ করেছিলাম। যার প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক লিখিত জবাবও দিয়েছেন। তবে, কি নিয়ে অভিযোগ ছিল তা আসলে আমার এখন মনে নেই। আমি কক্সবাজার ফিরলে অভিযোগটি দেখে জানাতে পারব।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply