সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ সৈকতে গোসলে নেমে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিখোঁজ ২ বুদ্ধাঙ্ক (IQ) এর পরিমাপ অনুযায়ী প্রতিভাবান শিশুদের বুদ্ধাঙ্ক মাত্রা চকরিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩ জীবন সংগ্রামি লাইলার কম মূল্যের সবজির দোকান শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার ভিডিও ভাইরাল মিয়ানমারে বিস্ফোরণে মুহুর্মুহু শব্দ, টেকনাফের বসত ঘরের আঙ্গিনায় এসে পড়েছে গুলি মাকে কুপিয়ে হত্যার পর থানা এসে হাজির যুবক টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ

রামু ট্রাজেডির ১১ বছর : বিচার নিয়ে হতাশ বৌদ্ধ সম্প্রদায় চান ‘শান্তি-সম্প্রীতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রামুতে বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে অগ্নিসংযোগ, হামলা, লুটপাটের সেই সাম্প্রদায়িক হামলার ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে। এই ১১ বছরে একটি মামলারও বিচার কাজ শেষ হয়নি। যা নিয়ে হতাশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। আর শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এসব মামলার দ্রæত বিচারের দাবিতে রামু লালচিং-সাদাচিং-মৈত্রবিহার প্রাঙ্গনে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুতে আলোচিত সম্প্রদায়িক সংঘাত হয়েছিল। যেদিন উত্তম বড়–য়া নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে পবিত্র কোরআন অবমাননাকর ছবি পোষ্ট করার অভিযোগ তুলে উস্কানিমূলক মিছিল সহকারে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা চালিয়ে বিহারে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এতে কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৩ টি বৌদ্ধ বিহার এবং ৩০ টি বসত বাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতের ঘটনার পর পুলিশ বাদি হয়ে এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জন এবং অজ্ঞাত আরও ১৫/১৬ হাজারজনকে আসামী করে ১৮টি মামলা করে পুলিশ। পরবর্তীতে এসব মামলায় প্রায় ১ হাজারেরও বেশি  মানুষকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ পত্র জমা দেয় পুলিশ। কিন্তু ১১ পার হলেও এখনো পর্যন্ত একটি মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় বিচার নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতারা।

কক্সবাজার জেলা দায়রা ও জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৯ টি। এরমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮ টি মামলা করেন। অপর একটি বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলা করলেও পরবর্তীতে বিবাদীদের সঙ্গে আপোষনামা দিয়ে খালাস করেছেন। বিচারাধীন ১৮টি মামলায় স্বাক্ষী না পাওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা।

রাষ্ট্রপক্ষের এই আইনকর্মকর্তা জানান, মামলায় কোনভাবেই স্বাক্ষীরা আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে রাজী হচ্ছে না। ফলে মামলা নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকট হচ্ছে। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতাও সাক্ষ্য দিতে বা হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী হচ্ছে না। তবে তিনি রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী হিসেবে এসব মামলার বিচারকার্য শেষ করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি স্বাক্ষীদের আদালতে আসার অনুরোধ জানান।

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা কেতন বড়ুয়া জানান, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে রামুতে মিছিল, মিটিং  হয়েছে। অনেকেই চেনা গেছে। কিন্তু মামলার পরবর্তী যে প্রক্রিয়া তাতে অনেক চিহ্নিত ব্যক্তি যেমন বাদ পড়েছে তেমনি নিরাপরাধ অনেকেই হয়রানী হতে দেখা গেছে। বৌদ্ধ ধর্ম শান্তির। এখন সকলেই শান্তি চান; যে সম্প্রীতিতে রামুবাসি বসবাস করছে তা যে রক্ষা হয়। যদি বিচার করতে হয় তবে চিহ্নিতদের যেন আইনের আওতায় আনা হয়।

কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও রামু কেন্দ্রিয় সীমা বিহারের আবাসিক ভিক্ষুক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, আলোচিত এ হামলার ঘটনায় এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যে সংকট তৈরী হয়েছিল তা অনেকটা ঘুছিয়েছে। এটা ধারাবাহিক রক্ষা করা জরুরী। বিচারের নামে প্রকৃত অপরাধিদের চিহ্নিত করা জরুরী। এটা করতে গিয়ে নিরাপরাধ কেউ হয়রানীতে শিকার হোক তা কোনভাবেই কাম্য নয়।

এদিকে, এ ঘটনার ১১ বছর অতিক্রান্তে শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এসব মামলার দ্রæত বিচারের দাবিতে রামু লালচিং-সাদাচিং-মৈত্রবিহার প্রাঙ্গনে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ।

এ সময় বৌদ্ধ নেতা ও ইউপি সদস্য স্বপন বড়ুয়া, রাজেন্দ্র বড়ুয়া, বিপুল বড়ুয়া আব্বু, অর্ক বড়ুয়া, জিৎময় বড়ুয়াসহ অন্যন্যরা বক্তব্য রাখেন।

বৌদ্ধ যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল এই রামু। কিন্তু ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এক রাতেই পুড়ে গেছে আমাদের হাজার বছরের গর্বের ধন সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি। আমরা বৌদ্ধ সম্প্রদায় শান্তিকামী জাতি। আমরা শান্তি চাই। ঘটনার পর পর সরকার ক্ষতিগ্রস্থ বৌদ্ধ বিহার ও বসতঘর পূণ:নির্মাণ করে দিয়েছে। সময়ের ব্যবধানে এবং সরকারের প্রচেষ্ঠায় বৌদ্ধ সম্প্রদায় সেই হারানো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বর্তমানে অনেকটা ফিরেছেও। কিন্তু সেই ঘটনার ১৮টি মামলার একটির বিচার কাজ শেষ হয়নি। এটাই আমাদের জন্য আশংকার বিষয়। কারণ অপরাধীর শান্তি না হলে ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা থেকেই যায়।

এর আগে দিনটি উপলক্ষে সংঘদান, অষ্ট পরিষ্কার দান, ধর্ম সভায় দেশ জাতীর মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং জগতের সকল প্রাণীর সুখ শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা করা হয়।

সংঘদান ও ধর্ম সভায় সভাপতিত বিজয় রক্ষিত মহাথেরো। প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন সত্যপাল মহাথেরো। ধর্মালোচনা করেন শিলপ্রিয় মহাথরে, প্রজ্ঞাতিলক থেরো, প্রজ্ঞা বিনয় ভিক্ষু প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888