শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৮ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি : মহেশখালীতে বাস্তবায়ন আধিন সিঙ্গেল পয়েন্ট ম্যুরিং প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে ৯৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামি অক্টোবর মাসেই এই প্রকল্পের পরীক্ষামুল কমিশনিং শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল খালাসে আর লাগবে না লাইটার জাহাজ। আর ১২ দিন নয়; তেল খালাস হবে মাত্র ৪৮ ঘন্টায়। এতে বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। অক্টোবরেই গভীর সমুদ্রে নোঙ্গর করা বড় জাহাজ থেকে পাইপলাইনে এসপিএম-এ আসবে জ্বালানি তেল।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত জানিয়েছেন, এসপিএম প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক। ছয়টির মধ্যে প্রতিটি ৬০ হাজার কিলোলিটার ধারণ ক্ষমতার তিনটি ট্যাঙ্কে অপরিশোধিত তেল এবং বাকি প্রতিটি ৩৬ হাজার কিলোলিটার ধারণ ক্ষমতার তিনটি ট্যাঙ্কে সংরক্ষণ করবে ডিজেল। একই সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে পাম্প স্টেশন, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর, মিটারিং স্টেশন, ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম। যা এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান।
তিনি জানান, দেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী মেগাপ্রকল্প ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প খুব শিগগিরই চালু হতে যাচ্ছে। প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বা কমিশনিংয়ের কাজ পুরোপুরি অক্টোবরের শেষের দিকে শুরু হবে।
প্রকৌশলী মো. শরিফ হাসনাত বলেন, জ্বালানি তেল সংরক্ষণের জন্য বিশালাকার ৩টি ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্ক ও ৩টি ডিজেল অয়েল ট্যাঙ্ক করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্রুড অয়েল ট্যাঙ্কে ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার মেট্রিক টন করে ৩টি ট্যাঙ্কে ১২৬ মেট্রিক টন এবং প্রত্যেকটি ডিজেল অয়েল ট্যাঙ্কে ধারণ ক্ষমতা ২৬ হাজার মেট্রিক করে ৩টি ট্যাঙ্কে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন মজুদের সক্ষমতা রয়েছে। সবমিলিয়ে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লক্ষ ৪ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেল মজুদের সক্ষমতা বাড়ছে।
মো. শরিফ হাসনাত আরও বলেন, প্রথমে ক্রুড অয়েল কমিশনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হবে এবং তার পরপরই ডিজেল অয়েল কমিশনিংয়ের কার্যক্রম শুরু হবে এভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করছি, যথাসময়ে এটা সম্পন্ন করতে পারব।
চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড বর্তমানে দেশের প্রথম এসপিএম সিস্টেম তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ও চীনের জিটুজি প্রকল্পের আওতায় ৮৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এসপিএম। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি তেল পরিবহনেও নৈরাজ্য কমানো সম্ভব এই প্রযুক্তিতে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, গভীর সাগর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী ট্যাঙ্ক পাম্প স্টেশনে তেল মজুদ করা হবে। যেটি মাধ্যমে তেল আনা হবে সেটি হচ্ছে এসপিএম বয়া, যা গভীর সাগরে স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে ব্যবস্থায় জ¦ালানি তেল বড় জাহাজ থেকে খালাস করতে ১২ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। এটা বড় জাহাজ থেকে আবার লাইটার জাহাজ এবং এরপর অনেকটা মানুষ দিয়ে আনলোড করতে হয়। যার সময় ও অর্থ দুটিরই অপচয় হয়। এই এসপিএম প্রকল্পের মাধ্যমে যার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এই ব্যবস্থায় থাকবে না সময় ও অর্থের অপচয়। পুরো ব্যবস্থাপনাটা অটোমেটিক হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা সময় যদি বলি, যেখানে জ¦ালানি তেল খালাস করতে ১২ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতো, সেখানে মাত্র ৪৮ ঘন্টায় গভীর সাগরে বড় জাহাজ থেকে বিশেষ বয়া’র মাধ্যমে সাগরের তলদেশ দিয়ে পাইপলাইনের সাহায্যে মহেশখালীতে স্থাপিত রির্জাভ ট্যাঙ্কে মজুদ করা যাবে। আর্থিক ব্যয়ের কথা যদি বলা হয় সেক্ষেত্রে বছরে নূন্যতম ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। এই প্রজেক্টের যে ব্যয় তা আগামী ৪ থেকে ৫ বছরের মধ্যে উঠে আসবে।”
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ আরও বলেন, এসপিএম প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আগামী অক্টোবরের শেষের দিকে কমিশনিংয়ের দিকে যাব। কমিশনিংটা শেষ হলে পরে আশা করি, নভেম্বরে বা ডিসেম্বরের দিকে পুরো অপারেশনাল কাজে আমরা চলে যেতে পারব।
এর আগে গত ৩ জুলাই সমুদ্রে জাহাজ থেকে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের (এসপিএম) মাধ্যমে পরীক্ষামূলক তেল খালাস কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছিল। মাত্র ৫ ঘণ্টা পর এসপিএমের সঙ্গে জাহাজের সংযোগকারী পাইপলাইনে সমস্যা দেখা দিলে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ সমস্যা বা জটিলা শেষ করে প্রকল্পটি অক্টোবরে কমিশনিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply