বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪ চকরিয়ায় ফেরিওয়ালার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

টেকনাফ স্থলবন্দর : বাণিজ্য কমলেও ডলারের বাড়তি দামে রেকর্ড রাজস্ব

বিশেষ প্রতিবেদক : টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমারে পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। রপ্তানি কমলেও এ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে। ফলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে ৬২১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের আমদানি তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে প্রায় ১ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। পরিমাণের দিক থেকে আমদানি কমলেও ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়ায় টাকার অঙ্কে আমদানি অনেক বেড়েছে। আবার কিছু কিছু আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক-করও বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে এ বন্দরে। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৬২১ কোটি টাকা, যা এ বন্দরের ২৮ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস পর থেকে দেশে ডলার–সংকট দেখা দেয়। টেকনাফ দিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঋণপত্র বা এলসি প্রথা চালু নেই। তাই এ দেশের ব্যবসায়ীরা ফরেন ডিমান্ড ড্রাফটের (এফডিডি) মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করেন। রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক এই এফডিডি ইস্যু করে। ব্যাংক দুটি নির্ধারণ করে দিচ্ছে পণ্য আমদানির সুবিধা। ব্যাংক দুটি আদা, রসুন ও পেঁয়াজ ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আমদানির জন্য এফডিডি ইস্যু করছে না। এর মধ্যে গত ৩ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এফডিডি ইস্যু বন্ধ ছিল এবি ব্যাংকের।

সোনালী ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মঈনুল হাসান ও এবি ব্যাংকের টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মনজুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো এফডিডি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা এ এস এম মোশারফ হোসেন বলেন,‘দেশের ডলার সংকটের মধ্যেও কাস্টমস শুল্ক কমিশনার ও অতিরিক্ত কমিশনারে নির্দেশনায় টেকনাফ শুল্কষ্টেশনের কর্মকর্তারা নিরালসভাবে কাজ করে রেকর্ড পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে সক্ষম হয়েছে।তবে রপ্তানি কমে যাওয়ায় তা বাড়াতে আমরা ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করছি।’

স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩ লাখ মার্কিন ডলারের সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ডলারে। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪১ দশমিক ২৩ শতাংশ। রপ্তানি কমে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বন্দরের আট শতাধিক শ্রমিক। আর স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অলস সময় কাটাচ্ছেন।

স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলী আজগর বলেন, ডলার–সংকটের কারণে মিয়ানমার থেকে পণ্যসামগ্রী আসছে না। তবে কিছু কিছু আদা এলেও শ্রমিকেরা পর্যাপ্ত কাজ পাচ্ছেন না। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম সংকটে আছেন তাঁরা।

আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে যেসব পণ্য আমদানি হয়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হিমায়িত মাছ, সুপারি, আদা, বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ, শুঁটকি, নারকেল, আচার ইত্যাদি। আর রপ্তানি পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আলু, প্লাস্টিক পণ্য, তৈরি পোশাক, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস ও কোমল পানীয়। আগে ওষুধ, সিমেন্ট, টিউবওয়েল রপ্তানি হলেও এখন তা কমে এসেছে। এতে রপ্তানিও অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে।ডলার–সংকটের পাশাপাশি মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণেও দেশটিতে রপ্তানি কমেছে।

টেকনাফ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পেয়েছে শুকনা সুপারি থেকে। সুপারি আমদানি থেকে গত অর্থবছরে ৩২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। অর্থাৎ এ বন্দরের আদায় হওয়া মোট রাজস্বের প্রায় অর্ধেকই এসেছে একটি পণ্য থেকে। এরপর আদা আমদানি থেকে ৭৭ কোটি, শুঁটকি মাছ থেকে প্রায় ৬৭ কোটি ও হিমায়িত মাছ থেকে ৪৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এনবিআর গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে টেকনাফ বন্দর থেকে ১২৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

স্থানীয় রপ্তানিকারক মো. উমর ফারুক বলেন, ২০১৭ সালে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসায় দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা অনেক কমে যায়। অন্যদিকে রোহিঙ্গারা যেসব পণ্য বেশি ব্যবহার করে, সেগুলোর আমদানি বেড়েছে। সেসব পণ্যের মধ্যে সুপারি, আদা, শুঁটকি উল্লেখযোগ্য।

টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, আমদানি বাড়লেও ডলার-সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। কারণ, পর্যাপ্ত এফডিডি সুবিধা মিলছে না।

মাছ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুফিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এম কায়সার জুয়েল বলেন, ড্রাফট–সংকটের কারণে মাছ আমদানি কমে গেছে। চাহিদা অনুযায়ী ড্রাফট পাওয়া গেলে মাছ আমদানি থেকে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় সম্ভব হতো।

স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট টেকনাফের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কয়েক মাস আগেও এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন মিয়ানমার থেকে ৩০-৪০টি পণ্যবাহী কার্গো ট্রলার ও জাহাজ আসত। সেই সংখ্যা কমে ৮-১২টিতে নেমেছে। আগে বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিয়ে ৮-১০টি ট্রলার গেলেও এখন যাচ্ছে ১-৩টি ট্রলার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888