শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭ পূর্বাহ্ন
জাতীয় ডেস্ক : বাঙালির মুখচ্ছবি প্রস্ফুটিত যে উৎসবে, সেই পহেলা বৈশাখ দুয়ারে দাঁড়িয়ে, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বরণে প্রস্তুত গোটা দেশ।
শুক্রবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশ মেতে উঠবে উৎসবে; রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন দেবে সুদিনের পথে এগিয়ে চলার মন্ত্র; চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা জানাবে শান্তির আবাহন।
সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর আয়োজনে তপ্ত এই বৈশাখ বর্ণিল হবে উৎসব।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দুজনের শুভেচ্ছা বাণীতেই প্রত্যাশা সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগোনোর।
করোনাভাইরাস মহামারীর খাঁড়া কাটিয়ে এবার বিধি-নিষেধের বেড়াজাল ছাড়াই নতুন বছর বরণ করবে বাঙালি।
পঞ্জিকার পাতা উল্টে ১৪২৯ থেকে ১৪৩০ সাল আসা সাধারণ একটি ঘটনা হলেও বাঙালির জীবনে এই সাধারণ ঘটনার শুরুই হয় ভিন্ন মাত্রা নিয়ে।
কৃষি উৎসব বা রাজস্ব আদায়ের বিষয় হিসেবে বৈশাখকে সামনে এনে বাংলা সাল প্রবর্তনের পর বাঙলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন প্রভাবিত করলেও তা রাজনৈতিক হয়ে ওঠে পাকিস্তান শাসনামলে।
পাকিস্তানের সেনাশাসক আইয়ুব খানের আমলে যখন বাঙালির বাঙালিয়ানা নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করা হয়, তখন এই বর্ষবরণ উৎসব হয়ে উঠেছিল বাঙালির আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখার রাজনৈতিক হাতিয়ার। এই চেতনাই পরে বাংলাদেশকে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতার বন্দরে পৌঁছে দেয়।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশকে পরেও নানা সংকটে দিশা দেখিয়েছে পহেলা বৈশাখের উৎসব; সেই কারণেই এই দেশকে উল্টো পথে নেওয়ার চেষ্টায় বার বার আঘাত এসেছে এই উৎসবে।
তার ধারাবাহিকতায় এবারও চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় হামলার হুমকি দিয়ে চিরকুট এসেছে, যদিও তা আমলে নেওয়ার মতো নয় বলে আশ্বস্ত করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠন রামেন্দু মজুমদার মনে করেন, সাম্প্রদায়িকতা নির্মূলের লড়াইয়ে এই বৈশাখী উৎসবকে ভিত্তি ধরেই এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পহেলা বৈশাখ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার বার্তা দিয়ে যায়, সকল মানুষকে এক সুতোয় বেঁধে পৃথিবীতে সাম্যের জয়গান শোনায়।
“বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, চারদিকে অসাম্য-সাম্প্রদায়িকতা যেভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।”
কৃষ্ণ সাগর পাড়ের যে যুদ্ধ গোটা বিশ্বকে টলমল করে দিয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে বৈশাখের উৎসবের মধ্য দিয়ে শান্তির আহ্বানও জানান রামেন্দু মজুমদার।
তিনি বলেন, “এবারের বাংলা নববর্ষে এটাই চাইব, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ বন্ধ হোক, শান্তির সুবাস ছড়াক। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা চিরতরে নির্মূল হোক। মানবিক শুভবোধের জয় হোক।”
পাকিস্তান আমলে ছায়ানট সংস্কৃতি কেন্দ্র রমনার বটমূলে প্রতিবাদী উচ্চারণে বৈশাখ বরণের যে আয়োজন করেছিল, তা কালে হয়ে উঠেছে নগরে এই উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ। তার সঙ্গে পরে যুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা।
চৈত্রসংক্রান্তির পর শুক্রবার বৈশাখের প্রথম প্রভাতে বরাবরের মতোই রমনা বটমূল সরব হবে ছায়ানটের গানে, সূচনা হবে সূচনা হবে নগরে বর্ষবরণের উৎসব।
নববর্ষের প্রথম প্রভাতে, সত্য-সুন্দরকে পাওয়ার অভিলাষী ছায়ানটের আহ্বান, ‘দূর করো অতীতের সকল আবর্জনা, ধর নির্ভয় গান’।
ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমেদ লিসা বলেন, কোভিড মহামারীকে দমানো গেলেও বাঙালি এখন নতুন সংকটের মুখোমুখি।
“শুধু এই ভূখণ্ডই নয়, বিশ্বব্যাপী ক্ষয়ে চলেছে মানবতা, দেশে ক্রমান্বয় অবক্ষয় মূল্যবোধের। আমরা আশাহত হই না, দিশা হারাই না, স্বপ্ন দেখি হাতে হাত রেখে সকলে একসাথে মিলবার, চলবার।”
“সবাই মিলে সুন্দর দিন কাটানোর সময় ফেরাবে; পরম বিশ্বাসে বলবে- সবারে বাসরে ভালো, নইলে মনের কালো ঘুচবে নারে। শুভ কর্মপথে আঁধার কাটিয়ে আলোর সন্ধানে সুদিনের পথে চলব আমরা, বাঙালিকে বলব- হাল ছেড় না,” বলেন তিনি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply