রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব করেছেন পরিষদের ৯ জন সদস্য। ৬ টি অভিযোগ এনে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিতভাবে এই অনাস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদন হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষরিত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাবটি আমার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। আবেদনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর হচ্ছে।
বাহারছড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল হক, ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিউল কাদের, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আমান উল্লাহ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হাফেজ আহমদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নুরুল ইসলাম, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ইলিয়াছ, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিক, সংরক্ষিত ৪,৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য মোবিনা খাতুন ও সংরক্ষিত ৭,৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য খালেদা বেগম স্বাক্ষরিত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবটি ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়েল-২০১৩ ইং এর ৩৪ ধারার (৪) উপধারার (খ) ধারা মতে করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ‘স্ব স্ব এলাকার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর বিধি মোতাবেক ইউপি সদস্য হিসাবে শপথ গ্রহণ করার পর থেকে বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সমস্ত কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদ ম্যানুয়েল-২০১৩ ইং অনুযায়ী পরিচালনা করবার জন্য চেয়ারম্যানকে বারবার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামত পরিষদ পরিচালনা করছেন। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সমস্ত আইন কানুনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলী প্রদর্শন করে পরিষদকে তার পারিবারিক অফিস হিসাবে ব্যবহার করে যাচ্ছে। সরকারের বরাদ্ধ অনুদান নিয়ম বর্হিভূতভাবে আত্মসাৎ ও স্বেচ্ছাচারিতামূলকভাবে আত্মীয় স্বজনকে বিলি-বণ্টন করছেন।’
আবেদনটিতে ৬ টি অভিযোগ অনা হয়েছে। অভিযোগ সমুহ হল, চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামত সমন্বয় মিটিং করেন। যার কোন রেজুলেশন ইউনিয়ন পরিষদে রক্ষিত নাই। জেলেদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত চাউল আত্মসাৎ, কাবিখা প্রকল্প, টি আর প্রকল্পসহ যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজের সভাপতি হিসাবে একজন ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব প্রদান করলেও চেয়াম্যান তার কথামত কাজ করতে বাধ্য করে। এতে উন্নয়ন প্রকল্পের সমস্ত টাকা চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে আত্মসাৎ করেন। জনগণের অধিকার হিসাবে স্বীকৃত, জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, মৃত্যু সনদ, প্রত্যায়নপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান সরকারী বিধি বিধান অনুসরণ না করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। যার কারণে ইউনিয়নের সাধারণ জনগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। সালিশ বিচারে ঘুষ গ্রহণ, মোটা অংকের টাকার বিনিময় রোহিঙ্গা নাগরিক সনদ প্রদান, পরিষদের তহবিল থেকে কোন ইউপি সদস্যদের সম্মানি ভাতা প্রদান না করা, ভিজিডি চাউল বিতরণে স্বেচ্ছাচারিতামূলক তালিকা প্রণয়ন ও নিজের আত্মীয় স্বজনকে ভিজিডি চাউল প্রদানসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে সকল ইউপি সদস্যদেরকে খারাপ ব্যবহার করেন। এর প্রতিবাদী করলে গালাগালি সহ হত্যার হুমকি দেন তিনি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন বাদী হয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। যার নম্বর ৫৯/২০১৯ ইং। উক্ত মামলাও বিষয়টি সত্য প্রমাণিত হওয়ায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। হাজতবাস করার পর জানুয়ারি মাসে জামিনে মুক্তি লাভ করেন তিনি।
আবেদনে অনাস্থা প্রস্তাবটিতে গ্রহণ করে তদন্তপূর্বক চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবী জানান পরিষদের এই ৯ সদস্য।
প্রসঙ্গত, ৯ টি ওয়ার্ড ও ৩ টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডটি নিয়ে গঠিত পরিষদটির ৯ সদস্য অনাস্থা জানানোর পর চেয়ারম্যান সহ ৪ জন অবশিষ্ট রয়েছেন।
এব্যাপারে বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কয়েকজন মেম্বার মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply