রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
টেকনাফে বস্তাবন্দি শিশু হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার ২ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শহীদদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও অনুদান প্রদান করেছে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ কুতুবদিয়ায় বিশ্ব নদী দিবস পালিত টেকনাফে নিখোঁজ মেয়ে শিশুর বস্তিাবন্দি মরদেহ উদ্ধার ৩৫ হাজার ইয়াবা সহ পুলিশ কনস্টেবল সহ আটক ২ সেনা কর্মকর্তারা ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত : মব জাষ্টিস নিন্দনীয় ৪৮ মামলার আসামী জিয়াবুলের আস্তানায় যৌথ বাহিনীর অভিযান : অস্ত্র উদ্ধার টেকনাফে ৩১ দখলদারের থাবায় ১৪ বছরে নিশ্চিহ্ন ৩০০ বছরের পুরোনো বৌদ্ধ বিহার আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কার পেল সায়মন বিচ রিসোর্ট ও সায়মন হেরিটেজ টেকনাফে ৫ কোটি টাকার মূল্যের ১ কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার ১

থাইল্যান্ডে কারাবন্ধি মহেশখালীর ৩ ব্যক্তির স্বজনদের আকুতি

বিশেষ প্রতিবেদক : মোজাহের মিয়া, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পানিরছড়া এলাকার মৃত হোছন আলীর ছেলে। দালালের প্রলোভনে নিজের ভাগ্য বদলের আশায় ২০১৩ সালে টেকনাফের শামলাপুর থেকে অবৈধভাবে যাত্রা পথে যাত্রা দিয়ে ছিলেন মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু না স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় যাত্রা দেয়া মোজাহেরের গন্তব্য কোথায় তা জানতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা।

মোজাহের মিয়া ঘর থেকে বের হওয়ার পর স্ত্রী জোহরা খাতুনকে জানিয়ে ছিলেন, কাজের খোঁজে যাচ্ছেন। দ্রæত ফিরবেন। কিন্তু এর কয়েকদিন পর মোহাজার মিয়া স্ত্রীকে ফোন করে জানান তিনি থাইল্যান্ডে বন্দি। তাৎক্ষণিক দুই লাখ টাকা পাঠাতে হবে।

স্ত্রী জোহরা খাতুন বলেন, ‘তিন দফায় ১ লক্ষ ৮০ টাকা পাঠাই। পরে বাড়ি-ভিটে বন্ধক ও ছেলের যৌতুকের ৮০ হাজার টাকা পুনরায় দালালের কাছে পাঠানোর দুমাস পর খবর আসে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। আমরা ধরে নেই তিনি বেঁচে নেই। এরপর বাড়িতে কুলখানিসহ ধর্মীয় আচার শেষ করি।’

কিন্তু স্ত্রী জোহরা স্বামীর মৃত্যু হয়েছে এমন বিশ্বাস রাখতে পারেননি। ফলে ৯ বছর পর ২০২২ সালে থাইল্যান্ড থেকে জেল ফেরত টেকনাফের ২ ব্যক্তি জানালেন মোজাহের জীবিত আছেন এবং থাইল্যান্ড কারাগারে বন্ধি।

শুধু মোজাহের নয়, মহেশখালীর আরও ২ ব্যক্তি ওখানে বন্ধি আছেন। এ ২ জন হলেন, মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়ার হোছন আলীর ছেলে মকসুদ মিয়া ও হোয়ানক ইউনিয়নের জৈয়ারকাটার এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে আজিজুল হক।

মোজাহের মিয়ার মতো মকসুদ মিয়া ও আজিজুল হক সাগর পথে মালয়েশিয়ায় যাত্রা দিতে দিয়েছিলেন একই দিন এক সঙ্গে।

থাইল্যান্ড ফেরত দুই ব্যক্তি তথ্যের সুত্রধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশস্থ থাই দূতাবাসের দ্বারস্থ তিন পরিবার।

আবেদনে সোনাদিয়া দ্বীপের নুরুল কবির বলেন, ভাই মকসুদ মিয়া নয় বছর আগে দালালের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে থ্যাইল্যান্ডে যান। দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকায় তারা জানতো না সে জীবিত না মৃত? তবে ২০১৯ সালে এক ব্যক্তি বলেন মকসুদ মিয়া জীবিত। সে থাইল্যান্ডের ‘বাং কেওয়াং’ সেন্ট্রাল জেল অথবা ‘ওয়ানকখা’ কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় বন্দি। তার ওয়ার্ড নং-৭৭৮৮, বডি নম্বর-০০৯৫২৩৬৮৪। মকসুদ প্রদানকৃত সাজা ভোগ করেছেন।

অপর দুই আবেদনে হোয়ানক ৯নং ওয়াডের জৈয়ারকাটার মোহাম্মদ ছিদ্দিক বলেন, ভাই আজিজুল হকের ওয়ার্ড নং-৭৭০০, বডি নম্বর-০০৯৫২৩৪৬। এবং বারঘর পাড়ার জোহরা খাতুন বলেন, স্বামী মোজাহের মিয়ার বডি নম্বর-০২৫২৫০৪৮৬।

এদিকে স্বজনেরা জানিয়েছে, ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর করা আবেদনের ছয় মাসেও ফলাফল শুন্য। অপরদিকে স্বজনদের অপেক্ষায় থাকা ছাড়া বিকল্পও নেই।

এ ব্যাপারে ব্র্যাকের অভিবাসন কমসুচির কেস ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা (থাইল্যান্ড) রায়হান কবির বলেন, ‘মহেশখালীর পাঁচজনের আবেদন পেয়েছি। তাদের সন্ধান এবং ফিরিয়ে আনতে সরকার কাজ করছে।’

নুরুল কবির বলেন, ‘সাগরে ১৩ দিন ভাসার পর মকসুদ মিয়াদের বহনকারী বোটটি থাইল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছে। ওই সময় এক দালাল ফোন করে ভাইয়ের হাতে ফোন দেন। এবং ২ লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। পরে সে আমাকে অন্তত ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে, কিন্তু আমার কাছে কিছুই ছিল না।’

নুরুল কবির বলেন, ভাইকে মুক্ত করতে সহায় সম্পদ, ১৫টি ছাগল ও ৫টি গরু বিক্রি করে তিন দফায় ২ লক্ষ টাকা শোধ করি। কিন্তু পুনরায় দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিতে না পারায় যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় দালালেরা।’

‘দুই বছর খোঁজ না পাওয়ায় “ভাই হাত থেকে হেরে গেছে” বাক্যে মনকে সান্তনা দিই। তার স্ত্রীও অন্যের সাথে সংসার শুরু করে।’

আজিজুল হকও তিন মাস পর ভাই ছিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি ছিদ্দিককে তাৎক্ষণিক ২ লাখ টাকা পাঠাতে বলেছিলো, কিন্তু ছিদ্দিক ভাইয়ের জন্য কিছুই পাঠাতে পারেননি।

ছিদ্দিককে আজিজুল হক ওই সময় বলেছেন, ‘দয়া করে দালালের কাছে অন্তত কয়েক হাজার টাকা পাঠাও, না হলে আমাকে মারতেই থাকবে।’

ছিদ্দিক বলেন, ‘এরপর আমার শেষ ছাগলটি বিক্রি করে ২ লাখ টাকা জোগাড় করি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরে চকরিয়ার দালাল জসিম উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে দুমাস পর সেও নিখোঁজ। কয়েক বার বাড়িতে গিয়েও হদিস পাইনি। আমরাও নিয়তির কাছে ছেড়ে দিই।’

২০১৪ সালে মালয়েশিয়া যেতে চান টেকনাফের কামাল হোসেন (২৮)। যাত্রাপথে থাইল্যান্ড সীমান্তে আটক হয়ে দেড় বছর কারাভোগ শেষে ২০১৫ সালে দেশে আসেন।

কামাল হোসেন বলেন, ‘কারাগারে কুতুবদিয়ার একব্যক্তির সাথে আমার পরিচয় ঘটে। ওই সময় মহেশখালীর তিনজনও সাথেও ছিল। ওই ব্যক্তি জেলখেটে দেশে ফেরার সময় পরিবারের ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ করতে বলি। পরে আমি দেশে এলে মহেশখালীর তিন ব্যক্তির বডি ও কয়েদি নম্বর নিয়ে আসি। এবং তাদের পরিবারকে জানাই।’

মকসুদের ভাই নুরুল কবির বলেন, ‘কামাল হোসেনের দেয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক, ইউএনওর সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করি, কিন্তু লাভ হয়নি।’

‘তবে দ্বিতীয় দফায় মোস্তাক আহমদ নামের আরেক ব্যক্তি ছবি, কয়েদি ও বডি নম্বর নিয়ে আসেন। আমার মা সেই ছবি দেখে মকসুদ মিয়াকে চিনতে পারেন।’

আজিজুল হকের ভাই ছিদ্দিক বলেন, ‘মোস্তাক আমার ভাইয়ের ২টি ছবি দেখান। ছবিতে ভাইকে টুপি ও কয়েদিদের সবুজ পোশাক পরিহিত। আমার মা ছবিটা দেখে অত্যন্ত খুশি হন।’

ছিদ্দিক বলেন, ‘আমার ভাই মোস্তাককে তার মুক্তির পর যোগাযোগ এবং ছবিটা দিতে অনুরোধ করেন।’

মোজাহের মিয়ার স্ত্রী জোহরা খাতুন বলেন, ‘২০১৯ সালে ব্যাংকক কারাগার থেকে মোস্তাক আহমদ ফিরে আসার চিত্র তুলে ধরার পর আমি হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন করি। এবং কক্সবাজারের উপ-কমিশনারের কাছেও চিঠি পাঠাই। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার ও পুলিশের বিশেষ শাখা এ ঘটনার সত্যতা যাচাই করে।’

জোহরা বলেন, ‘আমার মন বলছে, বেঁচে (স্বামী) আছে। আমি কামাই খেতে চাই না, স্বামীর চেহারা দেখে মরলে বুক মাটিয়ে খাবে।’

এদিকে থাইল্যান্ডের মানবাধিকার সংস্থার সূত্ররা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রতিনিধিদের কাছে নিশ্চিত করেছে, অন্তত ১৭ জন বাংলাদেশি কয়েদি ‘বাং কেওয়াং’ কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল খাটছেন এবং ক্লং প্রেম কেন্দ্রীয় কারাগারে আরও ৭ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। সাথনে অবস্থিত ব্যাংককের ইমিগ্র্যান্ট ডিটেনশন কেন্দ্রে আরও ১৮ বাংলাদেশি আটক আছেন।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অনেকেই সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া গেছেন। আমরা জানি না কতজন বাংলাদেশি সেখানে কারাদন্ড ভোগ করছেন এবং নিখোঁজ আছেন। দূতাবাসগুলোর উচিত খোঁজ নিয়ে দেখা।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888