শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের উদ্যোগে মঙ্গলবার কক্সবাজারের স্পা সেন্টারে কর্মরত সদস্যদের সাথে এইডস সচেতনতা শীর্ষক অনুষ্ঠিত এক কর্মশালা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মোঃ জিল্লুর রহমান বলেছেন, স্পা সেন্টারগুলো এইডস ছড়ানোর অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। স্পা সেন্টারের নামে পতিতাবৃত্তি করা বা অবৈধ কার্যক্রম কোনভাবেই আমরা বরদাশত করব না। এ লক্ষ্যে প্রতিটি স্পা সেন্টারে কর্মি নিয়োগের ক্ষেত্রে এইচআইভি পরিক্ষা করিয়ে তাদের নিয়োগ দিতে হবে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা যায়।
কিন্তু এ কর্মশালার পর প্রশ্ন উঠেছে স্পা সেন্টারে যৌনবৃত্তি বৈধ কিনা? আর অবৈধ হলে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ বির্তকিত এই কর্মশালার আয়োজন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত।
কক্সবাজার জলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখার তথ্য মতে, কক্সবাজারের পর্যটন জোন কেন্দ্রিক বর্তমানে ১৬ টি স্পা সেন্টার চালু রয়েছে। এ গুলো হল, স্মার্ট স্পা (প্রতিক জিনিয়া, ২য় তলা, কলাতলি), জারা স্কাই স্পা (রয়েল পার্ক রিসোর্ট, সৈকত পাড়া, কলাতলি), এনজেল টার্চ স্পা (হোটেল হোয়াইট বিচ, ৩য় তলা, কলাতলি), গোল্ডেন স্পা (হোটেল সিলভিয়া, সুগন্ধা মোড়, কলাতলি), সী সেভেন স্পা (হোটেল লেগুনা বিচ, ২য় তলা, সুগন্ধা মোড়, কলাতলি), চায়না রোজ স্পা (আলফা ওয়েভ, ৫ তলা, সুগন্ধা মোড়, কলাতলি), ওয়েন্ডি স্পা (ওয়েন্ডি ট্যারেক হোটেল, ২য় তলা, কলাতলি), হংকং স্পা (হোটেল আইল্যান্ডিয়া, ২য় তলা, কলাতলি), সী প্রিন্সেস স্পা (সী প্রিন্সেস হোটেল, ২য় তলা, সুগন্ধা বিচ), এ্যারোমা থাই স্পা (হোটেল ডায়নামিক, কলাতলি মোড়, কলাতলি), ডিলাক্স স্পা (হোটেল ওয়াল্ড বিচ, ডলফিন মোড়, কলাতলি), সুইডিশ থাই স্পা (হোটেল ওয়াল্ড বিচ, ডলফিন মোড়, কলাতলি), কক্সটুডে স্পা (হোটেল কক্স টু ডে, লাবণী), ওশান স্পা (হোটেল ওশান প্যারাডাইশ, কলাতলি), অভিসার স্পা (হোটেল অভিসার, লাবনী মোড়), রয়েল স্পা (রয়েল টিউলিপ, ইনানী)।
অভিযোগ রয়েছে, এসব স্পা সেন্টারে স্পার আড়ালে পতিতাবৃত্তি চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বিভিন্ন সময় পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট অভিযান চালিয়ে এসব স্পা সেন্টার থেকে জেল জরিমানাও করা হয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছেন, কক্সবাজার এইডস এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এআরটি অ্যান্ড এইচআইভি শাখার তথ্য মতে, ২০১৫ সাল থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি স্ক্যান করার কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গা আসার পর ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে ৫৩৮ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে ৩৯৫ জনই রোহিঙ্গা।
তবে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত কক্সবাজারে এইডস রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৫৪ জনে। তার মধ্যে ৭৭১ জনই রোহিঙ্গা। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭১০ জন, যেখানে রোহিঙ্গা ৬১২ জন এবং বাঙালি রয়েছেন ৯৮ জন। এ পর্যন্ত এইডস আক্রান্ত হয়ে ৬১ জন রোহিঙ্গা ও ৫৭ জন বাঙালির মৃত্যু হয়েছে।
এ পরিস্থিতি মঙ্গলবার ট্যুরিস্ট পুলিশ এইডস বিষয়ক কর্মশালাটির আয়োজন করে। যেখানে ১৬ টি স্পা সেন্টারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
যেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, এটি একটি শিল্প, এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আপনাদের সবাইকে সততার সাথে প্রকৃত স্পা যাকে বলে সেটা দিতে হবে। আইনী কাঠামোর মধ্যে কিভাবে আনা যায় সে ব্যাপারে আমরা সহায়তা করব। তাছাড়া স্পা সেন্টার সঠিকভাবে চললে এইডস হবার কোন চান্স থাকার কথা নয়। ট্যুরিস্ট পুলিশ স্পা সংশ্লিষ্ট অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে।
কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, স্পা পর্যটনের জন্য জরুরী। তাই বলে অবৈধ যৌনবৃত্তির বৈধতা দেয়া যাবে না। যদি আইনের কাঠামোর মধ্যে স্পা সেন্টার পরিচালিত না হয় তাকে তা আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি জানান, যেসব স্পা সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে তার বেশিভাগ কোন বৈধতা নেই। স্পার আড়ালে ওখানে অবৈধ কর্মকান্ড চালানো অভিযোগ রয়েছে। এ পরিস্থিতি এইডস বিষয়ক কর্মশালা তাদের নিয়ে কেন আয়োজন হল তা এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন তৈরী হয়।
এ কর্মশালা স্পা কর্মীদের জন্য অপমানজনক বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু। তিনি জানান, স্পার সাথে এইডসের সর্ম্পক থাকার কথা না। কিন্তু ট্যুরিস্ট পুলিশের আয়োজিত কর্মশালাটি পুরো স্পা শিল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যারা ওখানে কাজ করেন তাদের নিয়ে তৈরী করা হয়েছে সন্দেহ। ট্যুরিস্ট পুলিশ স্পার আড়ালে যৌনবৃত্তিকে মেনে নেয়ার কোন চেষ্টা কিনা এটা তা এখন প্রশ্ন উঠবে।
বিএমএ কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, স্পা কোনভাবেই এইডস এর কারণ হতে পারে না। যৌন সঙ্গম, আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ, মাদক সেবণের ক্ষেত্রে ইঞ্জেকশন সিরিজের ব্যবহার এইডস সংক্রামনের কারণ। এখানে স্পা সেন্টারে কর্মরতদের নিয়ে কর্মশালা ভিন্ন কিছু বলে।
অথচ ১ আগস্ট হোটেল মোটল জোনে এঞ্জেল টাচ থাই স্পাতে অভিযান চালিয়ে ৪ জন পুরুষ ও ১১জন নারীকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, নারী ও পুরুষ অশালীন পোষাক পরিহিত অবস্থায় গান-বাজনা এবং অনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার দায়ে এ অভিযান চালানো হয়।
এর মধ্যে স্পা সেন্টারের কর্মীদের নিয়ে এমন আয়োজন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, তারকা মানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে স্পা পরিচালিত হয় তা সরকারের সকল নিয়ম মেনে চলছে। এর বাইরে কেবল মাত্র প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইন্সেন নিয়ে অনেক স্পা পরিচালিত হচ্ছে। যেখানে অনৈতিক কর্মকান্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এদের সচেতন করতে এমন কর্মশালা।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply