শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিখ্যাত রন্ধন শিল্পী টমি মিয়া। পুরো নাম মোহাম্মদ আজমান মিয়া। সিলেটের মৌলভীবাজারের কামালপুরের বারন্তী গ্রামে ১৯৫৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১০ বছর বয়সে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। সেখানে একটি রেস্তেঁারায় থালাবাসন ধোঁয়ার কাজ দিয়ে শুরু করেন কর্মজীবন। সিদ্ধান্ত নেন, রান্নাকেই বেছে নেবেন তাঁর ক্যারিয়ার হিসেবে।
দশ বছর বয়সী টমি মিয়ার যাত্রা শুরুর পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি। এরপর ১৭ বছর বয়সে প্রতিষ্ঠিত করেন টেকওয়ে। সফলতায় সহিত পরিচিতি পান সেলিব্রেটি শেফ বা জনপ্রিয় রন্ধন শিল্পী হিসেবে। তাঁর হাতের রকমারি সুস্বাদু রান্না ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় লন্ডনজুড়ে।
টমি মিয়া মাতৃভুমির টানে ১৯৮৬ সালে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। এরপর দেশের বেকারত্ব দূর করতে ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজারের প্রতিষ্ঠিত করেন ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট। যেখানে শেফ ট্রেনিং ও হোটেল ম্যানেজেমেন্ট—এর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
অপরদিকে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার পর পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারেও “টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট।” সোমবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে যার আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো। শহরের তারকামান মানের একটি হোটেলের হলরুমে ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।
যেখানে উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার সদর—রামু আসনের সংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব:) ফোরকান আহমদ, রন্ধন শিল্পী ডাক নাম টমি মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু সুফিয়ান, ত্রাণ ও শরণার্থী কমিশনার (অতিরিক্ত) শামসুদ্দৌজা নয়ন, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা, প্রথম আলোর অফিস প্রধান আবদুল কুদ্দুস রানা, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, হোটেল—মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার, নোঙরের পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সর্বস্তরের মানুষ এতে উপস্থিত।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, বেসরকারি সংস্থা ‘নোঙর’ ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট’ এর ক্যাপসিটি বিল্ডিং পার্টনার কাজ করছেন।
নোঙরের নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম রাশেদ জানান, ‘কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এই প্রশিক্ষণটা হবে। আমরা তাদের সেই সাপোর্টটা দিব। সারা পৃথিবীতে এই প্রতিষ্ঠানের সনদের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। শিক্ষার্থীদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে নূন্যতম এসএসসি হতে হবে।’
রন্ধন শিল্পী টমি মিয়া জানান, “কক্সবাজার ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে একটা হাব। আমার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছিল একটা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করব। প্রায় এক বছর আগে আলাপ শুরুর পর ‘নোঙর’ এর সহযোগিতায় আমরা যাত্রা শুরু করলাম।”
টমি মিয়া জানান, “কোর্সটা প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিদেশে গেলে আইএলটিএস লাগবে। লন্ডনে কেউ যেতে চাইলে আমরা শিক্ষার্থীদের চাকুরির ব্যবস্থা করে দিব।”
রন্ধন শিল্পী নাম টমি মিয়া আরও বলেন, “অদক্ষ জনশক্তিকে দক্ষ শক্তিতে রূপান্তরিত করাই আমার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে আমি বাংলাদেশে টমি মিয়া’স হসপিটালিটি ম্যানেজম্যান্ট ইন্সটিটিউট গড়ে তুলি। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত গৌরবের সাথে কাজ করছেন।”
কতৃর্পক্ষ জানিয়েছে, ‘টমি মিয়া হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট’—এ দুই ধরনের কোর্স চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে শেফ ট্রেনিং ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট।
শেফ ট্রেনিং : ডিপ্লোমা ইন ফুড প্রিপারেশন এন্ড কুলিনারী আর্টস (১ বছর ও ৬ মাস)। সার্টিফিকেট ইন ফুড প্রিপারেশন এন্ড কুলিনারী আর্টস (৩ মাস ও ১ মাস)। হোটেল ম্যানেজমেন্ট : ডিপ্লোমা ইন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট (১ বছর)। সার্টিফিকেট ইন হাউজ কিপিং (০৩ মাস)। সার্টিফিকেট ইন ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট (৩ মাস)।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্তমানে লন্ডন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, স্পেন, নিউজিল্যান্ড, ও ডেনমার্কসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে স্কিল মাইগ্রেশন হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সার্টিফিকেট দিয়ে বিশ্বের যে কোন দেশে ভিসা ও শতভাগ চাকুরি পাওয়ার নিশ্চিয়তা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, টমি মিয়া সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের জন্যেও রান্না করেছেন। ব্রিটেনে টমি মিয়া পরিচিতি পান কারি কিং হিসেবেও। ডাউনিং স্ট্রিটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের জন্যেও রান্না করেছেন টমি মিয়া। পাশাপাশি ব্রিটেন, বাংলাদেশে বহু দাতব্য ও সমাজসেবা কাজের সাথেও জড়িত তিনি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূদ।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply