শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়ম ভেঙে ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হওয়া এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে কক্সবাজারে ১৮০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে ফের নিজ নিজ শিবিরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী।
এছাড়া রোহিঙ্গা নাগরিককে চাকুরি দেওয়ার অভিযোগে টেকনাফের পৌর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির নেতা ও এক আবাসিক হোটেল ম্যানেজারকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার ও মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে ১০০ জন এবং উখিয়া উপজেলা থেকে ৮০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয় বলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান।
আটক এমদাদ হোসেন (৬৫) টেকনাফ পৌর এলাকার ‘আবাসিক হোটেল মক্কা’ এর ম্যানেজার। তিনি আওয়ামী লীগের টেকনাফ পৌর কমিটির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক।
মঙ্গলবার বিকালে হাসানুজ্জামান বলেন, “ সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। আটকদের উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। “
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পের বাইরে আসা রোহিঙ্গারা সস্তায় শ্রম বিক্রি করছে। তারা বিভিন্ন পরিবহনে চালক ও চালকের সহকারি বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। কেউ কেউ বাসাবাড়িতে গিয়েও কাজ করছে। এতে স্থানীয় শ্রমজীবীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। “
“ পাশাপাশি এসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অপরাধী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠায় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে “ বলে হাসানুজ্জামান।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, “ রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে আসার প্রবণতা রোধে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এ নিয়ে সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে। এতে উখিয়া থেকে ৮০ জন এবং টেকনাফ থেকে ১০০ জন রোহিঙ্গা আটক করা হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ পৌর এলাকায় আবাসিক হোটেলে রোহিঙ্গা নাগরিককে চাকুরি দেওয়ার অভিযোগে এক ম্যানেজারকে আটক করেছে পুলিশ। “
আটক হোটেল ম্যানেজারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে টেকনাফ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
এ বিষয়ে বিকালে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দৌজ্জা নয়ন বলেন, ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কেউ কেউ স্বচ্ছল জীবনের তাগিদে, আবার কেউ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে।“
ক্যাম্পের বাইরে অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের চলাচল বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ সামছু-দৌজ্জা বলেন, এ নিয়ে আগামীতে প্রশাসনিকভাবে আরও কঠোরতা অবলম্বন করা হবে।
এদিকে টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, টেকনাফ পৌরসভা, সদর, হ্নীলা ও সাবরাং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। শিবির থেকে অকারণে বাইরে আসার সুযোগ নেই রোহিঙ্গাদের। তাদের নিরাপত্তার জন্য শিবির এলাকাজুড়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, “ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেটা মানছেন না। রোহিঙ্গা শিবিরে এত নিরাপত্তা জোরদার করার পরও তারা কীভাবে ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসছেন? অথচ স্থানীয় লোকজন অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পের ভেতরে ঢুকতে পারেন না।”
মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ক্যাম্পের বাইরে এসে কাজ করার কোনো ধরনের বৈধতা নেই রোহিঙ্গাদের। কারণ, তারা প্রতি সপ্তাহে খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছেন। ক্যাম্পের বাইরে এসে কাজ করলে স্থানীয়দের শ্রমবাজারের জন্য হুমকি তৈরি হবে।
“বর্তমানে রোহিঙ্গারা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প থেকে বাইরে যেতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএন পুলিশ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।”
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply