শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : চকরিয়ার ‘গোলাপ গ্রাম বরইতলী’। এই গ্রামের গোলাপ মন রাঙাতো দেশের নানা প্রান্তের মানুষের। কিন্তু করোনার বিধি নিষেধে চাহিদা নেই গোলাপের। তাই গাছের গোলাপ নষ্ট হচ্ছে গাছেই।
অন্যদিকে তামাক চাষ ছেড়ে গোলাপ চাষে আসা চাষিরা জীবন বাঁচাতে পুনরায় ঝুঁকছেন তামাক চাষে। এতে গোলাপচাষিদের জীবন-জীবিকা পড়েছে হুমকিতে। দুই একর জমিতে গোলাপ চাষ করতেন কক্সবাজারের চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের লামারপাড়ার শাহাব উদ্দিন। কিন্তু চাহিদা না থাকায় তা এক একরের কমিয়ে এনেছেন তিনি। বাকি জমিতে করছেন তামাক ও সবজির চাষ।
সরেজমিন দেখা গেছে, বরইতলী ইউনিয়নের উপরপাড়া, নামারপাড়া, খয়রাতিপাড়া, বরইতলী নতুন রাস্তার মাথা, মাইজপাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় তামাক, ধান, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছে। অথচ আগে এসব জমিতে গোলাপের চাষ হতো।
কক্সবাজার শহর থেকে ৭৫ কিলোমিটার উত্তরে বরইতলী গ্রাম। এক সময় বরইয়ের জন্য প্রসিদ্ধ গ্রামটি সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি পায় ‘গোলাপ গ্রাম বরইতলী’ নামে। এই গ্রামের রকমারি গোলাপ মন রাঙাতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের। এখন চাহিদা নেই, গাছের গোলাপ নষ্ট হচ্ছে গাছেই।
চাষিদের ভাষ্যমতে, দুই বছর আগেও বরইতলীতে প্রায় ২০০ একর জমিতে ২১০টি গোলাপের বাগান ছিল। এখন মাত্র ৫০ একরে ৫০টি বাগান। বেচাবিক্রি নেই বলে এসব বাগান থেকে এখন প্রতিদিন কয়েক হাজার গোলাপ কেটে ফেলে দিতে হচ্ছে। তামাক চাষ ছেড়ে গোলাপ চাষে আসা চাষিরা জীবন বাঁচাতে পুনরায় তামাক চাষসহ নানা পেশায় ঝুঁকছেন। করোনা সংক্রমণরোধে কঠোর বিধিনিষেধ গোলাপচাষিদের জীবন-জীবিকা হুমকিতে ঠেলে দিয়েছে।
চকরিয়া পৌর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে সোনাইছড়ি খাল। এই খালের দুই পাড়েও রয়েছে বিস্তীর্ণ গোলাপবাগান। উত্তর পাড়ে মঈনুল ইসলামের এক একরের গোলাপবাগান ‘রোজ গার্ডেন’। সরেজমিনে রোজ গার্ডেনে গিয়ে দেখা গেল, বাগানের হাজারো গাছে ফুটেছে কয়েক হাজার গোলাপ। গাছ থেকে গোলাপ কাটছেন কর্মচারী কফিল উদ্দিন। তিনি গোলাপ কেটে ঝুড়িতে নিচ্ছেন, তারপর পাশের খালের পাড়ে ফেলে দিচ্ছেন।
কফিল বলেন, বিধিনিষেধে গোলাপের চাহিদা নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে গোলাপ নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট ফুল গাছে রাখা যায় না তাই প্রতিদিন এই বাগান থেকেই অন্তত এক হাজার গোলাপ কেটে ফেলে দিতে হচ্ছে। রোজ গার্ডেনের মালিক স্থানীয় খয়রাতিপাড়ার বাসিন্দা মঈনুল ইসলাম। ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি ৩ একর জমিতে গোলাপের চাষ করে আসছেন। কিন্তু করোনার কারণে বিয়েশাদিসহ সামাজিক আচার অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ার কারণে এখন গোলাপ বাগান করছেন মাত্র এক একরে। দেড় বছর ধরে একটি বাগানেই তাঁর লোকসান গুনতে হয়েছে পাঁচ লাখ টাকার বেশি।
বরইতলী গোলাপবাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম বলেন, পাঁচ বছর আগেও প্রায় ২০০ একর জমিতে গোলাপের চাষ হতো। এখন মাত্র ৫০ জন ব্যক্তি প্রায় ৫০ একরে ৫০টি গোলাপের বাগান করছেন। বেচাবিক্রি না থাকায় প্রতিদিন এসব বাগান থেকে অন্তত কয়েক হাজার গোলাপ কেটে ফেলে দিতে হচ্ছে।
গোলাপচাষিদের নেতা মঈনুল ইসলাম বলেন, গোলাপের বাজার দখল করেছে কাগজের ফুল ও চায়না ফুল। গোলাপ একবার ব্যবহারের পর আর ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু কাগজের ফুল বা চায়না ফুল অন্তত চার থেকে পাঁচবার ব্যবহার করা যায়। এই কারণে বিয়েশাদি, সামাজিক অনুষ্ঠানে এখন কাগজের ফুলের ব্যবহার হচ্ছে বেশি। তাই লোকসান দিতে দিতে হয়তো একদিন বরইতলী গোলাপ চাষের পরিবর্তে পরিণত হবে তামাক চাষের গ্রামে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply