বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যক্তিবাদের বিপ্লব ঘটানোর পাশাপাশি আত্মদিন প্রচারেরও এক অনন্য প্লাটফর্ম। অন্য আরো দশজনের মতো আত্মদিনের বাইরে আমিও নই। নিম্নবর্গ ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে জন্মদিন পালন হতো না তেমন। মধ্যবিত্ত নুন্যতম শিক্ষিতজনদের মধ্যে জন্মদিন পালনের রেওয়াজ দেখা যায়। এরমধ্যে বিশেষ করে সংস্কৃতিসেবি, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, সামাজিক নেতা, বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মানুষের জন্মদিন পালনের মোটামুটি রেওয়াজ ছিলো । আর বাঙালি মুসলমান সমাজের মধ্যে যারা উদার ধার্মিক ও প্রগতিশীল তারাই জন্মদিন পালন করতে দেখেছি।
আমি নিম্ন -মধ্যবিত্ত কৃষক পীর পরিবারের সন্তান। আমার বাবা উদারনৈতিক ধার্মিক পড়ুয়া মানুষ। ঠিকাদারি ব্যবসার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো মানুষ, এবং আমার চোখে দেখা শ্রেষ্ঠ একজন উদারনৈতিক ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমান। আমাদের পরিবারে আমার বড়ো ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড জাফর আলমেরও কোন জন্মদিন পালিত হয়েছে কি-না আমি দেখি নাই,সেহেতু অন্যান্য ভাইবোনের ও জন্মদিন পালিত হয়নি। তবে আমার বাবা সালেহ আহমেদ কন্ট্রাক্টর আমাদের ভাইবোন সকলের জন্মদিন বাংলা সন, ঈসায়ী সন এবং হিজরী সন অনুসারে তাঁর ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন। এমনকি তাঁর বিবাহ সন ও কুষ্টি কাঠ-পাথরে লিখে রেখে সংরক্ষণ করতেন। এখনো মনে পড়ে শৈশবে আমার জন্মদিন উপলক্ষে বাবা একটা রঙিন জামা উপহার দিয়েছিলেন। মা-বোনেরা ঘরে পিঠা-পুলি বানাতো, পাড়ার দু’এক জন মৌলভীকেও ডাকা হতো ফাতেহা -দরুদ পড়ার জন্য। সেই সময়ে বাঙালি নিম্ন-মধ্যবিত্ত মুসলমান সমাজে হয়তো এভাবেই জন্মদিন পালন করতো। তবে সর্বক্ষেত্রে নয়, অনেক পরিবার ভিন্নভাবেও জন্মদিন পালন করতো।
বিশ্বায়নের সাংস্কৃতিক প্রভাব কমবেশি আমাদের সমাজকেও যে নাড়া দেয়নি তা নয়। যার কারণে জন্মদিন পালনের বর্তমান রেওয়াজ থেকে আমিও মুক্ত নই। এখন জন্মদিন পালন করলে প্রথমে মনে পড়ে মা-বাবাকে। এখন তো সেই একান্নবতী পরিবার আর নেই। পরিবারগুলো ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে যেনো এক একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। মা-বাবার অবর্তমানে ভাই ভাবিদের যৌথ পরিবারে আমার আর কখনো জন্মদিন পালিত হয়নি। তখন ওসব নিয়ে ভাববার ফুরসতও আমার ছিলো না। ছিলাম রাজনীতি পাগল। সারাদিন পড়ে থাকতাম ছাত্র রাজনীতি নিয়ে। নাওয়া-খাওয়ার অনিয়ম তো ছিলোই। অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে কৈশোর যৌবনের তুখোড় দিনগুলি কেটে গেছে স্বৈরাচার এরশাদ-খালেদা-জামাত-শিবির বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। তখন মনেই থাকতো না কবে জন্মদিন। জন্মদিন যেনো তখন রাজপথের দেয়ালে সেঁটে থাকা ধূসর পোস্টার। হামলা-মামলা-রিমান্ড নামের পুলিশি নির্যাতন-জেল –জুলুমের ভেতর যখন যুবকের যৌবন বন্দি, সেখানে আর ফুটেনি জন্মদিনের ফুল।
কিন্তু সে ফুল ফুটাতে এগিয়ে এলো কক্সবাজার শহরের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী অজয় মজুমদার এর বিজয়মুখ গণসাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক’জন কবি সুহৃদ রিদুয়ান আলী, সৌরভ, সাকিব সহ অনেকেই। তারা আমার ৪৯তম জন্মদিন ঘটা করে উদযাপন করলো। এরপর আমার ৫০তম জন্মদিন গণসাংস্কৃতিক সংগঠন সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী ও শ্রুতি আবৃত্তি অঙন এর খোরশেদ আলম – মনির মোবারক, চাষি ছোটন সহ কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করে। ৫০ তম জন্মদিন উপলক্ষে কক্সবাজারের কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। কক্সবাজারের অভিজাত বই বিপণী ইস্টিশনএর কর্ণধার অনুরুনন সিফাত আমার প্রকাশিত বই সমুহ বিশেষ ছাড় কৃত মূল্যে বিক্রির আয়োজন করে।
এ বছর আরও নতুন কয়েকটি সংগঠন এর কর্তাবৃন্দ আমার ৫১তম জন্মদিন পালনের আগ্রহের কথা জানিয়েছিল। শারীরিক-মানসিক বিপর্যয়ের কারণে আমি তাদেরকে বিনয়ের সহিত ফিরিয়ে দিয়েছি। অপ্রত্যাশিতভাবে আজ (২৮ জানুয়ারি ২০২২) সন্ধ্যার একটু পরপরই আমার শ্রদ্ধেয় কবি সম্পাদক অমিত চৌধুরী,অগ্রজ কবি গল্পকার আলম তৌহিদ, কবি গবেষক কালাম আজাদ, সাবেক ছাত্রনেতা, লেখক সাংবাদিক ওয়াহিদ রুবেল জন্মদিনের কেক ও নাস্তাসহ বাসায় উপস্থিত। আমি তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ৫১তম জন্মদিন উপলক্ষে অগ্রজ কবি সংগঠক কামরুল বাহার আরিফ ভাই দীর্ঘ নিবন্ধ লিখে তাঁর ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন, কবি সাজ্জাদ সাইফ আমাকে উৎসর্গঃ করে একটি কবিতা পোস্ট করেছে। এ লেখা দুটি কক্সবাজারের অনলাইন পোর্টাল কক্সবাজার টাইমস প্রকাশ করেছে। একি সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী পোর্টাল উত্তরাধিকার ৭১ কামরুল বাহার আরিফ এর নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে। যারা সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে আমার জন্মদিন উপলক্ষে অল্প-বিস্তর লিখে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের প্রতি আমার শ্রদ্ধা -কৃতজ্ঞতা -ভালোবাসা। যারা মেসেঞ্জারে ইনবক্সে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা। মুটোফোনে রিং দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা। আর আমার বাসায় একা,দু’কা কয়েকজন মিলে ফুল নিয়ে এসে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাদের প্রতিও আমার নিরন্তর ভালোবাসা।
জন্মদিন এলে আমি বুঝতে পারি সারাবছর নিঃসঙ্গ থাকা, অবহেলিত রাজনৈতিক, সাহিত্য সংস্কৃতি কর্মী হিসাবে মানুষ আমাকে নিরন্তর ভালোবাসে। আমার মনে হয় তাদের একান্ত দোয়া, আশীর্বাদ, ভালোবাসার কারণে আমি এখনো বেঁচে আছি শত প্রতিকূল পরিবেশে। হে মানুষ, আমি তোমাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারবো না হয়তো তবুও তোমাদের ভালোবাসার প্রতি আমার আমৃত্যু শ্রদ্ধা থাকবে। আরো থাকবে আমার হৃৎপ্রসূনের শব্দ সুবাস।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply