বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : বর্ষবিদায়কে ঘিরে লাখো পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। বিস্তৃত সৈকতের দীর্ঘ বালিয়াড়ি যেন রূপ নিয়েছিল জনারণ্যে।
তবে এবার সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে সংঘটিত অপ্রীতিকর কিছু ঘটনার কারণে পর্যটক সমাগমের সংখ্যা নিয়ে ব্যবসায়ি ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা বলছেন, বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর কক্সবাজারে সমাগম ঘটে দুই লক্ষাধিক পর্যটকের। কিন্তু এবছর সেটা অর্ধেকের বেশী নয়। তাই তাদের আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি।
এ নিয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারের আইন-শৃংখলা ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রশাসনে সার্বিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে স্বাভাবিক ছুটির দিনগুলোর চাইতে এই মুহুর্তে কয়েকগুণ পর্যটক সমাগম ঘটেছে।
শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পুরো সৈকতে জুড়ে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। সবক’টি পয়েন্টে পর্যটকদের আনাগোনায় যেন রূপ নিয়েছে জনসমুদ্রে। দেশের নানা প্রান্তের ভ্রমণ-পিপাসুদের পাশাপাশি দেখা মিলেছে বিদেশি পর্যটকদেরও। পর্যটকদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্থানীয়রা ভিড় করেছেন সৈকতে।
সৈকতের শৈবাল পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত যেন রূপ নিয়েছিল লোকারণ্যে। বছরের শেষ সূর্য্যটি যখন সাগরেজলে অস্ত যাচ্ছিল তখন সৈকতে বালিয়াড়িতে জড়ো হওয়া সব মানুষের দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু যেন পশ্চিমাকাশের ওই লাল বৃত্তটির দিকে। এসময় সৃষ্টি হওয়া অনন্য এ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণে ব্যস্ত সাগরের পাড়ে সমবেত সব মানুষ। বর্ষবিদায়ে সমবেত হওয়া এসব মানুষের কেউ এসেছে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে, কেউবা এসেছেন স্ব-পরিবারে।
রংপুর থেকে পাঁচ বন্ধু মিলে ঘুরতে এসেছেন আব্দুল কাইয়ুম।
আব্দুল কাইয়ুম বলেন, বছরের শেষদিনকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে কক্সবাজার ঘুরতে এসেছে। তারা দুদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি কক্সবাজারে হোটেল ভাড়া ও খাবারের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার ব্যাপারে যে ধরণের প্রচারণা হয়েছে তেমনটা দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলের দুইটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া নেওয়া হয়েছে দেড় হাজার। অথচ কিছুদিন আগে প্রচার হয়েছে এসব হোটেল কক্ষের ভাড়া আদায় করা হয়েছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
এসব সবই অপপ্রচার বলে দাবি করেন আব্দুল কাইয়ুম।
একই কথা জানালেন রাঙ্গামাটি থেকে বেড়াতে আসা সুশীল চাকমাও।
সুশীল বলেন, শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটি থেকে স্ব-পরিবারে কক্সবাজার এসেছেন। হোটেলের অতিথি কক্ষে টাঙ্গানো কক্ষ ভাড়ার তালিকা দেখে হোটেলে উঠেছেন। একই অবস্থা খাবার রোস্তোরাতেও।
ঢাকার কাওরান বাজার থেকে স্ব-পরিবারে ঘুরতে এসেছেন ওয়ালিউর রহমান। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আইন-শৃংখলা বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে তারা সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।
ওয়ালিউর বলেন, সৈকতের সবক’টি প্রবেশদ্বারসহ সবখানে দেখা গেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে। সড়কেও দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের নজরদারি করতে। ফলে নির্বিঘ্নে ঘুরা সম্ভব হচ্ছে।
আবাসিক হোটেল-মোটেল এবং খাবার রেস্তোরাতে অধিকমূল্য আদায় নিয়ে নানা অপপ্রচারের কারণে কক্সবাজার এবার বর্ষবরণ ও বিদায়কে কেন্দ্র করে এবার আশানুরূপ পর্যটক সমাগম ঘটেনি বলে দাবি করেন কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার।
আবুল কাশেম বলেন, প্রতিবছর এই দিনগুলোতে কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলোর কোন কক্ষ খালি থাকত না। এবার সবক’টি হোটেলে ৫০ শতাংশের বেশী কক্ষ ভাড়া হয়নি। ফলে হোটেল ব্যবসায়িরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
“ মূলত: অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং খাবারের দাম বেশী নেওয়ার অপপ্রচারের কারণে পর্যটকরা কক্সবাজার বিমুখ হয়ে উঠছেন। ”
প্রতিবছর বর্ষবিদায় ও বরণকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন দুই লাখের বেশী পর্যটক সমাগম ঘটলেও এবারের সংখ্যা এক লাখ হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন হোটেল মালিক সমিতির এ নেতা।
একই ধরণের মন্তব্য করেন বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল।
টুটুল বলেন, এবারে বিজয় দিবসের টানা তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগম ঘটেছিল। এসময় কক্সবাজারে পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া ও খাবারের দাম আদায় নিয়ে নানা অপপ্রচার হয়েছে।
“ গত বছর এই দিনগুলোতে খাবার হোটেলগুলোতে যে পরিমান বিক্রি হয়ে এবার সেটি অর্ধিকের বেশী হবে না। ফলে ব্যবসায়িরা যে লাভের আশা করেছিলেন তা আশানুরূপ হয়নি। ”
আশানুরূপ পর্যটক সমাগম না হওয়ার জন্য এ ব্যবসায়ি নেতার দাবি করেন, নানা অপপ্রচারের পাশাপাশি পর্যটন এলাকায় ‘ধর্ষণকান্ড’ এবং করোনা মহামারিতে সংক্রমণের নতুন ধরণ ওমিক্রমণের ভীতিও অনেকাংশে দায়ী।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, বর্ষবরণ ও বিদায়কে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে স্বাভাবিক ছুটির সময়ের চাইতে কয়েকগুন পর্যটক সমাগম ঘটেছে। এই অন্তত দেড় লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশ সবধরণের নিরাপত্তর ব্যবস্থা নিয়েছে।
“ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ জেলার ৫ টি প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের ২০০ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। পর্যটন এলাকায় পুলিশের বেশ কয়েকটি টহলদলের সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। ”
এছাড়া পর্যটক হয়রানি রোধেও পুলিশ সদস্যরা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply