মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন

শতভাগ চূড়ান্ত নয় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা

বাংলা ট্রিবিউন : এখনও শতভাগ চূড়ান্ত হয়নি মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা। এ পর্যন্ত ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ (প্রথম পর্যায়) করলেও এ কাজ আর আগায়নি। চলতি বছরের ২৫ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, সরকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি তিন দফা বৈঠক করে বিভিন্ন পর্যায় থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীর প্রথম পর্যায়ের তালিকা প্রস্তুত করেছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকাশিত এ তালিকায় এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৩৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামও স্থান পেয়েছে।

এই তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপটেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানের নাম রয়েছে। তালিকায় জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকের নামও রয়েছে। তবে এই দুই জনের নামের সঙ্গে তাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ডের বিষয়টিও লিপিবদ্ধ থাকবে।

একইসঙ্গে সরকারের পক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা চূড়ান্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকাশিত সংজ্ঞা অনুসারে ‘যেসব সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক, সংগীত ও শিল্পকলার বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি দখলদার কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরাই শহীদ বুদ্ধিজীবী।’

সূত্রে জানা গেছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বলতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টাতেই পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করাকে বোঝায়। ১৯৭১-এর ডিসেম্বরে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব নয়, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঘর থেকে তুলে এনে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে। পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।

বন্দি অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি। পাওয়া যায়নি নিখোঁজ অনেককে। একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবী হত্যার স্মরণে বাংলাদেশের ঢাকায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করলেও তাদের কোনও তালিকা করতে পারিনি। বিলম্ব হলেও সে তালিকা করার কাজ শুরু করেছি। প্রখ্যাত গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠনের পর কারা শহীদ বুদ্ধিজীবী হতে পারেন তার সংজ্ঞাও গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। তার আলোকে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী প্রথম ধাপে আমরা ১৯১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করছি। পরে আরও নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888