শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: উখিয়ার বালুখালীতে সরকারি ভূমিতে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণের কথিত ভূমিদস্যুতার অভিযোগে দায়ের মামলায় সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা ও এক কলেজ শিক্ষার্থীকে আসামি করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
অথচ ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না এবং ওই কলেজ শিক্ষার্থীও নির্মাণাধীন স্থাপনাটির মালিক নয়।
এ নিয়ে মামলার প্রক্রিয়া ও বাদীর ভূমিকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৪ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী পুরান বাজার এলাকায়।
এ ঘটনায় গত ৫ ডিসেম্বর পালংখালী ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম সেলিম বাদী হয়ে উখিয়া থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী এলাকার মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে মো. সাইমুন (২৪), একই ইউনিয়নের ধামনখালী এলাকার ছৈয়দুল হকের ছেলে মোবারক হোসেন (৩৫) এবং রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং এলাকার আবুল মঞ্জুর (৪০)।
আসামিদের মধ্যে মো. সাইমুন কক্সবাজার সরকারি কলেজের স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র। মোবারক হোসেন সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট পদের কর্মকর্তা এবং তিনি রংপুরস্থ ছৈয়দপুর সেনানিবাসে কর্মরত। আর আবুল মঞ্জুর পেশায় রাজমিস্ত্রী।
থানায় দায়ের এজাহার সূত্রে জানা যায়, উখিয়া উপজেলার উখিয়ার ঘাট মৌজার বিএস ১ নম্বর খতিয়ানের বিএস ১৯২, ১৯৩ ও ১৯৮ দাগের কিছু পরিমান সরকারি খাস জমি রয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর দুপুরে ওই জমিতে অবৈধভাবে দখল করে পাকা স্থাপনা (বাড়ী) নির্মাণের খবর পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা অভিযান চালায়। এতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে দখলকারিরা বাধা প্রদান করে। এক পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের হামলার চেষ্টা চালায়।
এ ঘটনায় গত ৫ ডিসেম্বর পালংখালী ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার ব্যাপারে মামলার প্রধান আসামি মো. সাইমুন বলেন, তার বড় বোনের স্বামী মোবারক হোসেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তার বোনের বসত ভিটার জোত জায়গা লাগোয়া কিছু খাস জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল রয়েছে। সম্প্রতি তার বোন নিজেদের বসত ভিটায় পাকা বাড়ী নির্মাণের কাজ শুরু করে। বোনের স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাকে কাজের দেখভাল করতে হয়।
“ গত ৪ ডিসেম্বর ভূমি অফিসের একদল লোক অভিযান চালিয়ে নির্মাণাধীন স্থাপনা উচ্ছেদ করে। ”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ ঘটনার সময় আমি ঘটনাস্থলেও উপস্থিত ছিলাম না। তাছাড়া উচ্ছেদ করা জমির মালিকও আমি নই। তারপরও মামলার বাদী আমাকে চিহ্নিত ভূমিদস্যু আখ্যা দিয়ে এজাহারে প্রধান আসামি করেন। আমি এখনো নিয়মিত ছাত্র হিসেবে কলেজে অধ্যায়নরত। এছাড়া আমার নামে কখনো ভূমিদস্যুতার অভিযোগ ছিল না। ”
মামলায় মিথ্যা অভিযোগ তুলে আসামি করে সম্মানহানি করা হয়েছে বলে দাবি করেন সাইমুন।
এদিকে ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও মামলায় আসামি করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত সার্জেন্ট মোবারক হোসেন।
মোবারক বলেন, ঘটনার দিন তিনি রংপুরস্থ ছৈয়দপুর সেনানিবাসের কর্মরত ছিলেন। অথচ মামলার বাদী সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে তাকে আসামি করেছেন। এতে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।
মূলত: স্থানীয় কতিপয় স্বার্থন্বেষী মহলের সঙ্গে যোগসাজশ করে ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা হয়রানিমূলক মামলায় আসামি করেছে বলে দাবি করেন সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা।
ঘটনার ব্যাপারে উখিয়ার ইউএনও নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী পুরান বাজার এলাকায় সরকারি খাস জমি দখল করে কতিপয় লোকজন অবৈধ পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে খবরে স্থানীয় ভূমি অফিসের লোকজন অভিযান চালায়। এতে অবৈধ স্থাপনাটি উচ্ছেদ করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে মামলা করার নির্দেশ দেন বলে জানান ইউএনও।
তবে ঘটনার সময় উপস্থিত না থেকেও সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা ও এক কলেজ ছাত্রকে আসামি করার ব্যাপারে মামলার বাদী ও পালংখালী ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলাম সেলিম দাবি করেন, “ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মামলা করেছেন। এতে তার ব্যক্তিগত কোন ধরণের অভিলাষ ছিল না। ”
ভূমিদস্যুতার কোন ধরণের অভিযোগ না থাকা স্বত্তেও কলেজ ছাত্রকে আসামি করার ব্যাপারে স্থানীয় এ ভূমি কর্মকর্তা বলেন, “ মামলার যুক্তিযুক্ততা সঠিক রাখতে পুলিশের পরামর্শে এজাহার তৈরী করা হয়েছে। ”
তবে এজাহার তৈরী ব্যাপারে বাদীকে কোন ধরণের অভিমত বা পরামর্শ দেয়া হয়নি দাবি করেন উখিয়া থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ।
আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, বাদী যেভাবে এজাহার তৈরী করে এনেছেন আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিয়ে মামলা নথিভূক্ত করা হয়েছে। বাদী এজাহার তৈরীর ব্যাপারে যে ধরণের বক্তব্য দিয়েছেন তা সত্য নয়।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply