রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন
আবহাওয়া ডেস্ক : সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরও শক্তিশালী হয়ে রাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদে’ পরিণত হতে পারে। যা আগামীকাল শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাসহ সুন্দরবন, সাতক্ষীরাসহ আশেপাশের এলাকায় তীব্র ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে ইতোমধ্যে ভারতে বৃষ্টি শুরু হলেও বাংলাদেশের আবহাওয়া আজ শুষ্ক থাকতে পারে।
এবারের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির নামটি রেখেছে সৌদি আরব। আরবি শব্দ ‘জাওয়াদ’-এর অর্থ উদার বা করুণাময়।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, আজকের মধ্যেই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এ পরিণত হবে। এটি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের উপর দিয়ে যেতে পারে। এর কিছু প্রভাব বাংলাদেশের সুন্দরবনসহ সাতক্ষীরা, খুলনাসহ আশেপাশের এলাকায় পড়বে। তবে আজ এখন পর্যন্ত কোথাও ঝড়ো হাওয়া বা বৃষ্টির শংকা নেই। আজ দিবাগত রাতের পর ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা শুধু সাগরে ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দিয়েছি। নদীতে কোনও সংকেত নেই। আবহাওয়া আপাতত শুষ্কই থাকবে।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সকালের দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৬৫ কিলোমিটার, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
এদিকে নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়োহাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর মাঝারী ধরণের উত্তাল রয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্যও বলা হলো।
১ নম্বর সতর্কতা সংকেতের অর্থ হলো- জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬১ কিলোমিটার, যা সামূদ্রিক ঝড়ে পরিণত হতে পারে।
প্রতিবেশী ভারতের অবস্থা
ভারতের আবহাওয়া দফতর (আইএমডি) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিশাখাপাটনাম থেকে ৭৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে নিম্নচাপটি তৈরি হয়। এটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শুক্রবার সকালে এটি বঙ্গোপসাগরের সংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিমে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। আইএমডি জানিয়েছে, পরবর্তী ১২ ঘণ্টায় এটি আরও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। শনিবার উপকূলে পৌঁছানোর সময় তীব্র ঝড়ের গতিবেগ নিয়ে আসতে পারে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ। এর প্রভাবে উড়িষ্যা, অন্ধ্র প্রদেশ এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় ভারি থেকে তীব্র ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা, মধ্য আন্দামান সাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে এবং এটি বর্তমানে দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সকালের দিকে দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর সবশেষ সেপ্টেম্বরে উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণঝড় ‘গুলাব’, আর মে মাসে ‘ইয়াস’।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply