রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মিয়ানমারে বিস্ফোরণে মুহুর্মুহু শব্দ, টেকনাফের বসত ঘরের আঙ্গিনায় এসে পড়েছে গুলি মাকে কুপিয়ে হত্যার পর থানা এসে হাজির যুবক টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ

ছোট ভাইকে দেখিয়ে বড় ভাইয়ের জামিন, লাপাত্তা দুজনই

প্রথম আলো : কক্সবাজার শহরের বায়তুশশরফ জব্বারিয়া এতিমখানার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল রফিকুল ইসলাম (১২)। রফিকুলের বড় ভাই আলাউদ্দিনের (২২) বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় জারি হয়েছিল। তবে রফিকুলকে আলাউদ্দিন সাজিয়ে আদালতে দাঁড় করানো হয়। উচ্চ আদালত আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। এর পর থেকে রফিকুল, আলাউদ্দিন ও তাঁদের পরিবারের সবাই আত্মগোপনে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে আলাউদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলা করেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার উজানটিয়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী জি এম জাহিদ হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর উচ্চ আদালতের একটি দ্বৈত বেঞ্চে আলাউদ্দিনের বদলে তাঁর ছোট ভাই রফিকুলকে দাঁড় করানো হয়। আদালত ১২ বছর বয়সী শিশু রফিকুলকে আলাউদ্দিন মনে করে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। এ নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ওই সংবাদের ছবিতে দেখা যায়, আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীর সঙ্গে আলাউদ্দিনের জায়গায় রফিকুল ইসলাম ও তার মা রাজিয়া বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। ২২ বছরের তরুণ আলাউদ্দিনের জায়গায় ১২ বছরের শিশু রফিকুলের ছবি দেখে রামুর বাসিন্দারা অবাক হন। এরপর বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তৎপর হলে আলাউদ্দিন উধাও হন। সঙ্গে রফিকুল, মা রাজিয়া বেগমসহ পরিবারের সবাই আত্মগোপন করেন।

রামু থানা–পুলিশ জানায়, দেড় বছর ধরে পুলিশ আলাউদ্দিন ও রফিকুলকে খুঁজছে। ২০১৯ সালে ২২ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া আট সপ্তাহের আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু গ্রেপ্তারের ভয়ে দুই ভাইয়ের কেউই আদালতের হাজিরা দিচ্ছেন না।

আইনজীবী জি এম জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে ওই মামলার ছয় আসামির মধ্যে একজন নরসিংদীর কারাগারে বন্দী আছেন। অপর চারজন জামিনে মুক্ত আছেন। ৬ নম্বর আসামি আলাউদ্দিন পলাতক।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২০ জুন আলাউদ্দিনসহ অন্য আসামিরা মালয়েশিয়ায় ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মামলার বাদী নুরুল ইসলামকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজারের দরিয়ানগর উপকূলে নিয়ে যান। সেখান থেকে নুরুল ইসলাম ও একই এলাকার হেলালউদ্দিনকে ট্রলারের মাধ্যমে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। কয়েক দিন পর জাহাজটি থাইল্যান্ড উপকূলে তাঁদের নামিয়ে দেয়। সেখানকার দালালেরা তাঁদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে চার লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেন। এরপর ওই দুজনকে মালয়েশিয়ায় দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের জুন মাসে মালয়েশিয়া পুলিশ অবৈধ অভিবাসী হিসেবে নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। এক বছর কারাভোগের পর বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নুরুল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনে। এরপর ২৯ অক্টোবর আলাউদ্দিনসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলা করেন নুরুল ইসলাম।

গত ২৯ নভেম্বর রামুতে আলাউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা বলেন, ঘটনার পরপরই আলাউদ্দিন নিজের জমি আবুল হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে চলে গেছেন।

মায়ের সঙ্গে রফিকুল
মায়ের সঙ্গে রফিকুল

এদিকে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম আলাউদ্দিনের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, পত্রপত্রিকায় আলাউদ্দিনের যে ছবি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি আলাউদ্দিনের ছোট ভাই রফিকুল ইসলামের।

মামলার বাদী নুরুল ইসলাম বলেন, আলাউদ্দিন তাঁর ছোট ভাই রফিকুলকে দিয়ে ‘আয়নাবাজি’ (একটি ঢাকাই সিনেমা, যার কাহিনি গড়ে উঠেছে একজনের জায়গায় আরেকজনের সাজাভোগকে কেন্দ্র করে) করেছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আলাউদ্দিন পরিচয়ধারী রফিকুল ইসলাম আরও একটি রিট করেছেন।

আলাউদ্দিনের পক্ষে হাইকোর্টে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিশির মনির বলেন, ‘আলাউদ্দিন মানবপাচার মামলার পলাতক আসামি কি না, সেটি জানি না। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হলে ফাইল দেখতে হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888