বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. শামসুল আলম হত্যাকাণ্ডের ৭ বছর ৩১ অক্টোবর। ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর বিকালে ৯৫টি আকাশমণি গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত সালিস বৈঠকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল মো. শামসুল আলমকে।
ঘটনায় ৭ বছরেও শেষ হয়নি এই হত্যা মামলার বিচার। ইতিমধ্যে সকল আসামী জমিনে মুক্তি পেয়ে গেছেন। যার অনেকেই পালিয়ে গেছেন বিদেশে। আর যারা দেশে রয়েছে তারাও মামলার বাদি নিহতের স্ত্রী দিলসাদ বেগমকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে মামলার সাক্ষী সহ নিহতের স্বজনরা।
নিহত টেকনাফ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. শামসুল আলম টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পশ্চিম মহেশখালীয়াপাড়া গ্রামের মৃত ফজল করিমের ছেলে।
মামলার বাদি দিলসাদ বেগম জানান, ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর শুক্রবার সকালে শামসুল আলম তাঁর দাদার জমিতে রোপণ করা ৯৫টি আকাশমণি গাছ কেটে দেয় প্রভাবশালী একটি চক্র। গাছ কাটার বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ফিরোজ আহমদ চৌধুরীকে অবহিত করলে বিকেলে সালিস-বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সালিসে বসলে আচমকা গোলাম সুলতানের ছেলে আবদুল মালেক, জালাল আহমদ ও মহিউদ্দিন সহ অনেকেই শামসুল আলমের ওপর হামলা চালিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে তাঁকে কক্সবাজার হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর অবস্থা অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের কথা বলেন। কিন্তু পথেই গাড়িতে থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর দিলসাদ বাদি হয়ে ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে পরের বছর পুলিশ ৩২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করেন। যেখানে ৩ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়।
আদালত থেকে পাওয়া তথ্য মতে, মামলার এজহারে অভিযুক্ত ৬ নম্বর মৃত তমিজুর রহমানের পুত্র শাহাব উদ্দিন, শাহাব উদ্দিনের ২ ছেলে আলা উদ্দিন ও রিয়াজ উদ্দিনকে অব্যাহতি প্রদান করা হলে ৩২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এরা হলেন, আবদুল মালেক, মহিউদ্দিন, জালাল উদ্দিন, আবদুস শুক্কুর, আবুল কাসেম, বদি আলম, আয়ুব উদ্দিন, মো. হাসান, মো. শফি, জাহেদ হোসেন, নুরুল আলম, আমির হোছন, নুর হাশিম, আবদু শুক্কুর, জয়নাল উদ্দিন, আলী আকবর, ছৈয়দ আলম, মাইনুদ্দিন, মঈনুদ্দিন, সাইফুল, সোলাইমান, মো. আলম, ইমদাদুল হক, ইমতেয়াজ, ছাবেকুন্নাহার, রেহেনা আক্তার, সালমা আক্তার, জামাল উদ্দিন, মো আলী, আলমঙ্গীর, আবুল কাসেম, শাহ আলম। অভিযুক্ত আসামীর কেউ বর্তমানে কারাগারে নেই।
স্থানীয়রা জানান, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মো আলম, আবদুস শুক্কুর, বদিউল আলম পালিয়ে গেছেন বিদেশ। আর ইতিমধ্যে মারা গেছেন মো হাসান।
মামলার বাদি দিলসাদ জানান, ঘটনার ৭ বছরে বিচার বিলম্বিত হওয়ায় সাক্ষি সহ তিনি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। তিনি দ্রুত বিচারের দাবি জানান।
টেকনাফ কলেজের অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল জানান, একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ঘটনার ৭ বছরে এসে এ মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া দু:খজনক। একজন সহকর্মী হিসেবে দ্রুত বিচারের জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম জানান, অধ্যাপক শামসুল আলম হত্যা মামলার অভিযোগ গঠণ করা হয়েছে। এখন সাক্ষি গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। মামলার বাদি এবং সাক্ষিরা যদি সহযোগিতা করে কয়েক মাসের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply