শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে সরকারের সাথে জাতিসংঘের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে উৎসাহ-উদ্দিপনা বিরাজ করছে। এতে উন্নত জীবন ও পরিবেশে বসবাসের আশ্বাসে রোহিঙ্গাদের মাঝে অনেকে ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এ নিয়ে কয়েকটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উদ্যোগে সচেতনতামূলক স্বাগত র্যালী বের করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে পৃথক সময়ে উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ স্বাগত র্যালী বের হয়েছে।
গত শনিবার ( ৯ অক্টোবর ) ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের সাথে জাতিসংঘের এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে সেখানে ( ভাসানচর ) বসবাসকারি রোহিঙ্গাদের মাঝে সৃষ্টি আনন্দ-উচ্ছ্বাসের।
এ খবর কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়লে সেখানেও রোহিঙ্গাদের মাঝে সৃষ্টি হয় উৎসাহ-উদ্দিপনার। এ নিয়ে মঙ্গলবার সকালে উখিয়া ও টেকনাফের কয়েকটি ক্যাম্পে ভাসানচর যেতে আগ্রহ প্রকাশকারি রোহিঙ্গারা বের করেছেন সচেতনামূলক আনন্দ র্যালী।
গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথমদিকে কক্সবাজার থেকে প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর বেশ কয়েক দফায় প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে সেখানে ( ভাসানচরে ) স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ভাসানচরে যাতায়ত ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়।
তারপরও ভাসানচরে মানুষের বসবাসের উপযোগীতা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে এক ধরণের নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা ছিল। এ নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা সেখানে যেতে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু আগামী শীত মৌসুমের আগেই ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকারের সাথে জাতিসংঘের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এবার ভাসানচরের স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘের অংশগ্রহণ থাকায় রোহিঙ্গাদের মাঝে দেখা দিয়েছে ইতিবাচক মনোভাব। এখন অনেক রোহিঙ্গা সেখানে যেতে স্বেচ্ছায় আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার কুতুপালং ২-ইস্ট, ডি-৫, ক্যাম্প-৪, বালুখালী ১৭ নম্বর ক্যাম্প এবং টেকনাফের চাকমারকূল ও নয়াপাড়া সহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে ভাসানচর যেতে আগ্রহ প্রকাশকারি রোহিঙ্গারা বের খন্ড খন্ড আনন্দ র্যালী। এতে অংশগ্রহণকারি রোহিঙ্গারা ভাসানচরে বসবাসের উপযোগিতা ও উন্নত পরিবেশের তথ্য তুলে ধরে অন্যদেরও সেখানে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন।
এসময় র্যালীতে অংশগ্রহণকারিদের হাতে দেখা গেছে, সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন।
এ নিয়ে কুতুপালং ২-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা ছৈয়দ নুর বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর গিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। ক্যাম্পের এক কক্ষের ছোট একটি ঘরে ৮ সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করা কষ্টকর। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে পরিবার নিয়ে তারা গাদাগাদি করে থাকছেন।
” ভাসানচরে স্থানান্তর হওয়া স্বজনরা জানিয়েছে, সেখানে বসবাসের পরিবেশে ক্যাম্পের চাইতে উন্নত। পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থাও এখানকার চেয়ে স্বাচ্ছন্দের। এছাড়া খাবার ও চিকিৎসা সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ক্যাম্পের চাইতে ভাল রয়েছে। “
তাই পরিবার নিয়ে ভাসানচরে যাওয়ার জন্য ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে নাম তালিকাভূক্ত করেছেন বলে জানান তিনি।
ভাসানচরে মানুষের বসবাসের উপযোগীতা নিয়ে এতদিন ধরে রোহিঙ্গাদের মাঝে নেতিবাচক প্রচারনা ছিল, কিন্তু সম্প্রতি সরকারের সাথে জাতিসংঘের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় এখন ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কুতুপালং ২-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবুল কালাম।
আবুল কালাম বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় ক্যাম্পে সৃষ্টি হয়েছে উৎসাহ-উদ্দিপনার। এতদিন ধরে ভাসানচরে মানুষের বসবাসের উপযোগীতা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা ছিল।
” এখন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর এর অংশগ্রহণ থাকায় রোহিঙ্গাদের মাঝে ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে ভাসানচর যেতে স্বেচ্ছায় আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আমিও সেখানে যেতে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে সচেতনামূলক র্যালীতে অংশগ্রহণ করেছি ” বলেন, এ রোহিঙ্গা নাগরিক।
কুতুপালং ২-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রধান কমিউনিটি নেতা ( হেড মাঝি ) মো. জাফর আলম বলেন, সম্প্রতি সরকারের সাথে জাতিসংঘের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যাপারে রোহিঙ্গারা ইতিবাচক মনোভাব পোষন করছেন। এখন অনেকে সেখানে যেতে স্বেচ্ছায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
” মঙ্গলবার সকালে এ নিয়ে স্বেচ্ছায় আগ্রহ প্রকাশকারি রোহিঙ্গারা তার ক্যাম্পে ( কুতুপালং ২-ইস্ট ) খন্ড খন্ড সচেতনতামূলক আনন্দ র্যালী বের করেছে। এছাড়াও উখিয়া ও টেকনাফের বেশ কয়েকটি ক্যাম্পেও এ ধরণের র্যালী বের করা হয়। “
রোহিঙ্গা কমিউনিটির এ নেতা বলেন, ” রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যাপারে কাউকে জোর করা হচ্ছে না। যারাই স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করবে তাদেরই নাম তালিকাভূক্ত করা হচ্ছে। “
ভাসানচরে স্থানান্তরে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা হিসেবে তিনি প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন বলে জানান জাফর আলম।
কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্প ও ২-ইস্ট ক্যাম্পের দায়িত্বরত ক্যাম্প-ইনচার্জ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ( উপ-সচিব ) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া গত বছর ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। সেটি এখনো চলমান রয়েছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ভাসানচরে যাতায়তে ঝুকিপূর্ণ থাকায় তা স্থগিত ছিল।
” সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে সেখানে (ভাসানচর) বসবাসের উপযোগীতা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের আস্থার সৃষ্টি হয়েছে। “
ক্যাম্প-ইনচার্জ বলেন, ” ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের মাঝে আগ্রহের পাশাপাশি উৎসাহ-উদ্দিপনা বিরাজ করছে। মঙ্গলবার কুতুপালং ২-ইস্ট সহ কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভাসানচর যেতে স্বেচ্ছায় আগ্রহ প্রকাশকারি রোহিঙ্গারা সচেতনতামূলক র্যালী বের করেছেন। “
মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, যারা ভাসানচর যেতে স্বেচ্ছায় আগ্রহ প্রকাশ করছেন তাদের নাম তালিকাভূক্ত করা হচ্ছে। আগামী শীত মৌসুমে স্বেচ্ছায় তালিকাভূক্ত হওয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচর স্থানান্তরের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply