শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষিদের জবানবন্দি ও জেরার বিষয়বস্তু নিয়ে গণমাধ্যম কর্মিদের সঙ্গে কথা না বলার জন্য উভয়পক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত; যাতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে না পারে।
রোববার সন্ধ্যায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দ্বিতীয় দফায় প্রথম দিনে ৩ নম্বর সাক্ষির জবানবন্দি ও জেরা শেষে আদালত থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
এ নিয়ে মামলার ৩ জন সাক্ষির জবানবন্দি ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে মামলার ৩ নম্বর সাক্ষি মোহাম্মদ আলীর জবানবন্দি গ্রহহণের মধ্য দিয়ে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতের বিচার কাজ শুরু হয়। পরে তার জবানবন্দি গ্রহণের পর আসামিদের আইনজীবীর জেরা শেষে দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনের বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
এর আগে গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং দুই নম্বর সাক্ষি ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম ইসলাম।
রোববার সকাল ৯ টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মামলার ১৫ আসামিকে প্রিজেন ভ্যান করে কড়া পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়।
পিপি ফরিদুল বলেন, রোববার মামলার দ্বিতীয় দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনে একজন সাক্ষির জবানবন্দি ও আসামিদের আইনজীবীর জেরা করা সম্ভব হয়েছে। এতে এ পর্যন্ত মামলার ৮৩ জন সাক্ষির মধ্যে ৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। সোমবার থেকে মামলার অপরাপর সাক্ষিদের জবানবন্দি নেবেন আদালত। যা চলবে আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “ সিনহা হত্যা মামলাটি স্পর্শকাতর মামলা। বিচারধীন এ মামলার সাক্ষিদের জবানবন্দি ও জেরার বিষয়বস্তু নিয়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের গনণমাধ্যম কর্মিদের সঙ্গে কথা না বলতে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন। যাতে মামলার বিচার কাজ প্রভাবিত হয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়। “
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, মামলার ৩ নম্বর সাক্ষি মোহাম্মদ আলী প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ঘটনার ব্যাপারে নিখুঁতভাবে আদালতের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে ঘটনার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠেছে।
তবে আদালতের নির্দেশনা থাকায় সাক্ষির জবানবন্দির বিষয়বস্তু নিয়ে গণমাধ্যম কর্মিদের সঙ্গে আলাপ করতে অনীহা প্রকাশ করেন বাদীপক্ষের এ আইনজীবী।
আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত বলেন, আদালতের নির্দেশনা থাকায় সাক্ষির জবানবন্দি ও জেরার বিষয়বস্তু নিয়ে বলা সম্ভব না। তবে পর্যবেক্ষনের কথা যদি বলা হয় সাক্ষির জবানবন্দির মধ্যে বৈপরিত্য রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন। এটি আদালতের কাছে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন।
গত বছর ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় গত বছর ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় লিয়াকত আলীকে। আদালত মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয় র্যাবকে।
ঘটনার ৬ দিন পর ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৭ পুলিশ সদস্য আত্মসমপর্ণ করেন।
ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি এবং রামু থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
পরে র্যাব পুলিশের দায়ের মামলার ৩ সাক্ষি এবং শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) এর ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা পুলিশের সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মাকে। সর্বশেষ গত ২৪ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব।
গত বছর ১৩ ডিসেম্বর র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের তৎকালীন দায়িত্বরত সহকারি পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত ২৭ জুন আদালত ১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এতে সাক্ষি করা হয় ৮৩ জনকে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply