শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৫ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : ভারি বর্ষণে আবারো প্লাবিত হয়েছে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ও বাহারছড়া এ দুইটি ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম। এতে করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, জোয়ারের পানির আঘাতে ভাঙ্গনের হুমকির মুখে পড়েছে ১২১কোটি টাকার নির্মাণাধীন শাহ পরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধটি। এতে করে ওই এলাকার ৪০হাজার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
রোববার ভোররাত থেকে বিকাল তিনটায় পর্যন্ত উপজেলায় ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হ্নীলা ও বাহারছড়া ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ১ হাজার ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন হ্নীলা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী ও বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন।
তারা বলেন, এই দুইটি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম ডুবে গেছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন আর প্রবল জোয়ারের পানিতে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এরমধ্যে গত শনিবার তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজন বাড়িও ফিরছিলেন। (আজ) রোববার নতুন করে বৃষ্টিপাতে আবারও পাহাড়ি ঢলের পানিতে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার।
প্লাবিত ১৮টি গ্রাম হল- হ্নীলার ওয়াব্রাং, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, সিকদারপাড়া, উলুচামারি, রঙ্গিখালী, লামারপাড়া, কোনাপাড়া ও বাহারছড়ার শামলাপুর, শিলখালী, চৌকিদারপাড়া, বাইন্না পাড়া, কাদের পাড়া, হলবনিয়া, জাহাজপুরা, হাজাম পাড়া , মারিশবনিয়া, মাথাভাঙ্গা ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালীর কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে বেশিরভাগ এলাকা। টেকনাফ-কক্সবাজার আঞ্চলিক সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট, বসতঘর, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা ও মসজিদ হাটু ও কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে শিশু-নারী- পুরুষরা অন্যত্রে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে দেখা গেছে। এ দুইটি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্রধান সড়কগুলোতে পানিতে ডুবে থাকা দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
হ্নীলার লামার পাড়ার গৃহবধূ হাসিনা বেগম বলেন, ঘরের ভিতরে কোমর সমান পানি। তাই ছেলে মেয়েদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছি। এসময় বাড়িতে কেউ না থাকলে চুরির ঘটনা ঘটে। বাড়ি পাহারা দিতে স্বামী ঝুঁকি নিয়ে সেখানে রয়েছেন। এভাবে কি মানুষের জীবন চলে। আমরা কোন ত্রাণ সামগ্রী চাই না । পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাশনের সরকারের পদক্ষেপ চাই।
লামারপাড়ার বাসিন্দা ছৈয়দ আলম বলেন, হঠাৎ এভাবে ভারী বর্ষণ হবে কল্পনাও করিনি। এবছর বর্ষার শুরুতেই এ এলাকায় পানি উঠেনি। বর্ষার শেষে আচমকা অবিরাম বর্ষণের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বসত-ঘরে ঘুমানোর সুযোগ নেই। এলাকার স্লুইচগেইট আর খাল খনন খুবই জরুরী।
বাহারছড়ার স্থানীয় বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ করে এলাকা বসতঘর ও রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ওই সময় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বর্তমানে পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন ১০টি গ্রামের মানুষ। এসব মানুষকে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ।
হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে সুইচগেট না থাকায় বারবার এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পাশাপাশি খাল খনন করা হলে এসব দুর্ভোগ থেকে স্থানীয় লোকজন পরিত্রাণ পাবে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিনে ভারী বর্ষণে টেকনাফে পাহাড় ধসে এক পরিবারের ৫ শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছিল । প্লাবিত হয়েছিল একটি পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নের একাধিক গ্রাম।
ইউএনও পারভেজ চৌধুরী আরও বলেন, আবারও নতুন করে পাহাড়ি ঢলে দুইটি ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ওইসব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ভাঙ্গনের হুমকির মুখে শাহপরীরদ্বীপ বেড়িবাঁধের বিষয় টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শাহপরীর দ্বীপ এলাকার প্রবীণ শিক্ষক মাস্টার জাহিদ হোসেন বলেন, নির্মাণাধীন নাফ নদীর সীমান্ত সড়ক ও পশ্চিমের বঙ্গোপসাগরে নির্মাণাধীন ১২১ কোটি টাকার বেড়িবাঁধের স্থাপন করা ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। ২০২০সালের ৩০ শে জুন এ বাধের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গাফিলতির কারণে এটি নির্মান কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা করা না হলে বাঁধটি ভেঙ্গে আবারো ৪০ হাজার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply