রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শহীদদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও অনুদান প্রদান করেছে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ কুতুবদিয়ায় বিশ্ব নদী দিবস পালিত টেকনাফে নিখোঁজ মেয়ে শিশুর বস্তিাবন্দি মরদেহ উদ্ধার ৩৫ হাজার ইয়াবা সহ পুলিশ কনস্টেবল সহ আটক ২ সেনা কর্মকর্তারা ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত : মব জাষ্টিস নিন্দনীয় ৪৮ মামলার আসামী জিয়াবুলের আস্তানায় যৌথ বাহিনীর অভিযান : অস্ত্র উদ্ধার টেকনাফে ৩১ দখলদারের থাবায় ১৪ বছরে নিশ্চিহ্ন ৩০০ বছরের পুরোনো বৌদ্ধ বিহার আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কার পেল সায়মন বিচ রিসোর্ট ও সায়মন হেরিটেজ টেকনাফে ৫ কোটি টাকার মূল্যের ১ কেজি আইসসহ গ্রেপ্তার ১ পেকুয়ায় শহীদ ওয়াসিমের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সাথে সাক্ষাত করলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ

ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, সীমান্তে টহল দ্বিগুণ

সুজাউদ্দিন রুবেল : কক্সবাজারের সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হচ্ছে। এতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কঠোর সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এর পাশাপাশি সীমান্তে বিজিবির টহল সংখ্যাও দ্বিগুণ করা হয়েছে।

গেল এক সপ্তাহে ৫০ জনের অধিক নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলতে রাজী হননি অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং ইউএনএইচসিআর।

এদিকে নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।

বিজিবির দেয়া তথ্য মতে; চলতি বছরের গেল ৪ মাসে মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায় ১৪৭ জন রোহিঙ্গা। তাদেরকে বিজিবির কক্সবাজার ও টেকনাফ ব্যাটালিয়ন সীমান্তে প্রতিহত করে স্বদেশে ফেরত পাঠায়। ফেরত পাঠানোর মধ্যে পুরুষ ১০৫ জন, নারী ২৮ জন ও শিশু ১৪ জন। গেল ৪ মাসের মধ্যে এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। যার সংখ্যা ছিল ৬২ জন।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী; জানুয়ারি মাসে কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মোট ১৬ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। তারমধ্যে টেকনাফে ৭ জন ও কক্সবাজারে ৯ জন। পরে সীমান্তের স্ব-স্ব পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মোট ১৩ জন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। তার মধ্যে টেকনাফে ১০ জন ও কক্সবাজারে ০৩ জন। পরে সীমান্তের স্ব-স্ব পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

মার্চ মাসে কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ৫৬ জন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। তারমধ্যে টেকনাফে ৪৮ জন ও কক্সবাজারে ০৮ জন। পরে সীমান্তের স্ব-স্ব পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

এপ্রিল মাসে কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না করলেও টেকনাফ ব্যাটালিয়নের সীমান্ত দিয়ে ৬২ জন অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। যার মধ্যে ৫২ জন পুরুষ, ৫ জন নারী ও ৫ জন শিশু। পরে সীমান্তের স্ব-স্ব পয়েন্ট দিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

এবিষয়কে বিজিবি হেডকোয়ার্টার পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফয়জুর রহমান, এসপিপি, পিএসসি বলেন; মিয়ানমারের নাগরিকদের সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা দেখতে পাচ্ছি। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তে বিজিবির টহল সংখ্যাও দ্বিগুণ করা হয়েছে। অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টাও যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনি তাদেরকে প্রতিহত করার প্রচেষ্টাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাই হচ্ছে সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি; যা পুরোপুরি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিজিবি প্রতিনিয়তই অবৈধ অনুপ্রবেশকারি মিয়ানমারের নাগরিকদের প্রতিহত করে স্বদেশে পাঠিয়েছি।

লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ফয়জুর রহমান, এসপিপি, পিএসসি আরও বলেন, “কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্তের ব্যাপকতা, ভূমির গঠন-ধরন সবকিছুই সবার জানা। এত ব্যাপক সীমান্তে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকার মতো পরিস্থিতি আমাদের এখনো হয়নি। তবে বিজিবির দৃশ্যমান, সম্ভাব্য যেসব পয়েন্টগুলো, দুর্বল এলাকাগুলোতে টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়াও সার্ভিলেন্স সিস্টেম, হাই-স্পীড ইঞ্জিন বোট, নদীতে রাতের বেলায় টহলের মধ্যে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে প্রতিহত করে স্ব-স্ব পয়েন্ট ফেরত পাঠানো হচ্ছে। গেল কয়েক সপ্তাহে প্রতিহত করার সংখ্যাটা দেখলে বুঝা যাবে; অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থান।”

এদিকে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, গেল এক সপ্তাহে ১৬ এপিবিএনের দায়িত্বে থাকা টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে নতুন করে ২২ জন রোহিঙ্গা এসেছেন। তারা ২০১৭ সাল থেকে মিয়ানমারের জেল হাজতে ছিল।

“সর্বশেষ রোববার (০২ মে) মিয়ানমারের মংডুর ওয়াবেক গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আহাম্মদ (৭৫), সালেহ আহাম্মদ (৭২) ও বড় গর্জের বিলের বাসিন্দা মোঃ রহমত উল্লাহ (৩৫) বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা তাদেরকে হেফাজতে নিয়েছে। আর বিষয়টি অত্র ক্যাম্পের সিআইসিকে অবহিত করা হয়েছে।”

নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, “গেল ২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সাথে সহিংসতা চলাকালে তারা ৩ জনই সেখানে গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে ছিল। কিছুদিন পূর্বে তারা জেল হতে মুক্তি পেয়ে রোববার (০২ মে) সকাল ১০টায় বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে টেকনাফের শালবাগান ক্যাম্পে আগে থেকেই বসবাসরত তাদের পরিবারের নিকট এসে আশ্রয় নিয়েছে।”

১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলাম আরও বলেন, “শুধুমাত্র ১৬ এপিবিএন আওতাধীন ক্যাম্প নয়; এখানে আরও দুটি এপিবিএন রয়েছে, তাদের অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও জানিয়েছেন; তাদের ক্যাম্পেও কিছু সংখ্যক নতুন রোহিঙ্গা এসেছেন। সব মিলিয়ে ৫০ জনের বেশি নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করেছে।”

“এখন ক্যাম্পের মধ্যে নতুন কেউ আসলে সেটা নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়ে যাচ্ছি। এরপর ক্যাম্পে নতুন রোহিঙ্গাদের আগমনের বিষয়টি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারকে অবহিত করা হয়। তারপর এসব রোহিঙ্গাদের উখিয়ার ইউএনএইচসিআরের ট্রানজিট পয়েন্টে পাঠানো হয় বলেও জানায় এপিবিএনের এই কর্মকর্তা।”

এদিকে কথা হয় গত ২৯ এপ্রিল টেকনাফে শালবাগান ক্যাম্পে আসা মিয়ানমারের মংডু’র বড় গর্জের বিল এলাকার সোনা আলীর সাথে। তিনি বলেন, মিয়ানমারে ৪ বছর ৫ মাস ৫ দিন কারাগারে ছিলাম। এরপর চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল মিয়ানমার সরকার জেল থেকে মুক্তি দিয়েছে। এরপর গত ২৯ এপ্রিল বাংলাদেশে এসেছি। প্রথমে মিয়ানমারের মংডু থেকে শীলখালি, তারপর উনচিপ্রাং হয়ে সাঁতার কেটে বাংলাদেশে চলে আসি। এরপর শালবাগান ক্যাম্পে আসি। এখন শালবাগান ক্যাম্পে স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে আছি।

এদিকে নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কক্সবাজারের সচেতন মহল।

কক্সবাজার পিপল্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের বন্দি অনেক রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে মুক্তি পেয়েছে। তারা এখন সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা নানা কৌশলে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। স্বাভাবিকভাবে যে রোহিঙ্গাগুলো মিয়ানমারের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেছে তাদের মিয়ানমারেরই থাকার কথা। কিন্তু তারা অনুপ্রবেশ করে এখন বাংলাদেশে ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় পাচ্ছে। এভাবে নতুন করে রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় পায়; তাহলে মিয়ানমারে থাকা অন্যান্য রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে উৎসাহিত হবে।

ফরহাদ ইকবাল আরও বলেন, “সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাব; সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে নতুন করে মিয়ানমারের নাগরিক একজন রোহিঙ্গাও যাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।

সম্প্রতি মিয়ানমারের সামরিক সরকার ১৩৭ জন বিদেশিসহ মোট ২৩ হাজার ৪৭ বন্দিকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে ৬ শতাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে; যারা ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট সহিংসতার আগে ও পরে আটক হয়েছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888