সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৩ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : থাইল্যান্ড সংলগ্ন মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের কাছে দেশটির একটি সামরিক চৌকিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোর থেকে মূলত বিদ্রোহী কারেন আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাটিতে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই শুরু হয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন বলছে, তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে তারা সেনাবাহিনীর অবস্থানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
মিয়ানমারের ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এটি সবচেয়ে তীব্র লড়াইগুলোর মধ্যে একটি বলে জানিয়েছে রয়টার্স। মিয়ানমারের সহিংসতা বন্ধে তারা জান্তার সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার নেতারা এমন কথা বলার কয়েকদিনের মধ্যে এ লড়াইয়ের খবর এল।
থাইল্যান্ডের সালউইন নদীর দুই পাড়ের গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সূর্য ওঠার আগে থেকেই ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা ভিডিওতে বন ঘেরা পাহাড়ের একপাশে আগুন ও ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে।
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) বাহিনীগুলো স্থানীয় সময় ভোর ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে সীমান্ত চৌকিটি দখল করে নেয় বলে গোষ্ঠীটির বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান পাদো সাও তাও নী রয়টার্সকে জানিয়েছে।
শিবিরটি দখল করে সেটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কতোজন হতাহত হয়েছে কেএনইউয়ের সদস্যরা তা পরীক্ষা করে দেখছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য কয়েকটি জায়গায়ও দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এ মুখপাত্র, কিন্তু বিস্তারিত জানাননি।
স্থানীয় মিডিয়া গোষ্ঠী ‘কারেন তথ্য কেন্দ্র’ জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর ঘাঁটিটি ছারখার করে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীরা সৈন্যদের দৌঁড়ে পালাতে দেখছেন বলে জানিয়েছে তারা।
কারেনদের এসব দাবির বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
মিয়ানমারের ওই ঘাঁটির সৈন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকা থাইল্যান্ডের গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কেএনইউয়ের বাহিনীগুলো এই ঘাঁটিটি ঘেরাও করে রেখেছিল তাই সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ছিল না।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করার পর থেকেই ওই সীমান্ত অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় কেএনইউ বাহিনীগুলোর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এক দশক ধরে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কার চলাকালে দেশটির অস্থির সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে অপেক্ষাকৃত শান্তি বিরাজ করছিল, কিন্তু সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করায় গণতান্ত্রিক সংস্কার থমকে গেছে আর সীমান্ত অঞ্চলগুলোতেও অস্থিরতা ফিরে এসেছে।
কারেন গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর বোমাবর্ষণসহ গত কয়েক সপ্তাহের সহিংসতায় ২৪ হাজার লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং তাদের অধিকাংশই জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
থাইল্যান্ডের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা মায়ে হং সোনের এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলের ওই লড়াইয়ের কারণে থাইল্যান্ডের ভেতরে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারের প্রায় দুই ডজন সশস্ত্র গোষ্ঠী জান্তাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে শুরু হওয়ার বিক্ষোভ দমনে জান্তা বাহিনী এ পর্যন্ত ৭৫০ জনেরও বেশি বেসামরিককে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির একটি মানবাধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠী।
শনিবার জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার নেতাদের বৈঠকের পর থেকে মিয়ানমারের অন্যান্য এলাকায় তুলনামূলকভাবে কম রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। ওই বৈঠকে মিয়ানমারের সংকটের একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করা হয়েছে।
কিন্তু মিয়ানমারের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে সোমবার মান্দালয়ে গুলিতে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তবে কী পরিস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটেছে তা পরিষ্কার হয়নি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply