শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হকের নারী জনিত ঘটনার পর পুলিশ সদস্যদের নাম ব্যবহার করে কতিপয় ব্যক্তি বিশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট দিয়ে বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট ছড়িয়ে যে বা যারা পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান জেলা পুলিশের এ কর্তাব্যক্তি।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গত ৩ মার্চ নারানয়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে হেফাজত ইসলামের নেতা মামুনুল হকের নারী জনিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের মহেশখালী ও টেকনাফসহ কয়েকটি এলাকায় সংগঠনটির উত্তেজিত নেতাকর্মিরা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ভাংচুর, থানায় হামলার চেষ্টা ও গাড়ী ভাংচুরসহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় মহেশখালীতে পুলিশ বাদী হয়ে ২ টি এবং আওয়ামী লীগের এক নেতা বাদী হয়ে ১ টি মামলা দায়ের করে। এছাড়া টেকনাফে সংঘটিত ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১ টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় আসামী করা হয় অনেককে।
এর প্রেক্ষিতে মহেশখালী থানার সামনের জনৈক দোকানী ‘মোহাম্মদ রবি’ নিজের ফেইসবুক আইডিতে ‘ওসি মোহাম্মদ আব্দুল হাই’র বরাতে’ সোমবার ( ৫ এপ্রিল ) একটি পোস্ট দেন। এছাড়া আরো কতিপয় ব্যক্তি একই ধরণের পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছেন।
‘গর্বিত বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, এমন ওসি চাই বাংলাদেশের প্রতিটি থানায়’ শিরোনামের পোস্টটিতে বলা হয়েছে, “ মহেশখালীতে হেফাজতের বিভিন্ন জায়গায় হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় যদি কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি নথিভূক্ত হয়ে থাকেন তবে সরাসরি আমার (ওসি) সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হইল। আমি দায়িত্বে থাকতে কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি অত্র মামলায় নথিভূক্ত হতে দেব না। মোহাম্মদ আব্দুল হাই, অফিসার ইনচার্জ (ওসি), মহেশখালী থানা, কক্সবাজার। ”
এছাড়া কক্সবাজার শহরের পাহাড়দতলী এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমকে জনৈক ব্যক্তি গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছে এবং তিনি (জাফর আলম) থানায় মামলা করতে গেলে ওসি কটুক্তি করে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ তুলে সোমবার জনৈক ‘আমিনুল ইসলাম’ নামের এক ব্যক্তি নিজেদের ফেইসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দেন।
‘শেখ হাসিনা যেখানে হেফাজতের কাছে নতি স্বীকার ককরে চুপ করে আছে, সেখানে আপনাকে ওদের মিছিল প্রতিহত করতে কে বলেছে: ওসি কক্সবাজার সদর থানা’ শিরোনামের পোস্টটিতে বলা হয়েছে, “কক্সবাজার শহরে আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আলমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার হুমকি। হুমকিদাতা বিএনপি-জামাত ক্যাডারদের বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় গেলে সদর থানার ওসি শেখ মুনিরুল গিয়াসের কটুক্তি এবং মামলা গ্রহণ না করবার তীব্র প্রতিবাদ করছি। এই হেফাজত প্রেমী ওসির দ্রুত বরখাস্ত দাবী করছি।
হেফাজত নেতা মামুনুল হকের নারী কেলেংকারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়তলীতে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা। যেখানে দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের কাছে কাপুরুষের মতো আত্মসমর্পণ করেছে আওয়ামী লীগ এর জেলা-উপজেলার নেতারা, সেখানে কক্সবাজার শহরে এদের বাঁধা দেন কক্সবাজার পৌর আওয়ামী ললীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি জাফর আলম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁর বাড়ীতে হামলা চালায়। একই সাথে সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আলমকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। এর প্রেক্ষিতে জাফর আলম কক্সবাজার সদর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে ওসি গিয়াস তাকে কটুক্তি করে বলেন যে, সারাদেশে হেফাজতের কাছে শেখ হাসিনা নতি স্বীকার করেছে সেখানে আপনি কার অনুমতি নিয়ে তাদের বাঁধা দিতে গেলেন? এ রকম আরো কিছু বাজে কথা বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন যে, তিনি মামলা নেবেন না। নিজ দলের সরকার ক্ষমতায়, কে বলবে? জামাত এলাকা সাতক্ষিরা থেকে বদলি হয়ে আসা ওসি গিয়াসের দ্রুত অপসারণ চাই। এইচ রহমান মিলু। ”
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশের মত কক্সবাজারেও হেফাজত ইসলাম কান্ডের পর পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে যে ধরণের পোস্ট দিয়েছেন, এতে পুলিশের মত শৃংখলিত একটি বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এই পোস্টগুলো পুলিশের নজরে আসার পরপরই পোস্টদাতাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে প্রকৃত ঘটনার সাথে ফেইসবুকে দেয়া পোস্টগুলোর বক্তব্য বা মতামতের কোন ধরণের মিল নেই। যাতে মূল বিষয়কে রঙ মাখিয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপন বা প্রচার করা হচ্ছে।
এসময় মহেশখালীর জনৈক মোহাম্মদ রবি’র দেয়া পোস্ট সম্পর্কে এসপি বলেন, “গত ৩ মার্চ রাতে নারায়নগঞ্জে হেফাজত ইসলাম নেতা মামুনুল হকের নারী জনিত ঘটনার পরপরই স্থানীয় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মিরা মহেশখালী উপজেলা সদর ও কালারমারছড়ায় মিছিল বের। এক পর্যায়ে হেফাজত নেতাকর্মিরা ইট-পাটকেল ছুঁড়ে থানায় হামলার চেষ্টা, ভুমি অফিস ও আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাংচুরসহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২ টি এবং স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। এতে আসামী করা হয় অনেককে।
“ সোমবার সকালে এর প্রেক্ষিতে তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সাংবাদিকরা থানায় যান। সাংবাদিকদের এসময় ওসি আব্দুল হাই জানিছেন, মামলায় নিরাপরাধ কাউকে আসামী করা হবে না। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার এবং গ্রেপ্তারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চিহ্নিত অপরাধীদের আসামী করা হবে। ”
সেই বিষয়টি জনৈক ‘মোহাম্মদ রবি’ নিজের ফেইসবুক আইডিতে ওসি’র বক্তব্যের বরাতে অতিরঞ্জিত করে পোস্ট দিয়েছেন বলেন হাসানুজ্জামান।
এদিকে কক্সবাজার শহরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাফর আলমকে কথিত গুলি করে হত্যার হুমকি এবং নাশকতার ঘটনায় বাঁধা দিতে তার (জাফর) বাড়ীতে হামলা সংঘটিত হওয়ার বিষয়ের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন জেলা পুলিশ সুপার।
হাসানুজ্জামান বলেন, “ কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি জাফর আলম জানিয়েছেন, গত ৩ মার্চ রাতে কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীতে হেফাজত ইসলামসহ বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মিরা নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। এসময় তিনিসহ স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মিরা বাঁধা দেন। এতে সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গুলি করে হত্যার হুমকী দেয়। পরে তার (জাফর আলমের) বাড়ীতে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পরে তিনি থানায় মামলা করতে আসেন। ”
“ এসময় কক্সবাজার সদর থানার ওসি জানিয়েছেন, পুলিশকে না জানিয়ে কেন তিনি নাশকতার কাজে বাঁধা গেলেন? এতে তো বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারতো। ঘটনার খোঁজ-খবর নিয়ে সত্যতা পেলে মামলা নেয়া হবে ওসি জানায়। ”
পুলিশ সুপার বলেন, “ গত ৩ মার্চ কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীতে হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মিদের দ্বারা কোন ধরণের নাশকতা সৃষ্টির ঘটনা ঘটেনি। তারপরও এ ধরণের অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতার পক্ষ উত্থাপিত হওয়ায় ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে সত্যতা পেলে মামলা নথিভূক্তের কথা জানানো হয়। ”
হাসানুজ্জামান জানান, ফেইসবুকে দেয়া পোস্টের ব্যাপারে জাফর আলমের সঙ্গে সরাসরি কথা হয়েছে। এতে পোস্টদাতা আমিনুল ইসলামকে তিনি চিনেন না বলে জানায়। এছাড়া পোস্টে ওসি’র বরাতে যে ধরণের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এ রকম তিনি (জাফর) কাউকে বলেননি বলে স্বীকার করেন।
স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সঙ্গে জাফর আলম ও তার লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন জমি নিয়ে বিরোধ চলার তথ্য জানিয়ে এসপি বলেন, জমি বিরোধীয় ঘটনায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করতে জাফর আলম গত ২৮ মার্চ থানায় এসেছিলেন। তবে জমি বিরোধের ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা থাকায় থানায় মামলা নথিভূক্ত করা হয়নি। এ নিয়ে ওসি’র উপর তার (জাফর) আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল।
এখন ওই ক্ষোভের বশীভূত হয়ে জাফর আলম প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে কিনা তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে বলেও জানান হাসানুজ্জামান।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বা যারা পুলিশ সদস্যদের নাম ব্যবহার করে বিতর্কিত পোস্ট ছড়াবে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান পুলিশ সুপার।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply