রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১২ পূর্বাহ্ন
টেকনাফ প্রতিনিধি : টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর ২৩ নম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির থেকে চতুর্থ দফায় বৃহস্পতিবার আরও ১৩৩টি পরিবারের ৬৩৪জন রোহিঙ্গা নাগরিককে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এর আগে প্রথম দফায় ১৩ জানুয়ারি বুধবার ১৪৪ পরিবারের ৬৭০, দ্বিতীয় দফায় ১৪ ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ১৪১ পরিবারের ৬৬৭, তৃতীয় দফায় ৩ ফেব্রুয়ারি বুধবার ১৫০ পরিবারের ৬৬৬ রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে নেওয়া হয়েছে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থীশিবিরে।
এ পর্যন্ত ৫৬৮ পরিবারের ২হাজার ৬৩৭জন রোহিঙ্গা নাগরিককে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থীশিবিরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এ তথ্যটি বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বাহারছড়ার শামলাপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিনিয়র সহকারী সচিব) পুলক কান্তি চক্রবর্তী।
তিনি বলেন, (আজ) গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১১টি বাস ও ১৬টি ট্রাক (রোহিঙ্গাদের মালামাল ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র) করে রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শিবিরে নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ শিবিরে বসবাসরত সকল রোহিঙ্গা নাগরিককে উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ শিবিরে ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছিল। এ স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বাহারছড়া ইউপির চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন বলেন, টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর ২৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরটি অবস্থান মেরিন ড্রাইভ ও সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন এলাকায়। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের গুরুত্ব বিবেচনা করে এবং পর্যটন এলাকা হিসেবে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ শিবিরটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তারই সূত্র ধরে,বাহারছড়ার শামলাপুর ক্যাম্পটি খালি করে রোহিঙ্গাদের উখিয়াসহ অন্য ক্যাম্পে নেওয়া হচ্ছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, সরকারের নির্দেশনায় শামলাপুরে এ শিবির খালি করে রোহিঙ্গাদের উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরে নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত চতুর্থ দফায় সর্বমোট ৫৬৮ পরিবারের ২হাজার ৬৩৭জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাহারছড়ার শামলাপুর ২৩ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের বিভিন্ন ব্লক থেকে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শিবিরে যেতে ইচ্ছুক এমন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে স্থানান্তর করা হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের (আরআরআরসি) মাধ্যমে এ স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করা হলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সহযোগিতা করছেন।
স্বেচ্ছায় স্থানান্তর হওয়া রোহিঙ্গা নাগরিক বশির আহমদ, জমিলা খাতুন, দিলদার বেগম ও অছিউর রহমান বলেন, ২০১২ সালের জুলাই মাসে আকিয়াব থেকে তারা নৌকায় করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এরপর বাহারছড়ার শামলাপুর ঝাউবাগানের ভিতরে ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস গড়ে তোলা হয়েছিল। এরমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ঝাউবাগান থেকে উচ্ছেদ করে মনখালি সেতু সংলগ্ন এলাকায় স্থানান্তর করেন।
এরপর ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্টের মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ও উগ্রপন্থী মগদের অত্যাচার, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে প্রাণরক্ষাথে নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে আরও ৬ হাজারের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন এই শিবিরে। বাংলাদেশ সরকার উদার মানবতা দেখিয়ে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। উন্নত বসবাসের জন্য সিআইসি এর মাধ্যমে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরে চলে যাচ্ছি।
শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের দলনেতা (মাঝি) আবুল কালাম বলেন, এ শিবির থেকে উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে পর্যায়ক্রমে সকল রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হবে। এ শিবিরের রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত করে বাহারছড়ার পাহাড়ের পাদদেশে পালিয়ে থাকছে। পাশাপাশি বিভিন্ন নৌকায় শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছেন। এতে করে এলাকায় অপরাধ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের শিবিরের মধ্যে রাখতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply