শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ অপরাহ্ন
গত ২৮জানুয়ারি ২০২১ তারিখ আমার জন্মদিন। এ বছর পঞ্চাশতম জন্মদিবস পার হলো
জীবন এখন অর্ধশতকের ঘরে। আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন বিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় কর্মাধ্যক্ষগণ তাঁদের ইচ্ছে মতো বিদ্যালয়ের ফর্মে তারিখ বসিয়ে দিয়েছেন। আবার সরকারি ভাবে আমরা যাকে জাতীয় পরিচয় পত্র বলি সেখানেও ওভাবে বসিয়ে দিয়েছেন। আর আমার বাবার ডায়েরিতে এইদিন টি লেখা আছে।
আমার শৈশবে কেউ ঘটা করে আমাদের ঘরে কোন ভাইবোনের জন্মদিন পালন করতে দেখিনি। আমার বাবামায়ের জীবিত সন্তান পাঁচ পুত্র ও দুই কন্য আর অকাল প্রয়াত এক ভাই এক বোন মোট নয় সন্তানের নাম জন্মক্ষণ জন্মসন -তারিখ বাংলা ও ঈসায়ী বর্ষ আলাদা ভাবে বাবা লিখে রেখেছেন।
বাবার ডায়েরির সূত্র মতে ২৮জানুয়ারি ১৯৭১ সন তারিখ টি আমার মনে আছে। বাবা-র ডায়েরি টি তার নিজস্ব আলমারিতে সংরক্ষিত ছিলো। একবার আলমারি টি খোলার সময় আমি তাঁর পাশে ছিলাম বিধায় ডায়েরি থেকে এ তথ্যটি আমি জানতে পারি। বর্তমানে বাবার ডায়েরি এক আলমারি বই অন্যান্য কাগজ পত্র আমার হাতে নাই।কারণ বাবা যখন প্রয়াত হন তখন আমি ফেরারি।
তো ওসব এর অধিকার ও সংরক্ষণের অটো দায়িত্ব গিয়ে বর্তায় আমার সকলের বড়ো ভাই ও তার স্ত্রীর হাতে, প্রশ্ন করতে পারেন মায়ের হাতে নয় কেন? আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার একপ্রকার অসহায় জীবনযাপন করেছেন পুত্রবধূদের হাতে, কারণ তিনিও অসুস্থ ছিলেন আর স্বভাবে খুবই শান্ত লাজুক নিরিহ প্রকৃতির মহিলা। আমার মা এরপরের বছর শীতের রাতে প্রয়াত হন, তখন আমি জেলে।
ফেরারি জেলবাসের কারণে আমি আমার প্রয়াত পিতামাতার পাশে থাকতে পারিনি তাদের দায়িত্ব ও পালন করতে পারিনি আদরের কনিষ্ঠ সন্তান হিসাবে। এসব কারণেও বাবার আলমারিতে রাখা বই ডায়েরি ও অন্যান্য কাগজ পত্র আমার হাতে আসেনি দেখার সুযোগও হয়নি, এমনকি এখনো হয়নি।এর অন্যতম কারণ হলো একান্নবর্তী যৌথ পরিবার টি আর যৌথ থাকতে পারেনি। বাবামায়ের পুত্র পুত্রবধূদের মধ্যে লোভ হিংসা-বিদ্বেষের কারণে হাস্যোজ্জ্বল পরিবার ভেঙে খানখান হয়ে যায়।
এই ভাঙন রোধ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি জেলে থাকার কারণে আর জেলে না থাকলেও আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। কারণ আমার বড়ো দুই ভাই চরিত্র গতভাবেই স্ত্রৈণ প্রকৃতির।
ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইবুকের বদৌলতে জন্মদিন পালন করাটা একটা জাতীয় সংস্কৃতি হয়ে গেছে, তারই কল্যানে আমার জন্মদিনটি পালন করা টা আমার শুভার্থীরা নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়েছেন।
তো আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রায় তিন-চার বছর ধরে তারা নিজ উদ্যোগে জন্মদিন পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবারের জন্মদিন পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠী ও ইস্টিশন লাইব্রেরি।
আমি সত্যেন শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম ভাই ও অনুজ মনির মোবারক কে আন্তরিক ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।কক্সবাজার তবলা ইন্সটিটিউট এর তিলক কর কে ও ধন্যবাদ দিতে হয় কারণ তার সংগঠন সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর সাথে যৌথতায় অংশ গ্রহণ করেছে।
ইস্টিশন এর অন্যতম কর্ণধার উন্নয়ন কর্মী অনুরনন সিফাত ও তার দল একদিন আগেই তার বইয়ের দোকানে আমার প্রকাশিত বই বিক্রয় উৎসব ঘোষণা করেছে সাথে জন্মদিনের দিন বাসায় আমার জন্য টিশার্ট জন্মদিনের কেক নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে হাজির এবং তাদের সাথে শ্রদ্ধেয় কবি অমিত চৌধুরী। কবি অমিত চৌধুরী আমাকে একটি বই উপহার দেন।
বিজয় মুখ এর মুখ্য সংগঠক সুরকার গীতিকার সঙ্গীত শিল্পী অজয় মজুমদার সিফাতের পরপর গিটার হাতে বাসায় উপস্থিত।
আমার বাসা মুলত দুপুর তিনটা থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্নজন এসে এসে আমাকে ফুলেল শুভেচছা জানাতে এসেছেন। সন্ধ্যার আগে আগে আসেন চট্টগ্রামের বিখ্যাত নারী আলোকচিত্রী মহিমা আক্তার ও কবি নাসের ভুট্টো। তিনি আমার জন্য বিভিন্ন নাস্তা সহযোগে আসেন।নাসের ভুট্টো কে সিগারেট আনতে বলি কারণ আমার সিগারেট ফুরিয়ে যায়।
আমার জন্মদিনের দু’দিন আগেই কক্সবাজারের অন্যতম অনলাইন পোর্টাল dbdnews24.com ঘোষণা করে জন্মদিন উপলক্ষে একটি বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
যেই ঘোষণা সেই কাজে নেমে পড়ে এই ঘোষণায় সাড়াদিয়ে লিখেছেন আমার অগ্রজ কবি কামরুল বাহার আরিফ, কবি গল্পকার আলম তৌহিদ, কবি চিত্রকর নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, সাগর শর্মা, নাসের ভুট্টো ওপলাশ দাশ। আর dbdnews24.com আমার প্রকাশিত বইয়ের পূর্বে যাঁরা আলোচনা লিখেছিলো সেই সব লেখাগুলো এক যায়গায় এনে সম্পাদক কে সরবরাহ করি তিনি প্রতিটি লেখা নতুন করে টাইপ করে কিছু লেখা সফটওয়্যার কনভার্ট করে পুনঃপ্রকাশের কষ্ট স্বীকার করেছেন তার জন্যও সম্পাদক কম্পিউটার অপারেটরের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার বই নিয়ে আলোচনা করেছেন কবি অনুবাদক গদ্যকার মোশতাক আহমদ, কবি গল্পকার আলম তৌহিদ, কবি গবেষক গীতিকার শামসুল আরেফীন, অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, কবি আজিজ কাজল।
আমি তাদের প্রত্যেকে আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা জানাই।
কৃতজ্ঞতা ধন্যবাদ জানাচ্ছি dbdnews24.com এর সম্পাদক প্রকাশক যুবনেতা জসিম আজাদ কে।কবি কামরুল বাহার আরিফ, আলম তৌহিদ, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য এর গদ্য কক্সবাজারের জনপ্রিয় পোর্টাল কক্সবাজার টাইমস coxbazartimes.com ও raisingcox.com বিশেষ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করায় কবি গল্পকার নুপা আলম ও গবেষক কালাম আজাদ এর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা ভালোবাসা।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা ধন্যবাদ জানাচ্ছি গতো কয়েকদিন ধরে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ও টুইটার মাতিয়ে রেখেছেন প্রত্যেকের প্রতি।
ধন্যবাদ যানাচ্ছি আমাকে যারা ফোন করে দেশবিদেশ থেকে মোবাইলে কল করে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রত্যেকের প্রতি। অনেকেই মোবাইলের মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রত্যেকের প্রতি।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি বিগত চারদলীয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার সাবেক ছাত্রনেতা জাতীয় শ্রমিক লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ আনসারী সহ শ্রমিক লীগের নেতা কর্মীরা বাসায় এসে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রাক্তন ছাত্রলীগ পরিষদ এর সদস্য ফর্ম পূরণ করিয়েছেন।
বিশেষ ধন্যবাদ ভালোবাসা জানাতে হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কক্সবাজার জেলা সংসদের বিপ্লবী সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেন ও মারুফ আদনান কে।তারা দু’দিন ধরে তারা নিজেরাও বিভিন্ন নেতা কর্মী পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য পুষ্পাঞ্জলি সহ নানান উপহার পাঠিয়েছেন।
২৮তারিখ দুপুর থেকে আমার বাসা আস্তে আস্তে হয়ে উঠে পুষ্পারণ্য। ফুলের মৌতাত সৌরভ সৌকর্যে আমার বেদনার্থ মন জ্বরায় কাতর দেহ প্রফুল্ল প্রশান্ত হয়ে উঠে।
আসলে মানুষের ভালোবাসা প্রাকৃতিক চিকিৎসা যে চিকিৎসা মুল্য দিয়ে মাপা যায় না।
জন্মদিন পরবর্তী দিন অর্থাৎ ২৯জানুয়ারি কবি গল্পকার আলম তৌহিদ, সাবেক ছাত্রনেতা কলামিস্ট বদরুল ইসলাম বাদল, গবেষক কালাম আজাদ এর মিষ্টান্ন সহযোগে বাসায় আগমন ও অনানুষ্ঠানিক সান্ধ্যাড্ডা অসাধারণ প্রাণবন্ত করে তুলে আড্ডারোরা। তাঁদের কে ধন্যবাদ অশেষ ধন্যবাদ জানাই।
এই সময়ে ফাপর ভাজা চিবুতে চিবুতে হাসি-ঠাট্টায় আড্ডা প্রাণবন্ত হয়ে যায়।
অণুরোনন সিফাত এর ইস্টিশন থেকে আমার যেসব প্রাণপ্রিয় পাঠক নৈনিতালের দিন ও শের এ মানিক বৈরাগী কিনেছেন তাঁদের প্রতিও অশেষ ভালোবাসা। আবার অনেকেই বাসায় এসে আমার বই কিনে অটোগ্রাফ সহ ছবি তুলেছেন এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করার ক্ষমতা আমার নাই।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার ভাগিনা ফিজিওথেরাপিস্ট সাজ্জাদ হোসেন পাভেল কে সে না আসলে অতিথি আপ্যায়নে বিঘ্ন হতো।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমার বউ জায়নূর বেগম শাহীন ও আবৃত্তি শিল্পী ছোটন দাশের নববধূ লবন্য মল্লিকদশ কে।তারা দু’জনেই অতিথি বরণ ও আপ্যায়ন আয়োজন করার জন্য।
প্রতিটি অনুষ্ঠানের অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুলত্রুটি থাকে এবং এসব ত্রুটিও অনুষ্ঠান সার্থকতার অংশ
তো এবারের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হচ্ছে সত্যেন সেন শিল্পী গোষ্ঠীর ব্যানার ও কেকে আমার নামের ভুল বানান।
আমার প্রিয় কবি-চিত্রকর নির্ঝর নৈঃশব্দ্য আমাকে নিয়ে একটি ভবিষ্যৎ দৈববাণী করেছেন কয়েক বছর আগে আমি হয়তো বাঁচব নুন্যতম পঞ্চান্ন বছর এবার সে বল্লো বড়জোর আর তিন বছর বাঁঁচবো।
আমিও তার সাথে একমত পোষণ করি।
আমি এখন যা বেঁচে আছি অতিরিক্ত সময় বেঁচে আছি কারণ একান্নবই সনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আজারাইল ফেরেশতার মূর্তরূপ শিবিরের হাত থেকে ডান পায়ের রগ ও পা কে শহীদ করে জীবন ফিরে পাই।দ্বিতীয়বার বিগত জোট সরকারের সময়ে রিমান্ড পরবর্তী পুলিশ কর্তার পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ অমান্য করে থানার রিমান্ড সেলে নিথর দেহ নিয়ে পড়ে থাকাও একপ্রকার পুলিশি আজরাইল কে ফাকি দিয়ে জীবন নিয়ে আদালতে উপস্থিত হওয়া।
বর্তমানে ভাঙাচোরা বক্রদেহ নিয়ে অসুস্থ হয়ে গৃহবন্দী জীবন নিয়ে মানুষের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকাটা ও এক ধরনের অপরাধ মনে করি।
তারপর ও এই অকার্যকর একজন শব্দচাষী মানুষের পরম ভালোবাসা আমাকে আবেগাপ্লুত করে। বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায় উৎসাহিত করে।
তারপর ও একশ্রেণির মানুষপ্রাণির আঘাত আমাকে নিয়ত শব্দচাষী করে তুলে, তাও কম পাওয়া নয়।
পরিশেষে বলতে চাই মানুষের ভালোবাসায় বাঁচব মানুষের ভালোবাসায় মরবো,মানুষের প্রবিত্র ভালোবাসা কে আমি নতজানু চিত্তে শ্রদ্ধা অভিবাদন জানাই।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply