মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ অপরাহ্ন

ট্রল ও কটুক্তির দুনিয়ায় রাজনীতির দ্রোনাচার্য ওবয়াদুল কাদের

মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম

ওবায়দুল কাদের একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। একেবারে তৃণমূল বলতে যা বুঝায়, সেখান থেকে ছাত্র রাজনীতির লম্বা পথ হেঁটে ‌ধাপে ধাপে আজকের অবস্থানে এসেছেন তিনি। আন্দোলন সংগ্রাম, জেলজুলুম বহু চড়াই-উৎরাই পার হওয়া এই মানুষটি শুধু রাজনীতির পথ ধরেই হাঁটেননি। কখনও নেতা হয়ে হেঁটেছেন রাজপথে, কখনওবা পথচারীর বেশ ধরে ফুটপাতে!

দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার লাইভ অ্যাকশনের কথা। আপনি হয়ত ভুলে গেছেন, তার কাজেকর্মে মুগ্ধ হয়ে এই আপনিই তাকে বাংলার ফাটাকেষ্ট বলে ডাকতেন। সব ভুলে আপনি স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যখন ফেসবুকে ট্রল কিংবা নগন্য কোন নিউজ পোর্টালের লিংক শেয়ারে ব্যস্ত। তখনই হয়তো দেশমাতার কথা ভেবে ঘুষ কিংবা উপঢৌকন নিতে অাপত্তি জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

রাজনীতির পাশাপাশি ওবায়দুল কাদের পেশাদার সাংবাদিকতাও করেছেন। দৈনিক বাংলার বাণীর সহকারী সম্পাদক ছিলেন। একজন পেশাদার সাংবাদিক আজ রাজনীতির শীর্ষ আসনে পৌঁছেছেন,অামার কাছে ওবায়দুল কাদের দেশের দুঃসময়ে কলম হাতে লড়াই করা সাংবাদিকের প্রতিচ্ছবি। অামার বাবা মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক নুরুল ইসলামের সহকর্মী হিসেবে একজন বন্ধুবাৎসল্য, সজ্জন, ব্যাক্তিত্ববান মানুষের প্রতিচ্ছবি তিনি।

আমাদের তরুণ প্রজন্ম আজ ওবায়দুল কাদেরের মত একজন ব্যক্তিকে নিয়ে নোংরা রসিকতায় ব্যস্ত। যে মানুষটির জীবন এতটা কষ্ট-সংগ্রামে পরিপূর্ণ, যার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এতটা উজ্জ্বল।

তার যেসব রাজনৈতিক কর্ম ও বক্তব্যতে দ্বিমত দেখা গেছে, সেসব কথাকে টেনে এনে হাস্যরসে মেতে ওঠেন বেশ কিছু নেটিজেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ অনেক সচেতন নাগরিক আক্ষেপ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশের জন্য ওবায়দুল কাদেরের শ্রম,ঘাম অবদান অামার অাপনার চেয়ে অনেক বেশি।

‘বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভূমির বঞ্চিত মানুষজন একনায়কদের আমলে নিজস্ব সত্ত্বা রক্ষার্থে লড়াই-সংগ্রাম তীব্রতর করেছিলো ১৯৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর। তাদের ক্ষোভ প্রশমনে রাষ্ট্রের উদ্যোগ যখন বলপ্রয়োগ থিওরীর মধ্যে সীমাবদ্ধ, তখন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সংগঠনটির শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছিলো যে আলাপ-আলোচনাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।

বঞ্চিতদের অবিসংবাদিত নেতা সন্তু লারমার সাথে সেই মোতাবেক দুর্গম পাহাড়ী জঙ্গলে যোগাযোগ করে আলোচনা চালানো হয় দলের হাইকমান্ডের প্রত্যাশা অনুযায়ী। এই যোগাযোগ স্থাপনকারী আর আলোচনাকারী ব্যক্তিটি কে জানেন? তিনি হলেন ওবায়দুল কাদের।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর আদিবাসীদের (সরকারী ভাষ্য, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) সরকারের সাথে শান্তিচুক্তি করার ক্ষেত্রে পটভূমি সৃষ্টি আর আস্থা সৃষ্টিতে ভূমিকা ছিলো বহু আগে থেকে চলা ওবায়দুল কাদেরের যোগাযোগ।

ওবায়দুল কাদের অামার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির জায়গায় অনন্য কারণ কিছু মানুষ এখনো আছেন যারা রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেননি। তাদেরই একজন এই ওবায়দুল কাদের!

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) রাত ১২টা ১০ মিনিটে একরামুল করিম চৌধুরী ফেসবুক লাইভে ওবায়দুল কাদেরকে রাজাকার পরিবারের সন্তান বলে আখ্যায়িত করেন।
২৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমি কথা বললে তো কাদের মির্জা বিরুদ্ধে বলব না। আমি কথা বলব ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে। একটা রাজাকার ফ্যামিলির লোক এই পর্যায়ে আসছে, তার ভাইকে শাসন করতে পারে না। এগুলো নিয়ে আমি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কথা বলব। আমার যদি জেলা কমিটি না আসে, তাহলে আমি এটা নিয়ে শুরু করব।’

পরে একরামুল করিম চৌধুরী ফেসবুক থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেন। তবে তার আগেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।

এই মানুষটি তার কলেজ জীবন থেকে রাজনীতি করে আসছেন। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, প্রতিটি বড় বড় আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত ছিলেন তিনি।
১৯৭৫ -এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আড়াই বছর জেল খেটেছেন। এমনকি ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও তিনি ১৭ মাস জেল খেটেছেন। ১৯৭৭-১৯৮১ মেয়াদে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি। যুব-ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ওবায়দুল কাদের। এদেশের গণমানুষের অাস্থা ও বিশ্বাস যে রাজনৈতিক দলের প্রতি। সেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তিনি।

পঁচাত্তরে জমাট হতে থাকা রক্তের উপর মিলিটারি বুটের ছাপ নেমে গেছে দোতলার সিঁড়ির সর্বশেষ ধাপটি পর্যন্ত। ওপর থেকে যখন গড়িয়ে পড়ছে শর্টরেঞ্জ ব্রাশফায়ারে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া বিশাল দেহটি, মৃত্যুর অসীম অন্ধকার যখন দখলে নিচ্ছে অর্ধনিমীলিত দুই চক্ষুগোলকের সমগ্র পরিধি, ঠিক সেই মুহূর্তটিতে উচ্চতর থেকে নিম্নতর সোপানে গড়াতে থাকা রক্তে বিম্বিত হলো ফেলে আসা জীবনের এক ঝাঁক এলোমেলো স্মৃতি, বায়োস্কোপের চকিত ফ্লাশব্যাকের মতো। এই মাটির বিপথগামী উচ্ছৃঙ্খল পুত্রের হাতে যখন নিহত বদ্বীপ অঞ্চলের এক পিতা। শুধু রেখে গেছেন শোণিত সোপানে জীবন দর্শন। দুটো মেয়ে, এক টুকরো রাজনৈতিক দল। অার কিছু মা, মাটি, মৃত্তিকার লড়াইয়ে অাজীবন লড়াকু প্রাণবান কর্মী। ওবায়দুল কাদের তাদেরই একজন। যখন পুরো বিশ্ব একটি সদ্য স্বাধীন দেশের নিঃশেষ হওয়ার কথা ভাবছিলো। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে নতুন জমানার বাংলাদেশ বির্নিমানে যে কজন নির্ভীক মুজিব সৈনিক নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের তাদেরই একজন।

লেখক : সভাপতি , কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগ ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888