শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
বিডিনিউজ : করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের আইসোলেশনের মেয়াদ শেষে এখন আর দ্বিতীয় বা তৃতীয় পরীক্ষা করা হচ্ছে না। বাড়িতে থাকা রোগীদের উপসর্গ প্রশমনের তথ্য পেলে তাদের সুস্থ হিসেবে ধরে নিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
কর্মকর্তারা বলছেন, শেষ তিন দিনে যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায় বা যাদের ওষুধের প্রয়োজন হয়, তাদেরসহ মৃতদের তথ্য আক্রান্তের সংখ্যা থেকে বাদ দিয়ে প্রতিদিন সুস্থ হওয়ার হিসাব বুলেটিনে দেওয়া হচ্ছে।
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ২৮ জুন থেকে নতুন পদ্ধতিতে সুস্থ হওয়ার এই ‘অনুমিত’ হিসাব দিচ্ছেন তারা। এর আগে আইসোলেশন শেষে পরীক্ষা করে সুস্থ ঘোষণা করা হত।
আইসোলেশন শেষে আরেকবার পরীক্ষা করার বিষয়ে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ এখনও রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাবি, তারা এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএচও) নতুন প্রটোকল অনুসরণ করছে।
মার্চের ৮ তারিখ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পর বুধবার পর্যন্ত দেশে মোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯০ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২ হাজার ৪৫৭ জনে।
আর আক্রান্তদের মধ্যে মোট এক লাখ ৫ হাজার ২৩ জনের সুস্থ হওয়ার হিসাব দেওয়া হয়েছে বুধবারের বুলেটিনে। তাতে শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার দাঁড়াচ্ছে ৫৪ দশমিক ২৫ শতাংশে।
যখন পরীক্ষা করে সুস্থ ঘোষণা করা হত, তার শেষ দিন, অর্থাৎ ২৮ জুন পর্যন্ত শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ছিল ৪০ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
তারপর থেকে সুস্থতার হার ক্রমশ বেড়েছে। ৩ জুলাই তা ৪১ দশমিক ৬১ শতাংশ, ৭ জুলাই ৪৬ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং ১১ জুলাই ৪৮ দশকি ৩১ শতাংশ ছিল।
পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পর ডা. নাসিমা অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলেছিলেন, এখন তারা আইইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের হিসাব দিচ্ছেন।
এই ‘অনুমিত’ তথ্য কীভাবে হিসাব করা হচ্ছে জানতে চাইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমিত ব্যক্তি ১৪ দিন বা ক্ষেত্রবিশেষে ২১ দিন আইসোলেশনে থাকছেন। শেষের তিন দিন যদি কোনো লক্ষণ উপসর্গ না থাকে, তাকে কোনো ওষুধ খেতে না হয়, তাহলে তিনি সুস্থ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। সংক্রমিতদের মধ্যে কেউ মারা না গেলে তিনিও সুস্থ হয়েছেন বলে ধরা হচ্ছে। এটাই হল অধিদপ্তরের ‘অনুমিত’ হিসাব।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাড়িতে থাকা রোগীদের মধ্যে সুস্থ ও মৃতদের বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে মাধ্যমে তারা তথ্য সংগ্রহ করেন।
তবে সুস্থ ঘোষিতদের মধ্য মোট কতজন হাসপাতালে ও কতজন বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন এ বিষয়ে কোনো সঙ্কলিত হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।
স্বাস্থ্যের এডিজি বলেন, “সব হাসপাতালের হিসাব পেতে কিছুটা সময় লাগবে, প্রকৃত সংখ্যাটি বের করতে। হাসপাতালের কতজন রোগী ভর্তি এই তথ্যটি সম্প্রতি দেওয়া হচ্ছে। শুরু থেকে এই তথ্যটি দেওয়া হত না।”
আইসোলেশন শেষে নমুনা পরীক্ষা ছাড়া সুস্থ ঘোষণা করার এ পদ্ধতি ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে মনে করেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের তো পরীক্ষা করার সুপারিশ ছিল। কিন্তু সরকার কী মনে করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বলতে পারব না।
“এখন যাদের সুস্থ ঘোষণা করা হচ্ছে, তাদের সবাই যে নেগেটিভ হবেন বিষয়টি এমন তো নাও হতে পারে। দেখা গেছে, লক্ষণ নাই, কিন্তু শরীরে ভাইরাস রয়ে গেছে। এ কারণে দ্বিতীয় নমুনা পরীক্ষার পরই সুস্থ ঘোষণা করা উচিত।”
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply