সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০০ অপরাহ্ন
বাংলা ট্রিবিউন : করোনাভাইরাসের পরীক্ষার নামে জালিয়াতির অভিযোগ গ্রেফতার হওয়া জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ চৌধুরীকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ইতোমধ্যে বুধবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যায় তাদের একদফা মুখোমুখি করা হয়েছিল। আজ আবার তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ডিবি কার্যালয়ে আরিফকে দেখে খেপে উঠেছিলেন সাবরিনা। বলেছেন, আরিফের জন্যই আজ তার এই অবস্থা। একই সঙ্গে করোনা জালিয়াতির বিষয়ে নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টিও অস্বীকারও করেন তিনি।
মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ জানিয়েছেন জালিয়াতির বিষয়ে তার স্ত্রী সাবরিনাও সবকিছু জানতেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দুজনকেই পৃথক ও মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জালিয়াতির বিষয়ে তাদের কার কী ভূমিকা ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা গোয়েন্দা (তেজগাঁও) বিভাগের উপ-কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেকেজি যে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে জালিয়াতি করতো তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এখন আমরা আরিফ বা সাবরিনা কার কতটুকু ভূমিকা ছিল তা নিরূপণ করার চেষ্টা করছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে পরিষ্কার হওয়া যাবে।’
তিনি বলেন, তারা প্রথমে পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। তবে আরিফ অনেক কিছু স্বীকার করেছেন। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। খুব দ্রুত এই তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’
বাসা থেকে সংগ্রহ করা করোনা পরীক্ষার নমুনা স্বাস্থ্য অধিদফতরে না পাঠিয়ে বা পরীক্ষা না করেই ফলাফল জানানোর অভিযোগে গত ২৩ জুন তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুলাই গ্রেফতার করা হয় এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকারী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে। প্রথমে থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করলেও পরে তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, জেকেজির সিইও আরিফ চৌধুরীকে গত বুধবার দ্বিতীয় দফায় আরও চার দিনের রিমান্ডে আনা হয়। এর আগে গত সোমবার (১৩ জুলাই) ডা. সাবরিনাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল ডিবি পুলিশ। ডা. সাবরিনার আজ (বৃহস্পতিবার) রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা। শুক্রবার তাকে আবারও দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জেকেজি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতো। এসব নমুনা পরীক্ষা না করে তা ড্রেনে ফেলে দেওয়া হতো। পরে রোগীর লক্ষণ দেখে ভুয়া সনদ দেওয়া হতো। জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ চৌধুরী নিজেও এসব বিষয় স্বীকার করেছেন। এছাড়া জেকেজির একজন কর্মচারী আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এসব তথ্য জানিয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, করোনা মহামারি নিয়ে সারা পৃথিবী যেখানে উদ্বিগ্ন সেই অবস্থায় মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয় নিয়ে এমন জালিয়াতি কেন করেছে? এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিল আরিফ ও সাবরিনাকে। কিন্তু তারা কেউ এর উত্তর দিতে পারেনি। আরিফ জানিয়েছে, তারা করোনা পরীক্ষার জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। বিদেশিদের কাছে পরীক্ষার জন্য একশ থেকে ৩শ’ ডলার পর্যন্ত নিয়েছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি কারও নমুনাই পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়নি। সব রিপোর্টই দেওয়া হয়েছে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের পর থেকেই সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে অস্বীকার করে আসছিলেন। কিন্তু তার সামনে চেয়ারম্যান ও জেকেজির মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য ও বিবৃতি দেওয়ার তথ্য-উপাত্ত হাজির করা হলে তিনি চুপসে যান। স্বামী আরিফ চৌধুরীর নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এসব কাজ করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি জেকেজি থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা দায় অস্বীকার করার চেষ্টা করছে। কিন্তু জেকেজির সব জালিয়াতি সম্পর্কে সাবরিনা জানতেন এবং জালিয়াতির অর্থ থেকে তিনি সুবিধাও নিয়েছেন। মূলত আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করতেন। তাই তার দায় এড়ানোর কোনও সুযোগ নেই।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply