বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক : কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) হিসেবে নতুন নিয়োগ পেতে যাওয়া ডা: মো. জাকির হোসেন সহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রিয় ঔষুধাগারের (সিএমএসডি) ছয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক); যাদের বিরুদ্ধে নিন্মমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি কেনাকাটায় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীত ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
আগামী ১৯ ও ২০ জুলাই তাদেরকে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে রোববার সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য এ তথ্য গণমাধ্যম কর্মিদের জানিয়েছেন।
এরা হলেন, সিএমএসডির উপ-পরিচালক ডা: মো. জাকির হোসেন, সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ডা: মো. শাহজাহান, জৈষ্ঠ্য স্টোর কিপার মো. ইউছুপ কবির, সাবেক মেডিকেল অফিসার (চিফ কোÑঅর্ডিনেটর) ডা: জিয়াউল হক, ডেস্ক অফিসার সাব্বির আহম্মেদ ও স্টোর অফিসার কবির আহম্মেদ।
এদের মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নতুন তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) হিসেবে নিয়োগ পেতে যাওয়া ডা: মো. জাকির হোসেনসহ ডা: জিয়াউল হক ও কবির আহম্মেদকে ২০ জুলাই এবং অন্যদের ১৯ জুলাই হাজির হতে বলেছেন দুদকের পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী।
এদিকে মাস্কসহ কোভিড-১৯ এর সরঞ্জামাদির কেলেংকারির ঘটনায় অভিযুক্ত ডা: মো. জাকির হোসেনকে গত ৭ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব শারমিন আক্তার জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) হিসেবে নিয়োগদানের আদেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে একই প্রজ্ঞাপনে আগে থেকে তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালনকারি ডা: মো. মহিউদ্দিনকে ঢাকাস্থ মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর কিপার (সিএমএসডি) উপ-পরিচালকের পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
দুদকের তলব পত্রে বলা হয়েছে, “ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসার নিমিত্তে নিন্মমানের মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ক্রয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহের নামে অন্যান্যদের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎপূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত অভিযোগের বিষয়ে তাদের বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ”
এ নিয়ে করোনাকালীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠা কর্মকর্তা ডা: মো. জাকির হোসেনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে জেলাবাসীর। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠা এ ধরণের কর্মকর্তার নিয়োগ কক্সবাজারের স্বাস্থ্য খাতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা করছেন অনেকে।
তাদের দাবি, ডা: জাকিরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে জনমনে স্বচ্ছতা না আসা পর্যন্ত যেন কোনভাবেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ পেতে না পারে।
এ নিয়ে সামাজিক আন্দোলনের সংগঠন ‘আমরা কক্সবাজারবাসী’ এর সমন্বয়ক করিম উল্লাহ বলেন, যত বড় পদ; তত বড় দুর্নীতি। ডা: জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রীর কেলেংকারির অভিযোগ আজ জাতীয়ভাবে আলোচিত বিষয়। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। তিনি অভিযোগের দায় থেকে এখনো মুক্ত নন।
এ ধরণের অভিযুক্ত এক কর্মকর্তাকে কক্সবাজারের স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগদানের মধ্য দিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন সামাজিক আন্দোলনের এ নেতা।
করিম বলেন, ডা: জাকিরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ব্যাপারে স্বচ্ছতা না পর্যন্ত কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগদান কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। প্রয়োজনে কক্সবাজারবাসী এ নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল এখন একটা পরিপূর্ণ হাসপাতাল। এই হাসপাতালকে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা মডেল হিসেবে নিতে পারবে। তার কারণ হচ্ছে, কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মিলে এই সেবা নিশ্চিত করেছে, যেটা বাংলাদেশের অন্যান্য কোন জেলায় নেই। এর পেছনে সদর হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন এর অবদান স্বীকার করা জরুরী। এর মধ্যে মাস্ক কেলেংকারির ঘটনার মতো জড়িত কোন চিকিৎসককে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক করা হলে কক্সবাজার জেলাবাসীর খুব ক্ষতি হবে। বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply