শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মাকে কুপিয়ে হত্যার পর থানা এসে হাজির যুবক টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার মিয়ানমারের বাঘগুনা খালের পাশে রয়েছে নিমার্ণ সামগ্রী ও দুইটি ট্রলার, মাঝি-মাল্লা সহ ১১ জনের হদিস নেই মিয়ানমারের উপজাতি সম্প্রদায়ের ৬৫ নাগরিকের অনুপ্রবেশ চকরিয়ায় কিশোরকে ছুরিকাঘাত : আটক ৪

কিউবা ও উরুগুয়ের সাফল্যের রহস্য

প্রথম আলো : যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিলসহ লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। তবে কয়েকটি দেশ ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ও মৃত্যু কমানোর কৌশল খুঁজে পেয়েছে। আমেরিকা অঞ্চলে ৫০ লাখের বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং আড়াই লাখের বেশি লোক মারা গেছে, যা বিশ্বের মোট সংক্রমণ ও মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক।

বিজ্ঞান সাময়িকী নিউ সায়েন্টিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেলেও কিউবার চিত্র পুরোপুরি আলাদা। ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক মাইকেল বুস্টাম্যান্টের মতে, ১ কোটি ১৩ লাখ মানুষের দেশটি কীভাবে মহামারি মোকাবিলা করতে হয়, তা উদাহরণ সৃষ্টি করে দেখিয়ে দিয়েছে। কিউবার জন্য সামাজিক দূরত্ব মানতে বাধ্য করা বা চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতির মতো নানা বিষয় নিয়ে উদ্বেগ ছিল। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ ছিল দেশটির বয়স্ক মানুষ নিয়ে। আমেরিকা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক মানুষের দেশ কিউবা। ধারণা করা হচ্ছিল, ১১ মার্চ ইতালি থেকে আসা প্রথম রোগী দেশটিতে চিহ্নিত হওয়ার পর তারা সবচেয়ে সমস্যায় পড়বে। কিন্তু তা ঘটেনি। ১ জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে ২ হাজার ৩৪৮ জন সংক্রমণ শনাক্ত ব্যক্তি ও ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

দেশটির জন্য বড় সমস্যা ছিল স্বাস্থ্য উপকরণের অভাব। তবে তারা তা পুষিয়ে নিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাতের কর্মী দিয়ে। বিশ্বে রোগীপ্রতি চিকিৎসক সংখ্যার হিসাবে কিউবা সর্বশ্রেষ্ঠ। তাদের ১০০০ রোগীর জন্য গড়ে ৮ দশমিক ১৯ জন চিকিৎসক রয়েছেন। সে তুলনায় ব্রাজিলে এ হার ২ দশমিক ১৫ ও যুক্তরাষ্ট্রে ২ দশমিক ৬।

কিউবার প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই দেশটির সরকার চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের টিম তৈরি করে মানুষের ঘরে ঘরে পাঠায়। তাঁদের কারও শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যার কোনো উপসর্গ আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করে এবং মানুষকে এ রোগ সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর সন্দেহভাজন কাউকে পেলে দ্রুত তাকে সরকার পরিচালিত আইসোলেশন কেন্দ্রে পাঠানো হয় এবং তার সংস্পর্শে আসা অন্যদের চিহ্নিত করে নজরদারিতে রাখা হয়।

সাও পাওলো স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যালসিমার পেরেজ রিভেরল বলেন, প্রকৃতপক্ষে কিউবার একটি শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকারকেও কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। দেশে রোগটি ছড়ানোর দুই মাস আগে তারা এটি শনাক্তের জন্য পুরো সিস্টেমটি প্রস্তুত করছিল।

তবে কিউবার মতো পরিস্থিতি ছিল না উরুগুয়ের। তাদের ব্রাজিলের সঙ্গে স্থলসীমান্ত রয়েছে। ব্যস্ত এ সীমান্তপথ নিয়ে তাদের ব্যাপক দুশ্চিন্তা ছিল। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে ব্রাজিল করোনাভাইরাসের মূল কেন্দ্র বা হটস্পট হয়ে ওঠায় উরুগুয়েকে নিয়েও দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু ১ জুলাই পর্যন্ত দেশটিতে মাত্র ৯৩৬ জন করোনা সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছে মাত্র ২৭ জন। প্রতি ১০ লাখ দেশটিতে সংক্রমিত মাত্র ২৬৪ জন আর মৃত্যু ৭ জন। সেখানে ব্রাজিলে এ হার ৬ হাজার ৩৭০ জন আর মৃত্যু ২৮৫ জন।

তবে অন্য দেশের মতো উরুগুয়ে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন করেনি। ১৩ মে দেশটিতে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হলে প্রেসিডেন্ট লুই লাকাল পো সীমান্ত বন্ধ ও স্কুল বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া গণজমায়েত করে কোনো অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয় দেশটিতে। এ ছাড়া দেশটিতে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনের ঘোষণা দিয়ে জনগণকে নিজ উদ্যোগে সম্ভব হলে বিচ্ছিন্ন থাকতে বলা হয়।

উরুগুয়েতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি জিওভান্নি এসকালান্তে বলেন, ‘উরুগুয়ে সরকার জনগণের কাছে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন চায়নি, কিন্তু জনগণ নিজ উদ্যোগেই কোয়ারেন্টিন মেনেছে। সরকার যা করেছে, তা হচ্ছে আগ্রাসী পরীক্ষা করার পদক্ষেপ নেওয়া। এ ছাড়া কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং বা রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে অ্যাপ চালু করেছে। এ অ্যাপ দিয়েই বাড়িতে বসে করোনা পরীক্ষার জন্য আবেদন করা যায়।’

তবে কিউবার মতোই উরুগুয়ে প্রাথমিক অবস্থায় সাড়া দিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছিল। উরুগুয়ে সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে পরীক্ষার জন্য সঠিক পদ্ধতি জেন নেয়। অন্যখানে এ থেকে কী শিক্ষা মিলেছে, এটিও জেনে নিয়েছিল। এরপর তারা দ্রুত পরীক্ষার জন্য ল্যাব বাড়ায়। এ ছাড়া দ্রুত গবেষকদের ব্রাজিলে পাঠিয়ে সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে বলে। দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা করেছে উরুগুয়ে। নতুন একজন রোগী শনাক্ত করতে কমপক্ষে ১৬২টি টেস্ট করেছে দেশটি।

এসকালান্তে বলেন, উরুগুয়ে যেভাবে করোনার ক্ষেত্রে সাড়া দিয়েছে বা ব্যবস্থা নিয়েছে, এতে তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তার মধ্যে, স্পষ্ট বার্তাপ্রেরণের গুরুত্বই সবচেয়ে বড় শিক্ষা হতে পারে। এটি ভালো যোগাযোগের কৌশল তৈরি করা এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

.coxsbazartimes.com

Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themesbcox1716222888