নিজস্ব প্রতিবেদক : রাখাইন পঞ্জিকা অনুসারে ১৩৮৬ রাখাইন বর্ষ শেষ হয়েছে বুধবার ১৬ এপ্রিল। বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ১৩৮৭ রাখাইন বর্ষ। আর এই বর্ষ বিদায় ও বরণে কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাসি ৩ দিনের জলকেলি উৎসব শুরু হয়েছে।

স্বাভাবিক নিয়মে রাখাইন বর্ষ বিদায় ও বরণ উৎসব পালন করে হচ্ছে দীর্ঘদিনের। সামাজিক নিয়ম মতে, ৭ দিনের ‘সাংগ্রেং’ শুরু হয় ১৪ এপ্রিল। আর তিন দিনের জলকেলি উৎসবের মধ্যে দিয়ে ১৯ এপ্রিল এই উৎসবের শেষ হবে।

বৃহস্পতিবার বিকালে কক্সবাজারের রাখাইন পল্লীতে গিয়ে দেখা মিলে নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো প্যান্ডেলে সারিবদ্ধ পানি ভর্তি ড্রাম নিয়ে ঐতিহ্যবাহি পোষাক পরিহত রাখাইন তরুণীদের অপেক্ষা। আর নানা সাজে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে দলবেঁধে এক-একটি প্যান্ডেলে ছুটে যাচ্ছেন নানা বয়সের মানুষ সহ তরুণের দল। প্যান্ডেলে পৌঁছেই এক-একজন তরুণ তাদের পছন্দের তরুণীদের নিক্ষেপ করে পানি। আর তরুণীও পানি নিক্ষেপ করে প্রতিউত্তর দেয়। এরপর টানা চলে একে অপরকে পানি নিক্ষেপের এই খেলা।

রাখাইন সম্প্রদায়ের বিশ্বাস এই জল মঙ্গলের। এই মঙ্গল জলে ধুয়ে মুছে যাবে পুরাতন বছরের সকল ব্যথা, বেদনা, গ্লানি, অপ্রাপ্তি আর অসঙ্গতি। আর নতুন বছর হবে শুচিতা বা নির্মলের। আর সেই মঙ্গল জলে মাতোয়ারা রাখাইন তরুণ-তরুণী সহ সকল বয়সের মানুষ। যেখানে দেখা মিলেছে অন্যান্য ধর্মের মানুষকেও।

কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের নারী নেত্রী মাটিং টিন রাখাইন জানান, ১৪ এপ্রিল চন্দন মিশ্রিত জল দিয়ে বুদ্ধস্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে ৭ দিনের এই উৎসব। এলাকা ভিত্তিক রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন বিহার ও ঘরে থাকা বৌদ্ধ মূর্তি স্নান করিয়ে এই উৎসবের শুরু করে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন ১৫ এপ্রিল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিহার প্রাঙ্গনে জড়ো হন রাখাইনরা। ওখানে ঠান্ডা শরবত পান এবং পঞ্চশীল গ্রহন করে সকলের মঙ্গল প্রার্থনা করা হয়। পঞ্চশীল একটি ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন।

তিনি জানান, ১৬ এপ্রিল তৃতীয় দিন রাখাইন শিশু-কিশোররা একে-অপরকে পানি নিক্ষেপ করেছে। আর উৎসবের শেষ ৩ দিনের জলকেলি বা পানি খেলা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। কক্সবাজার শহরের রাখাইন পল্লীগুলোতে ২০ টি প্যান্ডেলে তিন দিনের এই পানি খেলা চলছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, চৌফলদন্ডী, টেকনাফ ও রামুতে রাখাইন পল্লীতেও চলছে এই উৎসব।

রাখাইন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মংছেনলা রাখাইন জানান, ৩দিনের জলকেলি উৎসব ঐতিহ্যবাহি এবং জনপ্রিয়। এই ৩ দিন রাখাইন পল্লী ঘিরে উচ্ছ্বাস বিরাজ করে। রাখাইনদের সাথে অন্যান্য ধর্মের মানুষের অংশ গ্রহণে তৈরি হয় সম্প্রীতির মিলন মেলা।

অগ্গমেধা ক্যাং পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংহ্লা মি রাখাইন জানান, জলকেলির সাথে রাখাইনদের ঐতিবাহি নানা খাবার পরিবেশন, একে অপরের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত আর মঙ্গল কামনা এই উৎসবের মুল।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার( ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, রাখাইনদের জলকেলি উৎসব কক্সবাজারের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহি। এটি একটি ধর্মের মানুষের হলে অন্যান্য ধর্মের মানুষের আনা-গোনায় এটি সম্প্রীতির একটি বন্ধন তৈরি করে। ফলে জেলার যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে যেখানে পোষাকধারী পুলিশ টহল এবং অবস্থান রয়েছে। রয়েছে সাদা পোষাকে নজরধারী। আশা করি ৩ দিনের উৎসবটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে।

nupa alam

Recent Posts

রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অবস্থা রোহিঙ্গাদের নিরাপদভাবে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব না : ড. খলিলুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান অবস্থা রোহিঙ্গাদের নিরাপদভাবে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব না বলে…

49 mins ago

আমরা ধর্মচর্চা করবো,অনুশীলন করবো কিন্তু বিদ্বেষ পোষণ করবোনা : ধর্ম উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম. খালিদ হোসেন বলেছেন, আমরা ধর্মচর্চা করবো, ধর্ম অনুশীলন…

19 hours ago

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ রুটে পরীক্ষামুলক সী ট্রাক চলাচল শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : পরীক্ষামূলক সী-ট্রাক চালুর মধ্য দিয়ে কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথে যাতায়াত ব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন…

20 hours ago

চকরিয়ায় বাস-অটোরিক্সার সংঘর্ষে নিহত ২

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় যাত্রীবাহি বাসের সাথে যাত্রীবাহি সিএনজি চালিত অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে…

2 days ago

বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূতের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি। বৃহস্পতিবার…

2 days ago

টেকনাফের ‘হ্যান্ড গ্রেনেড’টি বিস্ফোরণ করে নিষ্ক্রিয় করল সেনা বাহিনী

টেকনাফ প্রতিবেদক : টেকনাফে মেরিন ড্রাইভের পাশের খোলা জায়গায় অবিষ্ফোরিত অবস্থায় পাওয়া হ্যান্ড গ্রেনেডটি (হাত…

2 days ago