মো: সাইদুজ্জামান সাঈদ, রামু : রামুতে বৌদ্ধ বিহার ও পল্লীতে সহিংসতার ১২ বছর আজ। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামু, ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফের বৌদ্ধ বিহার, বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগে ১৯ বৌদ্ধ বিহার, ৪১ বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দূর্বৃত্তরা। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার সহ অর্ধশত বৌদ্ধ বসতঘরে। এতে কয়েক শত বছরের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পুড়ে যায়। ঘটনার পরপরই পোড়া মন্দিরে তৈরী হয়েছে নান্দনিক স্থাপনা। এ ঘটনার পর মামলা দায়ের করা হলেও নারকীয় হামলার বিচারপ্রক্রিয়া ১২ বছরেও শেষ হয়নি। এসব মামলার স্বাক্ষীরাও স্বাক্ষী দিতে অনিহা প্রকাশ করছে। ফলে সাক্ষীর অভাবে এ বিচার প্রক্রিয়া থমকে আছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধদের আক্ষেপ ও অভিযোগ হলো- মামলার আসামী, সাক্ষীর সাক্ষ্য দেয়া নিয়ে। বৌদ্ধরা মনে করেন, মামলার আসামী এবং মামলার সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম দেয়া হয়েছিলো, তাদের নাম যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি। মামলায় জড়িতদের পরিবর্তে নিরীহ লোকজনকে রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটে আসামী করে হয়রানি করা হচ্ছে। এখন যাদের নাম সাক্ষীর তালিকায় আছে, তাদের অনেকেই জানে না সাক্ষীর তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।
বার বছরে বৌদ্ধদের মাঝে ফিরেছে সম্প্রীতি। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাশৈলীতে পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি বেড়েছে পর্যটক আকর্ষণ। ক্ষতিগ্রস্থরা পেয়েছেন নতুন ঘর। পুজাপার্বন, ধর্মীয় উৎসবে অন্যধর্মালম্বীর সরব উপস্থিতে মুখরিত হয় এখন বিহার প্রাঙ্গন। সম্প্রীতিতে ফিরতে পারায় খুশি বৌদ্ধরা। তবে বিচারপ্রক্রিয়ার অচলাবস্থা নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে রয়েছে এখনও অসন্তোষ।
রামু সহিংসতার সেই কালো রাতের ঘটনা স্মরণ করে রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের পরিচালক শীলপ্রিয় থের বলেন, ‘২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের বৌদ্ধ বিহারগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। সেই সম্পদ ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। সেই সময়ে কিছু দুর্বৃত্তের একটি রাত ছিলো। ঘটনাটি স্মরণ করলে এখনও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। কঠিন সময় গেছে আমাদের। দূর্বৃত্তরা আমাদের বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ পল্লী পুড়িয়ে দিয়ে অনেক ক্ষতি করেছে।
তিনি বলেন, আমরা হারিয়ে যাওয়া দিনের চেয়ে, বর্তমানে অনেক সম্প্রীতি ভোগ করছি। এখন আমাদের সম্প্রীতি অনেক বৃদ্ধি হয়েছে। আমরা রামুবাসি সম্প্রীতিতে আছি। আগামী দিনেও আমাদের এ সম্প্রীতি ধরে রাখতে হবে’।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর ১২ বৌদ্ধ বিহার, ৩০টি বসতঘর, পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফে ৭টি বৌদ্ধ বিহার, ১১টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুড়ে যায় এসব মন্দিরে থাকা হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক সব নিদর্শন। লুটপাট ও ভাংচুর করা হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার, অর্ধশত বৌদ্ধ বসতঘরে। এ ঘটনার পর দায়ের করা হয় ১৯টি মামলা। এর মধ্যে রামুর আটটি মামলায় ৪৫৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে রামু থানায় জনৈক সুধাংশু বড়ুয়ার করা মামলাটি দু’পক্ষের আপস মীমাংসার ভিত্তিতে প্রত্যাহার করা হয়।
কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু। তিনি বলেন, রামু সহিংসতার ১২ বছরে ফিরে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। রামুর বৌদ্ধরা পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। কিন্তু রামুর ঘটনার ১২ বছরেও মামলার কার্যক্রম প্রাথমিক পর্যায়ে থমকে আছে। পুলিশ মামলার অভিযোগপত্র আদালাতে জমা দিলেও একটি মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি। সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।
বৌদ্ধদের অভিযোগ, ২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু ও উখিয়া-টেকনাফে বৌদ্ধপল্লীতে চালানো নারকীয় হামলার ১৮ মামলার একটি বিচারও শেষ হয়নি। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় দায়ীরা কেউ শাস্তি পায়নি এখনও। ঘটনারপর বিভিন্ন মামলায় ৯৯৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় আটকরা সবাই এখন জামিনে। ঘটনার পরপরই ক্ষতিগ্রস্থ বৌদ্ধ বিহার ও ঘরবাড়ি পুণনির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। দীর্ঘ দশ বছরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আবারও ফিরে এসেছে বলে জানান রামুর বৌদ্ধরা।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রেজাউর রহমান জানান, তিনি আড়াইমাস আগে দায়িত্ব গ্রহনের প্রসিকিউশন টিমের সাথে এ ব্যাপারে বৈঠক করেছেন। মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিছু মামলা স্বাক্ষী পর্যায়ে আছে, আর কিছু মামলা নিষ্পত্তির দিকে যায়নি। কয়েকটি মামলা পিবিআই এর কাছে পূণঃতদন্তাধিন রয়েছে। অসংখ্য আসামী এবং স্বাক্ষী না আসা মামলার দীর্ঘসূত্রিতার অন্যতম কারণ। মামলা ৩ শতাধিক স্বাক্ষী রয়েছেন, যাদের অনেকে নিয়মিত স্বাক্ষ্য দিতে আসছেন না। আবার অনেক সম্প্রীতি বিনষ্টের আশংকায় স্বাক্ষ্য দিতে চায় না বলেও ধারনা করছেন তিনি।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামু ট্র্যাজেডির ঘটনায় ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার ছবি ট্যাগকারী সেই উত্তম বড়ুয়া কোথায়, কি অবস্থানে আছে জানেনা আইনশৃংখলা বাহিনী। বৌদ্ধদের অনেকে সন্দেহ, নিখোঁজ উত্তম বড়ুয়া আজও বেঁচে আছে তো? যে উত্তম কুমারকে কেন্দ্র করে লঙ্কাকান্ড ঘটে গেছে রামু, টেকনাফ, উখিয়া ও পটিয়ায়। বেঁচে থাকলে তার হদিস এখনো পাইনি কেন পুলিশ? উত্তম কোথায় আছে সেই বিষয়েও নিশ্চিত কোন তথ্য জানা নেই পুলিশের। অথচ ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে দরকার উত্তমকে। কে, কিভাবে তার ফেসবুকে এই ছবি ট্যাগ করলো সেটি জানতেও দরকার উত্তম বড়ুয়ার স্বীকারোক্তি। কিন্তু ঘটনার একযুগ পার হলেও পুলিশ তার অবস্থান সর্ম্পকে নিশ্চিত হতে না পারায় ক্ষুদ্ধ রামুর সাধারণ মানুষ। রামুতে বৌদ্ধ বিহার পোড়ানোর দিনই পালিয়ে যায় উত্তম বড়ুয়া।
নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভে উখিয়ায় ‘গাছের সাথে ধাক্কা লেগে’ মোটর সাইকেল আরোহী একজন…
নিজস্ব প্রতিবেদক : মহেশখালী দ্বীপের মোস্ট ওয়ান্টেড খ্যাত ‘জিয়া বাহিনী’র প্রধান জিয়াকে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে…
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ থেকে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফনদীর মোহনা থেকে দুইটি…
নিজস্ব প্রতিবেদক : আবারও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর ঘিরে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে…
নিজস্ব প্রতিবেদক : গেল ১০ নভেম্বর সকাল ৮ টায় মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে কক্সবাজারের রামু উপজেলার…
নিজস্ব প্রতিবেদক : উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলিসহ ৩ জনকে আটক করেছে…