নিজস্ব প্রতিবেদক : বেসরকারি সংস্থা ব্রাকের প্রতারণায় শিকার হয়ে অনিশ্চিত জীবন-যাপন করছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের ৫০ জন তরুণী। ব্রাকের পক্ষে ১৮ মাসের ‘মিডওয়াইফারি’ কোর্সে অংশ এই ৫০ জনকে চুক্তিতে বলা হয়েছিল প্রশিক্ষনের সকল খরচ ব্যয় ছাড়াও দেয়া হবে মাসিক ভাতা। প্রশিক্ষণ শেষে সনদ প্রদান ও চাকুরি দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৮ মাসের কোর্স শেষ করতে হয়েছে ৩ বছর ৩ মাস বা ৩৯ মাসে। পাওয়া যায়নি মাসিক ভাতা। ৩৯ মাস শেষে কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে একটি প্রশংসা পত্র প্রদান করে দায় শেষ করেছে সংস্থাটি। গত ২ বছর ধরে এই ৫০ জন দফায় দফায় সংস্থার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করতেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন না কোন কথা। এমন কি সংস্থার কর্মকর্তাদের হাতে নাজেহালের শিকার হচ্ছেন এসব নারী।
ভ‚ক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রশিক্ষণ সহ সনদ পত্রের প্রত্যাশায় জীবনের ৫ টি বছর শেষ হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সংস্থার কর্মকর্তারা রীতিমত হুমকি দিতে শুরু করেছেন। এব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও উখিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত প্রতিকার চেয়েছেন। এখন আর চাকুরি না ৩৯ মাসের ‘মিডওয়াইফারি’ কোর্সের সনদ পত্রটি যেন তাদের দেয়া হয়।
ভ‚ক্তভোগী এই ৫০ জন উখিয়ার উপজেলার রাজাপালং, রত্মাপালং, পালংখালী, টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দা। যারা সকলেই এসএসসি পাসের পরই অংশ নিয়েছিলেন এই কোর্সে।
কোর্স সম্পন্নকারি রাজাপালং ইউনিয়নের আনোয়ারা বেগম জানান, এসএসসি পাসের পর কলেজে ভর্তি হলেও লেখা পড়া বন্ধ করে ‘মিডওয়াইফারি’ কোর্সে অংশ নিয়ে ছিলেন। ১৮ মাসের কোর্সটি শেষ করেছে ৩৯ মাসে। আর দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য কর্মী বলে একটি সনদ পত্র। এই ৩৯ মাসের একটি মাসিক ভাতা দেয়া হলেও পাওয়া যায়নি তা। গত ২ বছর ধরে সংস্থাটির কার্যালয়ে ঘুরতে ঘুরতে যেন জীবনটাই শেষ হয়ে গেল।
ব্রাক, কোর্সে অংশ নেয়া নারীদের দেয়া তথ্য ও প্রাপ্ত কাগজ পত্রে দেয়া যায়, উখিয়া টেকনাফের ৬ টি ইউনিয়নের ৫০ জন নারীকে ‘মিডওয়াইফারি’ কোর্সের জন্য আবেদন করতে ২০১৯ সালের জুন মাসে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। এসএসসি পাস নারীদের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র সহ যোগাযোগ করতে দেয়া হয় ৩ জনের নাম, ফোন নম্বর।
যে বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে, ১৮ মাসের কোসটিতে প্রশিক্ষনের সকল খরচ ব্যয় ছাড়াও দেয়া হবে মাসিক ভাতা। প্রশিক্ষণ শেষে সনদ প্রদান দেয়া হবে।
কোর্সে অংশ নেয়া টেকনাফের রঙ্গিখালী এলাকার জান্নাতুল মাওয়া জানান, ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইনস্টিটিউট অব হেলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কোর্সটি শুরু হয়। বলা হয়েছিল ১৮ মাস পর ২০২১ সালের মার্চে এই কোর্সটি শেষ হবে। কিন্তু নানা অজুহাত, দক্ষতা বৃদ্ধির নামে কোর্সটি সম্পন্ন করা হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। অতিরিক্ত ২১ মাস পর যে কাগজটি দেয়া হয়েছে তা একটি প্রশংসা পত্র এবং আমরা স্বাস্থ্যকর্মী। প্রশিক্ষণ খরচ ছাড়াও দেয়া কথা ছিল মাসিক ভাতা। তাও দেয়া হয়নি। সনদ পত্রের কথা বলা হলে সংস্থার উখিয়া কার্যালয়ে সনদ পাঠানো এবং চাকুরি যোগাযোগের প্রতিশ্রæতি দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, সেই ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত সংস্থার কার্যালয়ে ঘুরা-ফেরার করলেও সংশ্লিষ্টরা রীতিমত হুমকি এবং নাজেহাল শুরু করেছেন।
ভ‚ক্তভোগী হুমাইরা আকতার জানান, সংস্থাটির মো. শহীনুর ইসলাম নামের এক কর্মকর্তার অধিনে এই কোর্সটি সম্পন্ন করা হয়। কোর্স শেষ হওয়ার ২ বছর পরে এসে এখন চাকুরি না, ‘মিডওয়াইফারি’ সনদটি দেয়া কথা বলা হলেও তা দেয়া হচ্ছে না। চুপ থাকতে বলা হচ্ছে। ফলে বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসক, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য সহ জনপ্রতিনিধিদের জানানো হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, উখিয়া-টেকনাফের ৫০ জন নারীকে মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষন ও চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে যায়। ৫০ জন নারীকে দেয়া হল ‘কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কারের’ কাগজ। এটা অভিনব প্রতারণা।
রাজাপালং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, এ বিষয়টি স্থানীয় এমপির কাছে ভ‚ক্তভোগীদের লিখিত পাওয়ার পর এমপি বিষয়টি আমাকে যাচাই-বাছাই করতে বলেন। আমি যাচাই-বাছাই করতে সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলাপ করেছি। এসব কর্মকর্তা বিষয়টি পুরোপুরি স্বীকার কররেও সামধান করছেন না। একবার এই কর্মকর্তা, আরেক বার অন্য কর্মকর্তা বলে এ পর্যন্ত ৫০-৬০ জনের ফোন নম্বর দেয়া হয়েছে। ৫০ জন নারীর সাথে প্রতারণার বিষয়টি কোন প্রকার সমাধান দিচ্ছে না সংস্থাটি।
সংস্থারটি বিজ্ঞপ্তিতে থাকা এবং ভ‚ক্তভোগীদের সাথে কোর্স পরিচালনার সমন্বয়ক মো. শহীনুর ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সংস্থাটির মাঠ কর্মী। বিষয়টি নিয়ে আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে। আপনি উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় আমাদের অফিসে আসেন। সামনা-সামনি কথা বলি। বিষয়টি নিয়ে সামধান করার চেষ্টা করি।’
কক্সবাজার শহর থেকে কুতুপালং এলাকার দূরত্ব অবহিত করে প্রতিবেদক তাকে ফোনে বিস্তারিত আলাপ করার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, এটা অফিসের নিজস্ব, ফোনে কথা বলা যাবে না।
তিনি অন্যান্য কোন উধ্বর্তন কর্মকর্তার ফোন নম্বর দিতেও রাজী হননি।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে আগের ইউএনও থাকাকালিন একটি অভিযোগ জমা হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। অভিযোগটি বের করে এব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান…
চকরিয়া প্রতিবেদক: চকরিয়ায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ…
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টামর্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার…
নিজস্ব প্রতিবেদক : সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে ‘পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধসহ বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের’ দাবিতে কক্সবাজার…
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফে ‘বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার’ যুবকের তথ্যে অভিযান চালিয়ে পাহাড়ী এলাকার গোপন…
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ব্যক্তিগত সহকারি ( পিএস…