নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আবারও ভেসে এল ৯৫ টি ডিম পেটে থাকা একটি মা কচ্ছপ।
সোমবার সকালে সৈকতের হিমছড়ি প্যারাসেলিয়ং পয়েন্টে মিলেছে এই কচ্ছপটি।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এটিও অলিভ রিডলি মা কচ্ছপ। পেটে ৯৫ টি ডিম পাওয়া গেছে।
বোরি’র দেওয়া তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে সোমবার (১৯ ফেব্রæয়ারি) পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সোনাদিয়া, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে অন্তত ২৯টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গেছে। শুধু মাত্র ৫ দিনে সৈকতে পাওয়া গেছে ৬ টি মৃত মা কচ্ছপ। এই সময়ের মধ্যে ৩ টি মৃত ডলফিন, ১ টি মৃত পরপইস ভেসে এসেছে। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ।
তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে ভেসে আসা মৃত সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এটা কখনও হয়নি।
এ পরিস্থিতিতে সামুদ্রিক ‘মা কচ্ছপ’ মহাবিপদে বলে মন্তব্য করেছেন সামুদ্রিক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম। ধারণা করা হচ্ছে, জেলেদের জালে বা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কচ্ছপগুলো মারা পড়ছে।
রবিবার (১৮ ফেব্রæয়ারি) কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে আবারও ভেসে আসে তিনটি মৃত মা কচ্ছপ। যার পেটে মিলেছে ৩১০ টি ডিম। এর আগে ১৭ ফ্রেবুয়ারি সকালে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে আবার একটি মৃত মা কাছিম ভেসে এসেছে। যা পেটে ছিল ৯০ টি ডিম। এর আগে ৩ দিনে উপক‚লে দেখা মিলেছে ৩ টি মৃত ডলফিন, ১ টি মৃত পরপইস ও ১ টি কচ্ছপ। এর মধ্যে শুক্রবার (১৬ ফেব্রæয়ারি) সকালে উখিয়ার সোনারপাড়া সৈকতে একটি এবং ইনানী সৈকতে একটি মৃত ডলফিন ভেসে আসে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রæয়ারি) হিমছড়ি সৈকতে মৃত ভেসে আসে আরও একটি ইরাবতী ডলফিন। বুধবার (১৪ ফেব্রæয়ারি) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে একটি মৃত পরপইস। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রæয়ারি) সৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে এসেছিল।
কেন এমন মৃত্যু এমন বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে সমুদ্র বিজ্ঞানী ও সংশ্লিষ্টরা। প্রকৃতি ও পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) বলছে, সামুদ্রিক মা কচ্ছপ এখন মহা বিপদে রয়েছে। সংস্থাটি ১০ বছর আগে বা ২০০৩ সালের এক জীরপে দেখা গেছে, কক্সবাজার উপক‚লের ৫২ টি পয়েন্টে সামুদ্রিক মা কচ্ছপ ডিম দিতে আসতো। ওই সময় এসব পয়েন্ট মা কচ্ছপের কাছে অত্যন্ত নিরাপদ পয়েন্ট ছিল।
সংস্থাটির উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, মা কচ্ছপের ডিম দেয়ার সময় সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়। যা এপ্রিল-মে পর্যন্ত সময় ডিম দিয়ে থাকে। তারা রাতের বেলায় নির্জন উপক‚লে এসে একটি গর্ত তৈরি করে ডিম দেয়। সাধারণত একটি মা কচ্ছপ ১-৩০ টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। ডিম দেয়া শেষ করে তা মাটি, বালি বা অন্যকোন জৈব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দেয়। এর পর মা কচ্ছপ ফিরে যায় সাগরে। প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ৬০-৭০ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়। যা গর্ত থেকে বের হয়ে ফের ফিরে যায় সাগরে।
এটা প্রকৃতিগত ভাবে হয়ে আসতো মন্তব্য করে শফিকুর রহমান জানান, ১০ বছর আগে ৫২ টি পয়েন্টে মা কচ্ছপ ডিম দিতে এলেও বর্তমানে তা কমে ৩৪ পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। মহেশখালীর সোনাদিয়া থেকে শুরু করে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যন্ত সৈকতের নির্জন এলাকায় এসব কচ্ছপ ডিম দিতে আসে।
কচ্ছপ হল সরীসৃপের একটি ক্রম যা টেস্টুডিন নামে পরিচিত। ডিম দিতে এসে পুনরায় গভীর সাগরে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ এখন যেন আর নেই। ডিম দিতে এসে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে মা কচ্ছপ। গত ১৫ দিনে সেন্টমার্টিন সৈকতে ৫ টি মৃত কচ্ছপ দেখা গেছে।
এর মধ্যে গত ২২ জানুয়ারি সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিম সৈকতে অংশের সৈকতে ভেসে আসে প্রায় ৪০ কেজি ওজনের একটি মা কচ্ছপ। কচ্ছপটির মুখ ও পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল। গত ২০ জানুয়ারি উত্তর সৈকতের কবরস্থানের পাশে পড়েছিল আরেকটি মৃত কচ্ছপ। গত ১৮ জানুয়ারি কোনাপাড়া ও দক্ষিণপাড়ায় সৈকতে আরও দুটি কচ্ছপমৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। গত ১৭ জানুয়ারি গলাচিরা এলাকার সৈকতে পড়েছিল আরেকটি মা কচ্ছপ।
সেন্টমার্টির ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) খোরশেদ আলম জানান, বিভিন্ন সময় সৈকতে মৃত কচ্ছপ দেখা যায়। এসব কচ্ছপের শীরের রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। গায়ের কোন অংশ রক্তাক্ত আবার কোন অংশ কামড়ে ছিড়ে ফেলা হয়েছে। মুলত ডিম দিতে এসে কুকুরের হামলায় সহ নানা কারণে এসব কচ্ছপ মারা যায়।
নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপক মো. আবদুল কাইয়ুম জানান, নির্জন সৈকতেই মুলত কচ্ছপ ডিম দিতে এসে থাকে। নানা কারণে ডিম দেয়ার স্থান সমুহ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পর্যটনের বিকাশের সাথে সাথে অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কক্সবাজার সৈকতে আলোকায়ন, সমুদ্রে পরিত্যাক্ত জাল ফেলে দেয়া, ডিম ছাড়ার মৌসুমে বীচে ডাইভিং, খেলাধুলা, সৈকতে হাঁটা কচ্ছপের ডিম দেয়ার পরিবেশ নষ্ট করেছে। ফলে ক্রমাগতভাবে ডিম দেয়ার স্থান কমছে।
তিনি জানান, মা কচ্ছপ ডিম দিতে সমুদ্র থেকে উপক‚লে আসা যাওয়ার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে সৈকতে পুঁতে রাখা হয় মরণফাঁদ খ্যাত মাছ ধরার অবৈধ কারেন্ট জাল। গভীর সাগরে ট্রলিং জালে আটকা পড়েও মারা যাচ্ছে মা কচ্ছপ। কচ্ছপ সৈকতে এসে ডিম পাড়তে পারলেও সেই ডিম রক্ষা করা যাচ্ছে না। ডিমগুলো খেয়ে ফেলছে কুকুর। ডিম পাড়তে উঠলেই মা কচ্ছপের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সংঘবদ্ধ বেওয়ারিশ কুকুর। ফলে মা কচ্ছপ মহাবিপদে পড়েছে।
এসব কারণে কচ্ছপের ডিম সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান।
পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণ এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ জানিয়েছেন, প্রায়শ মৃত কচ্ছপ পাওয়া যায়। এসব কচ্ছপের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। সাগরে পুঁতে রাখা মাছ ধরার জালে আটকা পড়লে জেলেরা লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে কিংবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে কচ্ছপকে হত্যা করে সম দ্রে নিক্ষেপ করেন। জোয়ারের পানিতে কচ্ছপগুলো উপকূলে ভেসে এলে কুকুর খেয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন, সাগরে জেলেদের সচেতনতা তৈরি, ডিম দেয়ার স্থান নিরাপদ পরিবেশ তৈরি, সৈকতে কুকুরের বিচরণ রোধ করা জরুরী। না হয় কচ্ছপ রক্ষা করা যাবে না।
নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা এবং এ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা বিধিমালা রয়েছে। এই এলাকার উন্নয়নে যা অনেকাংশে অনুসরণ করা হয় না। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বিপন্ন সামুদ্রিক কচ্ছপ রক্ষায় এ বিধিমালার বাস্তবায়ন খুবই জরুরী।
গত বছর ৩০ মার্চ সুগন্ধা পয়েন্ট সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। এর আগে গত বছর ৮ ফেব্রæয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ সংলগ্ন সৈকতে একই প্রজাতির মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ একই সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল।
এছাড়া গত বছর ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুইদিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।
এ পরিস্থিতিতে সামুদ্রিক বিপন্ন প্রাণী ডলফিন ও পরপইস ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ডলফিন-পরপইসের বাসস্থানের ক্ষতি, জল দূষণ, উপকূলীয় উন্নয়ন, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং এর পরিসরের মধ্যে সামুদ্রিক যানবাহনের বৃদ্ধির কারণে হুমকির সম্মুখীন। আবাসস্থলের অবক্ষয় এবং মাছ ধরার জালে দুর্ঘটনাজনিতভাবে আটকা পড়ে আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তা মারা যেয়ে থাকতে পারে। ফলে এ পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে মাদ্রাসা পড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে;…
জাহাঙ্গীর আলম ছিদ্দিকী : লেখক, কলামিস্ট ও শিক্ষক, দক্ষিণ খুরুশকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।শিক্ষার্থীর নাম :…
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার…
শহীদ উল্লাহ : লাইলা বেগম, যেন এক সংগ্রামি নারীর নাম। স্বামী কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার পুরাতন…
এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া : চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের ঘুষ গ্রহণের…
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশেপাশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান…