কক্সবাজার জেলা

ফুলের সম্রাজ্ঞে তামাকের আগ্রাসন

বিশেষ প্রতিবেদক : চকরিয়ার ফুলের সম্রাজ্ঞে যেন তামাকের আগ্রাসন শুরু হয়েছে। ‘গোলাপ গ্রাম বরইতলী’ নামে পরিচিত এই গ্রামে এখন সময় ফুলের বাগান হতো ২ শত একর জমিতে। কিন্তু বর্তমানে তাতে হচ্ছে ৫০ একরের বেশি জমিতে। করোনাকালিন ফুলের বাজারে নেমেছে ধস। যেখানে কাগজের ফুলের ব্যবহার বেড়েছে। ফলে বর্তমানে ফুলের মুল্যে ধস নেমেছে। বিক্রি করতে না পেরে ফুল নদীতে ফেলে দেয়া হচ্ছে। আবার তামাক চাষ ছেড়ে গোলাপ চাষে আসা চাষিরা জীবন বাঁচাতে পুনরায় ঝুঁকছেন তামাক চাষে।

চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ফুল বাগানের পাশে আলাপ হয় জিয়াউল হক এর সাথে। যিনি গত দেড় যুগ ধরে গোলাপ ও রজনীগন্ধা বাগান করে চালাতেন জীবন। কিন্তু বর্তমানে ফুল বিক্রিতে ক্ষতি হওয়ায় শুরু করেছে তামাক চাষ। জীবন বাঁচাতে আর কোন বিকল্প পথ দেখছেন না তিনি।

জিয়াউল হক জানান, বর্তমানে গোলাপ বাগানের পাশে ৫০ একর তামাক চাষ করছেন তিনি। কিন্তু যেখানে এক বছর আগেও ৩০ একর জুড়ে ছিল গোলাপের বাগান। গোলাপ ফুল বিক্রি না হওয়ায় গত ২ বছর ধরে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে তিনি তামাক চাষ শুরু করেছেন।

তিনি জানান, করোনা মহামারিতে চকরিয়ার ফুল চাষীদের ক্ষতি চরম আকার ধারণ করে। চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক যে ফুল পাইকারি সরবরাহ করা হতো তা বন্ধ হয়ে যায়। এ সুযোগে কাগজের ফুল দখল করে নেয় বাজার। করোনা সংকট কাটলেও ফুলের চাহিদা কমে গেছে ৬০ শতাংশ। একই সঙ্গে মুল্যও কমেছে ব্যাপক।

মোনাফের বাগানে ৭ বছর ধরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করনে নেজাম উদ্দিন। তিনি জানান, রজনীগন্ধা আগে বিক্রি হতো ১৫-১৬ টাকা। বর্তমানে এর মূল্য ৩-৫ টাকা। এতে মালিক ক্ষতি হচ্ছে। বেতনও পাচ্ছে না ভালোভাবে। সংসার পরিচালনায় কষ্ঠ হচ্ছে তার।

মোহাম্মদ শাকের নামের অপর এক শ্রমিক জানান, যে পরিমাণ ফুল উৎপাদন হচ্ছে; তা সব বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে প্রায়শ ফুল নদীতে ভাসিয়ে দিতে হয়।

আলতাফ হোসেন জানান, প্রতিদিন ৪ হাজার মতো ফুল বিক্রি যোগ্য হয়। এসব ফুল বিক্রি করতে না পারলে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ফুলের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

বরইতলী গোলাপবাগান মালিক সমিতির আহ্বায়ক মঈনুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে গেলো কয়েক বছর ধরে ধস নেমেছে ফুলের ব্যবসায়। এক্ষেত্রে কোন সরকারি সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফুল বাগান না করে ক্রমাগত তামাক চাষের দিকে যাচ্ছে চাষী।

তিনি জানান, এখন সময় বরইতলী এলাকায় আড়াই শত একর জমিতে ফুল বাগান করা হতো। বর্তমানে তা ৫০ একরে নেমে এসেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. মো. এখলাছ উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফুল চাষীদের রোগ সংক্রান্ত পরামর্শ দেয়া হয়। এর বাইরে সরকারি সহায়তা কিভাবে করা যায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। ফুল চাহিদা সর্ম্পন্ন এমন লাভজনক করা গেলে তামাকের আগ্রাসন কমানো সম্ভব।

nupa alam

Recent Posts

টেকনাফে বস্তাবন্দি শিশু হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফে মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে শিশুকে বস্তাবন্দি হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহ দুই আসামিকে…

41 mins ago

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কক্সবাজারে শহীদদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও অনুদান প্রদান করেছে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’

নিজস্ব প্রতিবেদক : ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলনে কক্সবাজারে শহীদদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ এবং শহীদদের কবর জিয়ারত…

2 hours ago

কুতুবদিয়ায় বিশ্ব নদী দিবস পালিত

ফয়সাল উদ্দিন রিপন, কুতুবদিয়া : "নদী দূষণ বন্ধ কর, প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ কর"এ স্লোগানকে সামনে…

2 hours ago

টেকনাফে নিখোঁজ মেয়ে শিশুর বস্তিাবন্দি মরদেহ উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফে খেলাধুলা করতে গিয়ে নিখোঁজের নয় ঘন্টা পর এক মেয়ে শিশুর বস্তাবন্দি…

2 hours ago

৩৫ হাজার ইয়াবা সহ পুলিশ কনস্টেবল সহ আটক ২

নিজস্ব প্রতিবেদক : কক্সবাজারে ৩৫ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ কনস্টেবলকে আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা।…

2 hours ago

সেনা কর্মকর্তারা ম্যাজিষ্ট্রেসি ক্ষমতাপ্রাপ্ত : মব জাষ্টিস নিন্দনীয়

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট বিগত ১৮ সেপ্টেম্বরের দেশের প্রায় সকল পত্রিকায় প্রধান সংবাদ-শিরোনাম ছিল ফৌজদারী কার্যবিধির,…

3 hours ago