শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা: সব আসামির সাজা

বাংলা ট্রিবিউন : দীর্ঘ ১৯ বছর পর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ তিন জনকে যাবজ্জীবন (১০ বছরের) কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপর দুজন হলেন ৪ নম্বর পলাতক আসামি মো. আরিফুর রহমান ওরফে রঞ্জু এবং রিপন। এছাড়া পলাতক আসামি যুবদল নেতা আব্দুল কাদের বাচ্চুকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকি ৪৬ জন আসামির ৪ বছর থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) আলোচিত এ মামলায় জেল হাজতে থাকা ৩৪ জন আসামির উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীর।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার এক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সাতক্ষীরার কলারোয়ায় যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পথে ঢাকায় ফেরার পথে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। বোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

এরপর হাইকোর্টে আবেদন করে ২০১৪ সালে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৫ সালে এ ঘটনায় আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। এর মধ্যে হত্যাচেষ্টা মামলায় এক আসামি রকিব ওরফে রাকিবুর রহমানের বয়স ঘটনার সময় ১০ বছর ছিল উল্লেখ করে হাইকোর্টে মামলা বাতিলে আবেদন করা হয়। ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট ওই আবেদন হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানি শেষে ৮ অক্টোবর রুলটি খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করে আসামিপক্ষ।

সবশেষ গত বছরের ২৪ নভেম্বর দায়ের করা মামলা বাতিল চেয়ে এক আসামি আবেদন করলে আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। ফলে বিচারিক আদালতে এ মামলা চলতে আর কোনও বাধা নেই বলে জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনির।

গত ২৭ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে কাঠগড়ায় থাকা ৩৪ জনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. হুমায়ুন কবীর। মামলায় ১৬ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।

সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন আশরাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, শেখ তামিম আজাদ মেরিন, মো. আব্দুর রকিব মোল্যা, মো. আক্তারুল ইসলাম, মো. আব্দুল মজিদ, মো. হাসান আলী, ময়না, মো. আব্দুস সাত্তার, তোফাজ্জেল হোসেন সেন্টু, মো. জহুরুল ইসলাম, গোলাম রসুল, অ্যাড. মো. আব্দুস সাত্তার, আব্দুস সামাদ, মো. আলতাফ হোসেন, শাহাবুদ্দিন, মো. সাহেব আলী, সিরাজুল ইসলাম, রকিব, ট্রলি শহীদুল, মো. মনিরুল ইসলাম, শেখ কামরুল ইসলাম, ইয়াছিন আলী, শেলী, শাহিনুর রহমান, দিদার মোড়ল, সোহাগ হোসেন, মাহাফুজুর মোল্লা, আব্দুল গফফার গাজী, রিঙ্কু, অ্যাড. মো. আব্দুস সামাদ, টাইগার খোকন ওরফে বেড়ে খোকন।

সাজাপ্রাপ্ত পলাতক অপর আসামিরা হলেন, আব্দুল কাদের বাচ্চু, মফিজুল ইসলাম, মো. আলাউদ্দিন, খালেদ মঞ্জুর রোমেল, ইয়াছিন আলী, রবিউল ইসলাম, মাজাহারুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব, সঞ্জু, নাজমুল হোসেন, জাবিদ রায়হান লাকী, কনক, মো. মাহাফুজুর রহমান।

আসামি পক্ষের আইনজীবী শাহানারা পারভিন বকুল বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এই রায়ে সন্তুষ্ট হবো কিভাবে? আমরা উচ্চ আদালতে যাবো। আশাকরি উচ্চ আদালত আমাদের ন্যায়বিচার দেবেন। ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সবাই উৎসাহ দেখিয়েছেন। কেউ এমপি হবেন, কেউ মেয়র হবেন, কেউ চাকরিতে প্রোমোশন নেবেন, এই হচ্ছে মামলার ঘটনা।’

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পরদিন ৩১ জানুয়ারি কোনও পত্রিকায় হাবিবুল ইসলাম হাবিবের ছবি আসেনি, নাম তো আসেইনি। সে যদি ঘটনাস্থলে থাকতো, তাহলে অবশ্যই ছবি আসতো। ছবি এবং নাম কোনোটাই আসেনি। তারমানে এই ঘটনায় তার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও সাজা দেওয়া হয়েছে।

তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির বলেন, ঘটনার দিন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবের পরামর্শে ও নির্দেশে প্রায় চার-পাঁচশ’ নেতাকর্মী ও বিএনপির সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছিল। এই হামলার বিচার শুরু হয়েছিল, আজকে রায়ের মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটলো। সাতক্ষীরার জনগণ কলঙ্কমুক্ত হলো। আজকের রায়ে হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আরিফ এবং রিপন এই তিন জনকে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে। বাচ্চু এবং রঞ্জুকে ৯ বছর করে সাজা দিয়েছেন আদালত। সর্বনিম্ন সাড়ে চার বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। এবং অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কাউকে খালাস দেওয়া হয়নি।

এই রায়ে আপনার খুশি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায়ে সরকার খুব একটা খুশি না। তবে রায়ের বিস্তারিত দেখার পর আমরা চিন্তা করবো রায়ের পর আমাদের কিছু করার আছে কিনা। যদি কিছু করার থাকে, অবশ্যই হাইকোর্টে আমরা আপিল করবো। এই মামলায় সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর পর্যন্ত ছিল, অন্যান্য সেকশনে টোটাল সাজা প্রায় ২৬ পর্যন্ত হতে পারতো। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হয়েছে। উচ্চ আদালতে যাবো কি, যাবো না তা রায়ের কপি না দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা। আলোচনা ও পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। রায়কে স্বাগত জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে শহরে মিছিল বের করা হয়। এতে মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

nupa alam

Recent Posts

টেকনাফ ছাড়াও এবার নতুন করে উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান…

2 days ago

চকরিয়ায় জেলা পরিষদের জমিতে নির্মিত আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ

চকরিয়া প্রতিবেদক: চকরিয়ায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ…

2 days ago

সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটি গঠণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টামর্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার…

2 days ago

সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে কক্সবাজার শহরে এসে সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসির সড়ক অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক : সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে ‘পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধসহ বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের’ দাবিতে কক্সবাজার…

3 days ago

পাহাড়ী আস্তানা থেকে মালয়েশিয়া পাচারকালে শিশুসহ ৩১ জন উদ্ধার, দুই দালাল আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফে ‘বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার’ যুবকের তথ্যে অভিযান চালিয়ে পাহাড়ী এলাকার গোপন…

3 days ago

সাবের মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর পিএস ফিরোজ কক্সবাজারে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ব্যক্তিগত সহকারি ( পিএস…

3 days ago