বিডিনিউজ: চিত্রনায়িকা রোজিনার স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল এফডিসি’র সোনালি সময়গুলো। আর সেসব সোনালি অতীতের কথা গ্লিটজের জন্য তুলে ধরেছেন মো. কামরুজ্জামান মিলু।
চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি)-এর আয় অনেকটাই কমেছে। তাই সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ানো এবং আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ৩ ও ৪ নম্বর শুটিং ফ্লোর। সেখানে তৈরি হবে ১৫ তলা বিএফডিসি কমপ্লেক্স।
এই ফ্লোর জুড়ে রয়েছে শিল্পীদের নানান কাজের স্মৃতি। তারই অংশ হিসেবে চিত্রনায়িকা রোজিনা এই শুটিং ফ্লোর দুটিকে ঘিরে স্মৃতিচারণ করেছেন।
একক নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে রোজিনার সুযোগ আসে এফ কবির পরিচালিত ‘রাজমহল’ সিনেমায়। মুক্তির পর সিনেমাটি হয় সুপারহিট। তবে তার আগে রয়েছে কিছু কথা। যেখানে জড়িয়ে আছে শুটিং ফ্লোর।
চিত্রনায়িকা রোজিনা বলেন, “১৯৭৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে এফডিসিতে যাই। তখন আমি চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করিনি। তবে গর্ভনিরোধক খাবার পিল (মায়া বড়ি)’র মডেল হিসেবে কাজ করেছিলাম। বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করা হত।”
“সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরোজ মামা (প্রয়াত) একজন দক্ষ স্টিল ফটোগ্রাফার ছিলেন। তিনি প্রথম আমাকে এফডিসিতে পরিচালক কামাল আহমেদের শুটিং সেটে নিয়ে যান। তখন একটি সিনেমার শুটিং চলছিল এফডিসির ৩ নম্বর ফ্লোরে। সেটে পরিচালকসহ নায়ক রাজ্জাক ভাই ও শাবানা ম্যাডাম উপস্থিত ছিলেন। শুটিং ব্রেকে পরিচালকের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। কিন্তু আমি গর্ভনিরোধক খাবার পিলের মডেল হিসেবে কাজ করেছি শুনে তিনি রেগে গেলেন এবং তার সহকারী এক পরিচালককে বললেন, ‘না। এ সিনেমায় উনাকে নেওয়া যাবে না।”
“ছবির জন্য নির্ধারণ করা কাবেরি নামের নায়িকার সঙ্গে সহকারী পরিচালককে দ্রুত যোগাযোগ করতে বললেন তিনি। তবে আমি সেই সিনেমায় কাজ না করলেও পরিচালক কালীদাসের ‘জানোয়ার’ ছবিতে কাজ করলাম, ১০ টাকা ছিল আমার প্রথম পারিশ্রমিক।”
“এরপর ‘সাগরভাসা’ নামের একটি সিনেমায় কাজ করার কথা থাকলেও মাঝে এসে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। সুস্থ হওয়ার পর বলধা গার্ডেন শুটিং স্পটে গিয়ে দেখি এ ছবির নায়িকা হিসেবে কাজ করছেন চলচ্চিত্রের আরেক প্রিয় মুখ কবরী। এরই মধ্যে নায়িকা পরিবর্তন হয়েছে এটা বুঝতে আর বাকি রইলো না। তাই স্পটে পরিচালককে কিছু না বলেই চলে আসি।”
এরপর এজে মিন্টুর ‘মিন্টু আমার নাম’ ছবিতে কাজ করার জন্য চুড়ান্ত হন রোজিনা। পরিচালক মহিউদ্দিন তার নামও পরিবর্তন করেন এ সিনেমার জন্য। প্রথমে রেনু থাকলেও তিনি নামটি পরিবর্তন করে রাখেন রোজিনা। তবে সেই সিনেমায় নায়িকা হিসেবে প্রেস কনফারেন্স হওয়ার পরও ফ্লোরে শুটিং হয় নাই রোজিনার।
এ সিনেমায় কাজ না করতে পেরে অনেকটা ভেঙে পড়েন তিনি। তবে মনে মনে জিদ করেন যে, কাজ করলে একক নায়িকা হিসেবে কাজ করবেন।
এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এফ.কবির পরিচালিত এবং মাসুদ কথাচিত্রের ব্যানারে ‘রাজমহল’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একক নায়িকা হিসেবে পর্দায় ফিরেন রোজিনা।
১৯৭৮ সালে ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রোজিনাকে। একের পর এক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছেন। শাবানা, ববিতা, সুচরিতার পাশাপাশি তিনিও হয়ে ওঠেন একজন সুপারহিট এবং দামী তারকা।
রোজিনা বলেন, “রাজমহল’ সিনেমার শুটিংয়ে তালোয়ার দিয়ে মারামারির দৃশ্য ছিল আমার। ওই সিনেমায় নায়ক জসিম ছিলেন ফাইটিং ডিরেক্টর। ফাইট শিখতে হয়েছিল আমাকে। সেটাও হয়েছিল চার নম্বর ফ্লোরে। একই ফ্লোরে একটি গানের শুটিংও করেছিলাম। তাই বলা যায় চার নম্বর ফ্লোরে মহড়া ও শুটিং একসঙ্গে করেছিলাম।”
স্মৃতির পাতা হাতড়ে এই নায়িকা বলতে থাকেন, “রাত জেগে কাজ করতে হয়েছিল। সবই আজ মনে পড়ছে। কত যে স্মৃতি। ঘরবাড়ি ছিল আমাদের এই শুটিং ফ্লোরগুলো।”
‘হিসাব চাই’, ‘জীবনধারা’, ‘মানসী’, ‘দোলনা’, ‘দিনকাল’, ‘তুফানমেইল’, ‘রাজিয়া সুলতানা’, ‘রাজকন্যা, ‘মিস ললিতা’, ‘ডিসকো বাইদানী’সহ অনেক সিনেমার শুটিং ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোরে করেছেন রোজিনা। গ্রামীণ, শহুরে নারীর চরিত্র কিংবা সামাজিক অ্যাকশন, সব ধরনের ছবিতেই তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করে দর্শক-হৃদয় জয় করেন।
আমজাদ হোসেনের ‘কসাই’ আর মতিন রহমানের পরিচালনায়, রোজিনা ফিল্মসের ব্যানারে ‘জীবন ধারা’ ছবিতে অভিনয় করে দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন রোজিনা।
১৯৮৬ সালে পাকিস্তানে ‘হাম তো হায় জামানা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পাকিস্তানের ‘নিগার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। ভারতের জনপ্রিয় নায়ক মিঠুন চক্রবর্তী, পাকিস্তানের নায়ক নাদিমের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন রোজিনা। অভিনয়ের জন্য ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশের ১০টিরও বেশি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে ২৫৫টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে সফল এই নায়িকার।
রোজিনা বলেন, “সবশেষ ২০০৫ সালে ‘রাক্ষুসী’ সিনেমায় নায়ক ফেরদৌসের বিপরীতে কাজ করা হয়। আর সেটারও শুটিং হয় ৪ নম্বর ফ্লোরে। আর এরপর বাংলাভিশনের একটি ঈদের অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে কাজ করেছিলাম এই চার নম্বর ফ্লোরে। তাই ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোরে স্মৃতি জমা হয়ে আছে অনেক।”
তিনি আরও বলেন, “তিন নম্বর ফ্লোরের ভেতর একটি রুমে তো কাজের ফাঁকে বিশ্রাম করতেন নায়করাজ রাজ্জাক ভাই। ওনার আলাদা একটা রুমই ছিল। সবই এখন স্মৃতি। আমার মনে হয় নতুন ভবন করলেও মিউজিয়াম আকারে রাখা যেত ফ্লোরগুলো। কারণ পরবর্তী প্রজন্ম এই শুটিং ফ্লোরগুলো সম্পর্কে তাহলে অনেক কিছু জানতে পারতো।”
“খুব মিস করছি এই শুটিং ফ্লোরগুলোকে। হয়ত আমার মত চলচ্চিত্রের সকল শিল্পী ও টেকনিশয়ানরা মিস করবেন এফডিসির ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোর।”
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে মাদ্রাসা পড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে;…
জাহাঙ্গীর আলম ছিদ্দিকী : লেখক, কলামিস্ট ও শিক্ষক, দক্ষিণ খুরুশকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।শিক্ষার্থীর নাম :…
নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রবিবার…
শহীদ উল্লাহ : লাইলা বেগম, যেন এক সংগ্রামি নারীর নাম। স্বামী কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার পুরাতন…
এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া : চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলামের ঘুষ গ্রহণের…
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশেপাশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান…