বিডিনিউজ: দিনের খেলা শেষে ড্রেসিং রুমে ফিরতে গিয়ে বড় বিপাকেই পড়লেন ডন ব্র্যাডম্যান। ফিরবেন কিভাবে? হেডিংলির গ্যালারির হাজারো দর্শক যে জড়ো হয়ে গেছেন তাকে অভিনন্দন জানাতে! ক্রিকেটের বাইবেল খ্যাত ‘উইজডেন’-এ পরে লেখা হয়েছিল, “প্যাভিলিয়নে ফেরার সময় যে অভ্যর্থনা ব্র্যাডম্যান পেয়েছিলেন, এর চেয়ে ভালো কিছু কেউ কখনও পেতে পারে না।” অমন উন্মাদনা তো হবেই, ব্র্যাডম্যান যে ফিরছিলেন ২২ গজে নতুন ইতিহাস রচনা করে, এক দিনেই ট্রিপল সেঞ্চুরি!
১৯৩০ সালের ১১ জুলাই, অ্যাশেজের হেডিংলি টেস্টের ছিল প্রথম দিন। ব্র্যাডম্যান রচনা করেছিলেন এক দিনেই তিনশ রানের অভাবনীয় আখ্যান। তার সেই অবিস্মরণীয় কীর্তির পূর্ণ হলো ৯০ বছর।
ব্র্যাডম্যানের বয়স তখন মোটে ২১। সময়ের পরিক্রমায় পরে গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড। নিজেকে তুলে নিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি একরকম অবিসংবাদিত। তার অনেক রেকর্ড বহাল তবিয়তে টিকে আছে এখনও। ধারনা করা হয়, কিছু রেকর্ড ভাঙবে না কখনোই। কয়েকটি রেকর্ড বিস্ময় জাগায় বর্তমান বাস্তবতায়ও। এই রেকর্ডটি যেমন, টি-টোয়েন্টি-ওয়ানডের ধুম-ধাড়াক্কা ক্রিকেটের এই যুগেও কোনো ব্যাটসম্যান এক দিনে তিনশ করতে পারেননি এখনও। ব্র্যাডম্যানের ৯০ বছর আগের কীর্তির বিশালত্ব ফুটে ওঠে এতেই।
ব্যাটিং উইকেটে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক বিল উডফুল টস জিতে বেছে নেন ব্যাটিং। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে মরিস টেটের বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার আর্চি জ্যাকসন। উইকেটে গেলেন ব্র্যাডম্যান। শুরু হলো ইতিহাসের পথে তার হাঁটা, আর ইংলিশ বোলারদের যন্ত্রণা। দলের রান যখন ১২৭, ব্র্যাডম্যানের একারই তখন ১০২!
লাঞ্চে গেলেন তিনি ১০৫ রান নিয়ে। টেস্টের প্রথম দিনে লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরি তার আগে ছিল মাত্র দুটি, পরেও এখনও পর্যন্ত হয়েছে আর কেবল তিনটি। ১৯০২ সালে করেছিলেন ভিক্টর ট্রাম্পার, ১৯২৬ সালে চার্লস ম্যাকার্টনি। ব্র্যাডম্যানের পর ১৯৭৬ সালে মাজিদ খান, ২০১৭ সালে ডেভিড ওয়ার্নার, পরের বছর শিখর ধাওয়ান।
লাঞ্চের আগে সেঞ্চুরির পাশাপাশি ম্যাকার্টনির আরেকটি রেকর্ডেও ততক্ষণে ভাগ বসিয়ে ফেলেছেন ব্র্যাডম্যান। ওই সিরিজের তিন টেস্টে সেটি ছিল ব্র্যাডম্যানের তৃতীয় সেঞ্চুরি। এক সিরিজে টানা তিন টেস্টে সেঞ্চুরি আগে ছিল কেবল ওই ম্যাকার্টনিরই।
দ্বিতীয় সেশনে সূর্যের তেজ বাড়তে থাকল, পাল্লা দিয়ে বাড়ল যেন ব্র্যাডম্যানের ব্যাটের ধার। মাঝের সেশনে করলেন আরও ১১৫ রান। চা-বিরতিতে গেলেন ২২০ রান নিয়ে।
যথারীতি আরও রেকর্ডে তখন নাম উঠে গেছে। ২১৪ মিনিটে স্পর্শ করেছিলেন ডাবল সেঞ্চুরি। তখন তো বটেই, সময়ের হিসেবে তা এখনও দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি!
এই টেস্টের আগের টেস্টেই লর্ডসে করেছিলেন ২৫৪। টানা দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি তখন ছিল শুধু আরেক গ্রেট, ও সর্বকালের সেরাদের একজন, ওয়ালি হ্যামন্ডের।
শেষ সেশনে তুলনামুলক ভাবে বেশ শান্ত ছিল ব্র্যাডম্যানের ব্যাট। করলেন ‘মাত্র’ ৮৯ রান। ইতিহাসে নাম লেখা হয়ে গেল তাতেই। এক দিনেই ট্রিপল সেঞ্চুরি। তখন ছিল ‘প্রথম।’ ৯০ বছর পরও হয়ে আছে ‘একমাত্র।’
একদম নিখুঁত অবশ্য ছিল না ইনিংসটি। ইংলিশ পেসার হ্যারল্ড লারউড অনেক বছর পরে তার আত্মজীবনীতে দাবি করেছিলেন, শূন্য রানেই ব্র্যাডম্যানকে কট বিহাইন্ড করেছিলেন তিনি। আম্পায়ার আউট দেননি। ব্যাটসম্যানের চারপাশে সবাই নাকি একসঙ্গে আবেদন করেছিলেন। এমনকি স্যার জ্যাক হবসও আবেদন করেছিলেন, যাকে মনে করা হতো ক্রিকেটের সত্যিকারের স্পিরিটের প্রতীক। তবে লারউডের দাবির পক্ষে স্বাক্ষ্য খুব মেলেনি। ব্র্যাডম্যান রানের খাতা খেলার আগে লারউড আক্রমণেই আসেননি বলে জানিয়েছিলেন মাঠে উপস্থিত সাংবাদিকরা। আর হবস ফিল্ডিং করছিলেন কাভার বা এক্সট্রা কাভার বাউন্ডারিতে।
ব্র্যাডম্যান একটু ভুল শট খেলেছিলেন ১৪১ ও ২০২ রানে। বল হাওয়ায় ভাসিয়ে পাঠিয়েছিলেন মিড অনের দিকে। ফিল্ডারের কাছে যায়নি বল। সত্যিকারের সুযোগ দিয়েছিলেন ২৭৩ রানে। জর্জ গিয়ারির বলে কঠিন সুযোগটি গ্লাভসে জমাতে পারেননি কিপার জর্জ ডাকওয়ার্থ।
আর কোনো ভুল করেননি। দিনের খেলা শেষে যখন ফিরছেন, নামের পাশে অপরাজিত ৩০৯। দর্শকের ভীড় ঠেলে ড্রেসিং রুমে ফিরতে সহায়তা লেগেছিল পুলিশের।
অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়ার পরও ব্র্যাডম্যান ছিলেন স্বভাবসুলভ শান্ত। দিন শেষের প্রতিক্রিয়াও ছিল খুব সাধারণ, “আমার পা দুটি যদিও খুব ক্লান্ত, তবে দিনের খেলা শেষ না হলে আমি আরও চালিয়ে যেতে পারতাম। রেকর্ড ভেঙে ভালো লাগছে, তবে বেশি খুশি যে অস্ট্রেলিয়া ভালো অবস্থানে আছে।”
পরদিন কত দূর যাবেন ব্র্যাডম্যান, সেটি নিয়ে ছিল অনেক জল্পনা। ইংল্যান্ডের অ্যান্ডি স্যান্ডহামের ৩২৫ ছাড়িয়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেললেন। তবে থামলেন একটু পরই। মরিস টেটের বলে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে।
৩৮৩ মিনিটে করেছিলেন ৩৩৪ রান। ইনিংসে ছিল ৪৬টি বাউন্ডারি, ৬টি তিন, ২৬টি ডাবলস ও ৮০টি সিঙ্গেলস। কোনো ছক্কা নেই, তাতে বিস্ময়েরও কিছু নেই। হাওয়ায় ভাসিয়ে শট খেলা তার কাছে ছিল একরকম পাপের সামিল। ক্যারিয়ারজুড়ে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় রান করেছেন যিনি, তার গোটা টেস্ট ক্যারিয়ারে ছক্কা কেবল ৬টি।
ওই ইনিংসটির পর ইংল্যান্ড প্রবাসী এক অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায়ী ব্র্যাডম্যানকে উপহার দিয়েছিলেন ১ হাজার পাউন্ড। ওই সময় অঙ্কটি কত বড়, তা বোঝা যায় আরেকটি তথ্যে। ৪ মাসের সফরে অস্ট্রেলিয়ার অন্য সব ক্রিকেটারদের প্রাপ্তি ছিল সবমিলিয়ে ৬০০ পাউন্ড করে।
ওই ইনিংসটির পথেই ব্র্যাডম্যান স্পর্শ করেছিলেন ওই মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২ হাজার রান। ছুঁয়েছিলেন টেস্টে হাজার রানের মাইলফলকও, মাত্র ১৩ ইনিংসে। হার্বার্ট সাটক্লিফের রেকর্ড ছুঁতে পারেননি স্রেফ ১ ইনিংসের জন্য। সেটি অবশ্য পুষিয়ে দিয়েছেন পরে। ২ হাজার থেকে ৬ হাজার, সবগুলো মাইলফলকে তিনিই দ্রুততম। সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ওই সিরিজে ৫ টেস্টে ব্র্যাডম্যান করেছিলেন ৯৭৪ রান! আরেকটি রেকর্ড, যেটি আর কখনও ভাঙবে বলে মনে হয় না।
ব্র্যাডম্যানের পর একদিনে তিনশ রানের সবচেয়ে কাছাকাছি গিয়েছিলেন ওয়ালি হ্যামন্ড। ১৯৩৩ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অকল্যান্ড টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু করেছিলেন ৪১ রানে। দারুণ ব্যাটিংয়ে ব্র্যাডম্যানের ৩৩৪ রানের বিশ্বরেকর্ড ছাড়িয়ে করেন ৩৩৬।
রেকর্ডটি হতেই “ইয়েস” বলে চিৎকার করে ওঠেন হ্যামন্ড। উদযাপনে সময় যায় কিছু। রেকর্ডটি আসলেই হয়েছে কিনা, নিশ্চিত হতে আবার রান গুনতে থাকেন স্কোরার। তাতে সময় কেটে যায় আরও। এর আগে ২৯৭ রানে ভেঙে গিয়েছিল তার ব্যাট। সতীর্থ টমি মিচেলের ব্যাট নিয়ে আবার শুরু করেন। এতেও সময় যায় কিছু। সব মিলিয়ে বেশ দেরি।
একদিনেই করে ফেলেছেন ২৯৫, আরেকটু হলেই স্পর্শ করতে পারবেন ব্র্যাডম্যানের কীর্তি। কিন্তু দিনের শেষ ভাগে নিউ জিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে নামাতে ইনিংস ঘোষণা করে দেন অধিনায়ক। খুব কাছে গিয়ে এবং অপরাজিত থেকেও তাই একদিন তিনশ হয়নি হ্যামন্ডের।
অনেক বছর পরে একদিনে তিনশ করতে পারতেন হয়ত বিরেন্দর শেবাগও। ২০০৯ সালে মুম্বাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুম্বাই টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে পেরেছিলেন ৭৯ ওভার। শেবাগ অপরাজিত ছিলেন ২৩৯ বলে ২৮৪ রানে। পুরো ৯০ ওভার পেলে হয়ত রেকর্ড করেই ফেলতেন।
তবে রেকর্ড তো আর ‘যদি-তবে কিন্তু’ দিয়ে হয় না। রেকর্ড বই বলছে, একদিনে তিনশর একমাত্র কৃতিত্ব ব্র্যাডম্যানের।
আরেকবার একদিনে ২৭১ করেছিলেন ব্র্যাডম্যান, আরও একবার একদিনে ২৪৪। সব মিলিয়ে এক দিনে দুইশ ৬ বার ছুঁয়েছেন ব্র্যাডম্যান, শেবাগ ৩ বার।
ব্র্যাডম্যানের ব্যাটসম্যানশীপ নিয়ে অনেক গল্পগাঁথা তো আছেই। পাশাপাশি আশ্চর্য এসব পরিসংখ্যান, রেকর্ড বইয়ে চোখধাঁধানো সব সংখ্যার আঁকিবুকি, এগুলো উচ্চস্বরে জানান দেয়, তিনিই সর্বকালের সেরা।
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান…
চকরিয়া প্রতিবেদক: চকরিয়ায় জেলা পরিষদের মালিকানাধীন জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস উচ্ছেদ…
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টামর্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার…
নিজস্ব প্রতিবেদক : সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে ‘পর্যটক সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধসহ বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের’ দাবিতে কক্সবাজার…
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফে ‘বেড়াতে গিয়ে অপহরণের শিকার’ যুবকের তথ্যে অভিযান চালিয়ে পাহাড়ী এলাকার গোপন…
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ব্যক্তিগত সহকারি ( পিএস…